ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ছত্তিশগড় থেকে সেরাজুল ইসলাম সিরাজ

এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নগাথা সিপাত বিদ্যুৎকেন্দ্র

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৪
এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নগাথা সিপাত বিদ্যুৎকেন্দ্র ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ছত্তিশগড় (ভারত)থেকে: ভারতের সিপাত ২৯৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সফলতা ও উপকারিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সরেজমিনে পরিদর্শনে বিশাল আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে কোনো ধরনের ঘাটতি নজরে পড়েনি।

দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নগাথা রচনা করা হয়েছে।

লক্ষ্যমাত্রা ২৯৮০ মেগাওয়াট হলেও প্রতিনিয়ত এর চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

ছত্তিশগড়ে স্থাপিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কম্পাউন্ড এবং কম্পাউন্ডঘেঁষা এলাকা ঘন সবুজে ঘেরা। চারদিকের মনোরম পরিবেশ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমালোচকদের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। বলতে চাইছে, তোমরা যে সমালোচনা করো, এর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গেছে।

ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানির (এনটিপিসি) আমন্ত্রণে বাংলাদেশের ৩২ জন সাংবাদিকের একটি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে সেদেশে যাই রোববার। ছত্তিশগড়ের সিপাত ২৯৮০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ছাড়াও এ সফরের অংশ হিসেবে আরও রয়েছে মহারাষ্ট্রের নাগপুর তিরোধা সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট পরিদর্শন। সোমবার সিপাত বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবারের গন্তব্য ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে জটিল বিষয় হচ্ছে, কয়লা ও অ্যাশ (ছাই) ব্যবস্থাপনা। দু’টি বিষয়ই এখানে যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

৪ হাজার ৩৫১ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত সিপাত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। পশ্চিম পাশ দিয়ে একটি আঞ্চলিক সড়ক পশ্চিম দিনাজপুর (দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার) গিয়ে মিশেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে আঞ্চলিক সড়কটির দূরত্ব বড়জোর এক কিংবা দুই কিলোমিটার।

ওই রাস্তাটি থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বিশেষ সড়ক রয়েছে, যা শুধু সংশ্লিষ্টদের ব্যবহারের জন্য।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আশেপাশের আকাশে ধোঁয়াশার মতো কিছু দেখে নতুন কেউ এটিকে পরিবেশ দূষণ বলে বিভ্রান্ত হতে পারেন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ভেতরে ওই ধোঁয়াশার উৎসের খুব কাছে পৌঁছে বোঝা যায়, এগুলো হচ্ছে কুলিং সিস্টেম থেকে নির্গত বাষ্প। পাওয়ার হাউস থেকে বেরিয়ে আসা গরম পানি যেখানে এসে পড়ছে।

এখানে পানিকে ঠাণ্ডা ও রিসাইকেল করে আবার ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো অনেকটা দেখতে বিশাল সাইজের কলসের মতো। ওপর দিয়ে কিছু বাষ্প উড়ছে। একই সঙ্গে পাশাপাশি অনেক বাষ্প উড়তে থাকায় দূর থেকে ধোঁয়ার মতো মনে হবে যে কারোরই।

সিপাত বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে বিপুল পরিমাণ কয়লা পোড়ানো হচ্ছে। আর দৈনিক ৮৫ হাজার টন অ্যাশ উৎপন্ন হচ্ছে। তবে দক্ষ ব্যবস্থাপনায় তা পরিবেশের কোনো ক্ষতির কারণ হচ্ছে না। নিখুঁত কয়লা ও অ্যাশ ব্যবস্থাপনার কারণে রি-সাইক্লিং হয়ে যাচ্ছে নিমেষেই। এখানে ১১৬টি হপারের মাধ্যমে অ্যাশ ইয়ার্ডে চলে যাচ্ছে। সেখান থেকে ৩০ শতাংশ সিমেন্ট শিল্পে আর ৭০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে মাটি ভরাটের কাজে এ অ্যাশ।

পাওয়ার প্ল্যান্টের উত্তরে কোল ইয়ার্ড। তার থেকে অল্প দূরে কয়লা রিসিভ করা হচ্ছে। ট্রেনে আসছে কয়লা। বিশেষ ধরনের বগির নিচের সুইচ খুলে দেওয়া হচ্ছে আর সব কয়লা সঙ্গে সঙ্গে কনভেয়ার বেল্টে গিয়ে পড়ছে।

কনভেয়ার বেল্ট এসব কয়লা সরাসরি পৌঁছে দিচ্ছে মিলে। সেখানে ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের কয়লাগুলোকে কাটিং করে ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার করা রূপ দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে অপর একটি কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে চুল্লিতে। আবার অতিরিক্ত হলে কোল ইয়ার্ডে জমা করছে, আপৎকালীন ব্যবহারের জন্য।

কয়লা রিসিভিং পয়েন্টে জনাদশেক শ্রমিক কাজ করছিলেন। যারা শুধু রেলের বগির সুইচ অন-অফ করছেন। এছাড়া সবটাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে হচ্ছে বলে শ্রমিকরা জানান।

সব মিলিয়ে ভারত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমালোচনাকারীদের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেখিয়ে বলতে পারে, এখানে কোনো সমস্যা নেই। তাহলে কেন তুমি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করছো? তোমার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।

ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি এনটিপিসি বর্তমানে ৪৩ হাজার ১২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে কয়লা দিয়ে। দেশটি সাশ্রয়ী কয়লার ব্যবহার বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লা দিয়ে ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন। সিপাত বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ পড়ছে ২.৪০ রুপি।

রোববার সন্ধ্যায় কলকাতা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার পর হাওড়া রেলস্টেশনে যাই। সেখান থেকে ট্রেনের একটি বিশেষ বগিতে চড়ে সোমবার সকালে বিলাসপুর রেলস্টেশনে নামা। স্টেশন থেকে সিপাত ২৯৮০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যাওয়া বাসে।  

এনটিপিসি’র ম্যানেজার (এইচআর) জিসি শংকর বাংলানিউজকে জানান, বাংলাদেশি সাংবাদিকদের চলাচলের জন্য বিশেষ বগিটি ৩ লাখ ৮১ হাজার রুপি দিয়ে ভাড়া করা হয়েছে। কলকাতা থেকেই ট্রেনে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বগিটি। আবার মহারাষ্ট্রের কানপুরে যাওয়ার জন্যেও সেই একই বগিটিই রয়েছে। এজন্য বগিটি থেকে সোমবার সকালে বিলাসপুর রেলস্টেশনে নামার পর পরিস্কার করে রেখে দেওয়া হয়। রাতে বগিটি নাগপুর এক্সপ্রেসের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। নাগপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমরা তাই সবাই তাই বগিটির আগের সিটেই উঠতে পেরেছি।

নাগপুরে নামিয়ে দিয়ে বগিটি সেখানেও অপেক্ষায় থাকবে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কলকাতায় পৌঁছে দিয়ে তার নিজের গন্তব্যে চলে যাবে। এর আগে এ বগিতে অন্যদের ওঠার কোনো সুযোগ নেই।

এটাই ভারতীয় রেলের নিয়ম। যে কেউ চাইলে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া পরিশোধ করে বগি রিজার্ভ নিতে পারেন। এজন্য বিশেষ বগি নিয়মিত ইঞ্জিনে যুক্ত হয়। সাধারণ যাত্রীদের কোনো ভোগান্তির সুযোগ নেই।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে পাঁচটায় মহারাষ্ট্রের নাগপুরে পৌঁছে ট্রেনটি। রেলস্টেশন থেকে সোজা রেডিসন ব্লু হোটেলে। পরবর্তী গন্তব্য তিরোধা সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট।

গোটা যাত্রাপথে বাংলাদেশি ৩২ সাংবাদিকের সঙ্গে রয়েছেন এনটিপিসি’র জিএম (বিজনেস উন্নয়ন) হরকিরাত সিং ধিংকরা এবং কলকাতা অফিসের সুশান্ত কে আর দাস। তারা এ টিমের পথপ্রদশর্ক হিসেবে যাত্রাসঙ্গী হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময় : ১১৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।