ঢাকা, রবিবার, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ জুন ২০২৪, ২৪ জিলকদ ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ফুলবাড়ি ও দিঘীপাড়া কয়লা খনি বিসিএমসিএলকে দেওয়া হচ্ছে!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১২
ফুলবাড়ি ও দিঘীপাড়া কয়লা খনি বিসিএমসিএলকে দেওয়া হচ্ছে!

বড়পুকুরিয়া থেকে ফিরে: দিঘীপাড়া ও ফুলবাড়ি কয়লা খনির উন্নয়ন করতে চায় সরকারি কোম্পানি বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড(বিসিএমসিএল)। সরকারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিসিএমসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান।



বিসিএমসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলানিউজকে জানান, “তারা গত সেপ্টেম্বর মাসে দিঘীপাড়া ও ফুলবাড়ি কয়লা খনি উত্তোলনের জন্য লিজ চেয়ে আবেদন করেছে। তাদের এ প্রস্তাবের বিষয়ে মৌখিকভাবে আশ্বাস পাওয়া গেছে। ”

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কয়লা খনি বড়পুকুরিয়ার সফল পরিচালনার পর আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে বিসিএমসিএলকে। আর সেই আত্মবিশ্বাস ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায় তারা।

বিসিএমসিএল’র ম্যানেজার মাইনিং প্রকৌশলী খান মো: জাফর সাদেক বাংলানিউজকে জানান, কয়ল খনির জন্য ৪টি বিষয়কে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। এগুলো হচ্ছে উচ্চ তাপমাত্রা, পানির উচ্চ তাপমাত্রা, খনিতে পানির প্রবাহ, রূফ ফল্ট (ছাদে ফাটল), আদ্রতা (হাই হিউমেডিটি) ও কয়লার স্বতস্ফুর্ত প্রজ্বলন ক্ষমতা।

তিনি জানান , “৪টি ঝূঁকির মধ্যে সবগুলোই বড়ুপুকুরিয়াতে বিদ্যমান। বিশ্বের আর কোন খনিতে ৪টি ঝূঁকি একই সঙ্গে কোন খনিতে নেই। সে কারণে বড়পুকুরিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝূঁকিপূর্ণ কয়লা খনি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ”

তিনি জানান, “স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৭ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি অভ্যন্তরে তাপমাত্রা রয়েছে প্রায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পানির উষ্ণতা রয়েছে প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ”

খনিতে বাতাসের স্বাভাবিক আদ্রতা ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা থাকলেও এই খনিতে রয়েছে ১০০ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘণ্টায় পানি প্রবাহ রয়েছে ১হাজার ৮০০ মিটার কিউবিক। সেই সঙ্গে রয়েছে রূফ ফল্ট। এর পরেও বিসিএমসিএল সফল বলে দাবি করেছেন প্রকৌশলী খান মো: জাফর সাদেক।

বিসিএমসিএল এর সফলতা খনি বিশেষজ্ঞদের কাছেও বিস্ময়কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ঝূঁকিপূর্ণ এই কোম্পানিটির দূর্ঘটনার হারও অনেক কম। শুরুতে কিছুটা সমস্যা থাকলেও এখন গত বছর ও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত কোন রকম দূর্ঘটনা ছাড়াই সফলতার সঙ্গে পথ পাড়ি দিয়েছে।

২০০২ সালে উৎপাদনে যাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৮জন শ্রমিক দূর্ঘটনার শিকার হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ঝূঁকিপূর্ণ এই কোম্পানিটি দুর্ঘটনার সংখ্যা খুবই কম। সব কিছু ছাড়িয়ে খনিটি এখন রয়েছে মুনাফায়।

১৩১.৯৭ মিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ সুদসহ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছে বিসিএমসিএল। কোম্পানিটি গত বছরে ৩.৪ বিলিয়ন টাকা মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে।
 
প্রকৌশলী খান মো: জাফর সাদেক বলেন, ভাল ছাত্রকে ভর্তি করে ভাল রেজাল্ট করাকে ভাল শিক্ষকতা বলা যায় না। খারাপ ছাত্রকে পড়িয়ে ভাল তৈরি করাকে ভাল শিক্ষকতা বলতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা (বিসিএমসিএল) নিজেদের অভিজ্ঞ দাবি করতেই পারি।

আর এ কারণে নিজেদের দক্ষ জনশক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য দিঘীপাড়া ও ফুলবাড়ি কয়লা খনি উত্তোলনে নিজেরা সম্পৃত্ত হতে চায় দাবি করেন প্রকৌশলী খান মো: জাফর সাদেক।

ফুলবাড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সরকার বিসিএমসিএল এর প্রস্তাব দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারে সরকার। তাদের মতে এশিয়া এনার্জির বিষয়ে স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। তাদেরকে দিয়ে কাজ করাতে গেলে বিক্ষোভ দেখা দিতে পারে। সে দিক বিবেচনায় বিসিএমসিএল’র প্রস্তাব হতে পারে গ্রহণযোগ্য।

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির ফুলবাড়ি এলাকার সুমন নামের এক কর্মী বাংলানউজকে জানিয়েছে, বিসিএমসিএল’কে দিয়ে কাজ করালে জাতীয় কমিটির খুব বেশি আপত্তি থাকবে না।

তিনি জানান, জাতীয় কমিটির প্রধান কয়েকটি দাবি রয়েছে এরমধ্যে হচ্ছে বিদেশি না, উন্মুক্ত না। বিসিএমসিএলকে দেওয়া হলে একটি না মেনে নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য ফুলবাড়ি কয়লা খনি অনুসন্ধানের দায়িত্ব পায় অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি ব্রকেন হিল প্রোপার্টি (বিএইচবি)। তাদের সঙ্গে সমীক্ষা চুক্তি হয় ১৯৯৪ সালের ২০ আগস্ট। বিএইচপি সম্ভাব্যতা যাচাই লাইসেন্স পাওয়ার পর ১৯৯৭ সালে কয়লা খনিটি আবিস্কার করে।

এরপর ১৯৯৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান স্বত্ব এশিয়া এনার্জির কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ ছেড়ে যায়। নিয়মানুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রমের পর তৃতীয় পক্ষ নিয়ে মূল্যায়ন করার কথা। তারপর সম্পাদিত হবে চূড়ান্ত উন্নয়ন চুক্তি। কিন্তু আজ পর্যন্ত এশিয়া এনার্জির দেওয়া অনুসন্ধান রিপোর্ট তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়নি।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণলয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত এই চিঠি  দিনাজপুরে পাঠানো হয়। এতে বলা হয় এশিয়া এনার্জি  আগামী ২ বছর জরিপ কাজ চালাবে। তাদের জরিপকাজ নির্বিঘ্ন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে সার্বিক সহায়তা দিতে বলা হয়। এতে ফুঁসে উঠে স্থানীয়রা। দুইদিন হরতাল পালন করলে সরকার পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়।

অন্যদিকে দিঘীপাড়া কয়লাখনিটি আবিস্কার করে বাংলাদেশ ভূতাত্তিক জরিপ অধিদপ্তর। খনিটি  উন্নয়নের জন্য ২০০৬ সালে পেট্রোবাংলাকে লিজ দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারেনি পেট্রোবাংলা। হোসাফ গ্রুপ খনিটি পেতে জোর তদবির চালাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১২
ইএস./সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর- eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।