ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

পাঁচস্তরের নিরাপত্তায় হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৪
পাঁচস্তরের নিরাপত্তায় হবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছবি : রেহানা / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সব ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
 
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স ভবনে (আইইবি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ডিভিশন আয়োজিত ‘এনার্জি সিকিউরিটি ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড দ্যা রুল অব নিউক্লিয়ার পাওয়ার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান তিনি।


 
ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে জাপানের ফুকুশিমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হবে। সেখানে রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ভিভিইআর (পাঁচস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা) Vodo-Vodyanoi Energetichesky Reaktor অথবা Water-Water Power Reactor ব্যবহার করা হবে।
 
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ তৈরির দিক থেকে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ৩১ তম দেশ।
 
রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশ ও জনবসতির কোনো ধরণের খারাপ প্রভাব পড়বে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পে কি ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে জনগণকে জানানো হবে। এ লক্ষ্যে ওই প্রকল্পের আশেপাশে এবং রাজধানীতে তথ্যকেন্দ্র খোলা হবে। ’
 
এ সময় পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে দেশে নিজস্ব উদ্যোগে দক্ষ জনবল ও বিজ্ঞানী তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
 
বাংলাদেশ অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশনের সদস্য প্রকোশলী এম আলী জুলকারনাইন বলেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৫০ বছর ধরে দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখছে। সম্প্রতি দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে রূপপুরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবকাঠামোগত কাজ শুরু হয়েছে।

২০১৬ সালের মধ্যে মূল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
 
ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রকোশলী এম আলী জুলকারনাইন বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে তৃতীয় প্রজন্ম নিরাপত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। এ প্রযুক্তির নিরাপত্তা ব্যবস্থা হবে পাঁচস্তর বিশিষ্ট। সম্প্রতি প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতে এ প্রযুক্তির নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রেও তৃতীয় প্রজন্মের নিরাপত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ’
 
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শীতলীকরণ ব্যবস্থা। পদ্মায় পানি প্রবাহ এক কিউবিক মিটার থাকলেও তা দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের শীতলীকরণ ব্যবস্থা চালু রাখা যাবে বলেও জানান তিনি।
 
এছাড়াও চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে বর্জ্য ফেরৎ নেবে বলে জানান বাংলাদেশ অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশনের এ সদস্য প্রকোশলী।
 
তিনি আরো বলেন, জাপানের ফুকুশিমায় যেখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩০  কিলোমিটার থেকে জনবসতি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেখানে আমাদের দেশে মাত্র ৩ কিলোমিটারের মধ্যে জনবসতি সরিয়ে ফেললেই চলবে।
 
বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিস্ফোরণ দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রকোশলী এম আলী জুলকারনাইন আরো বলেন, ‘আগুনে হাত দিলে হাত পুড়ে যায়, তাই বলে কি ঘরের চুলা আমরা বন্ধ রাখবো? আমি মনে করি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। ’
 
সেমিনারে মূল প্রতিবেদন উত্থাপন করেন, পাওয়ার অ্যান্ড অ্যানার্জি সোসাইটির সহ-সভাপতি প্রকোশলী অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান।
 
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে বর্তমানের চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন চারগুণ বাড়াতে হবে। ফলে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প নেই। ’
 
আইইবির চেয়ারম্যান  প্রকোশলী অধ্যাপক  ড. আব্দুর রশিদ সরকারের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, সভাপতি প্রকোশলী অধ্যাপক ড. এম. শামীম জেড বসুনিয়া, সচিব প্রকোশলী নিয়াজ উদ্দীন ভুঁইয়া প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।