প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিক যেখানটায় দাঁড়িয়ে পরমাণু যুগের মাইলফলক উন্মোচন করেছিলেন, সেখানে স্থাপন করা হয়েছে সার্ভেবেজড অফিস। উদ্বোধনের সময় ছিল একটি মাত্র ছোট্ট অফিস কক্ষ।
এর পূর্বদিকে যেখানে বিশাল নিচু মাঠ ছিল সেখানে স্থাপন করা হয়েছে পাইওনিয়ার বেজড। এখানে রয়েছে অফিসারদের জন্য সুবিশাল অফিস ভবন, ওয়্যারহাউজ, মিক্সিং প্ল্যান্ট ও ল্যাবরেটরি। পাইওনিয়ার বেজড থেকে দক্ষিণে স্থাপন করা হয়েছে কনস্ট্রাকশন ইরেকশন বেজড। এখানেও উঠেছে অনেক ভবন।
কনস্ট্রাকশন ইরেকশন বেজড-১ এর কাজও প্রায় শেষ। এখানে সিমেন্ট, পাথর ও অন্য মালামাল মজুদ করার জন্য স্টিলের শেড নির্মাণ করা হয়েছে। এখান থেকে পশ্চিম দিকে টার্ন নিয়ে একটি কংক্রিটের রাস্তা সীমানা প্রাচীর ছুঁয়ে চলে গেছে পশ্চিম দিকে। সেখানে দ্রুত এগিয়ে চলছে প্রকল্প অফিসের কাজ। যেখান থেকে পরিচালিত হবে স্বপ্নের রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
এই অফিসের কয়েক বিঘা জমি পরেই বসবে রিয়েক্টর ও টারবাইন। এখানে চুল্লিতে ইউরেনিয়াম বার্ন করে বিদ্যুতে রূপান্তর করা হবে। চুল্লির জন্য নির্ধারিত স্থানটি বেশ খানিকটা নিচু। এর চারদিকে বেড়িবাঁধের মতো পাথর দিয়ে ঘেরা। ভেতরটি পুকুরের মতোই বেশ খানিটকা নিচু। সেখানে কয়েকশো শ্রমিককে ছুটির দিনেও ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। বেশ কয়েকটি ট্রাক মাটি টানার কাজ করছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানালেন, পুরো এলাকায় প্রায় ১২শ শ্রমিক কাজ করছেন। আর মনিটরিংয়ে রয়েছেন দেশি-বিদেশি দেড় শতাধিক বিশেষজ্ঞ। সকাল-সন্ধ্যা কাজ চলে রুটিন করেই। কিন্তু কোনো কোনো দিন গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ কর্মযজ্ঞ।
চুল্লির জন্য নির্ধারিত নিচুমতো জায়গাটিতে সাড়ে পাঁচ হাজার পাইলিংয়ের উপর স্থাপিত হবে রাশিয়ান ভিভিআর-১২০০ প্রযুক্তির অত্যাধুনিক পরমাণু রিয়েক্টর। পাশাপাশি দু’টি ইউনিট থাকবে এখানে। সমানতালেই চলছে দু’টি ইউনিটের কাজ। একটি থেকে অপরটির কমিশনিংয়ের (বাণিজ্যিক উৎপাদন) ব্যবধান থাকবে দু’বছর। প্রথম ইউনিট আসবে ২০২৩ সালে। আর দ্বিতীয় ইউনিটটি উৎপাদনে আসবে ২০২৪ সালের শেষ দিকে।
চুল্লির জন্য নির্ধারিত পয়েন্টের পুর্বদিকে সিমেন্টের জন্য বিশাল বিশাল সাইলো বসানো হয়েছে। সব মিলিয়ে মূল প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী আগস্ট মাসের প্রথম দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেইন পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
কয়েক মাস আগে যারা প্রকল্প এলাকা ঘুরে গেছেন তাদের পক্ষে এখন চেনা কঠিন। পাবনা শহরের বাসিন্দা নুরুন্নবীর চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা। তিনি মন্তব্য করেন, এখানে এতোকিছু কখন হলো। আমরা বুঝতেই পারলাম না। আমরা ভাবছি কথার কথা আলোচনা চলছে। মূল কাজ অনেক দেরি রয়েছে। আদৌ হবে কি না তারেই ঠিক নেই।
নুরুন্নবীর মতো অনেকেই রয়েছেন যারা মনে করেন এতো টাকা কোথায় পাবে সরকার। হয়তো কথার কথা স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। হতে পারে পলিটিক্যাল স্ট্যান্ডবাজি। তবে বেশিরভাগ লোক মনে-প্রাণে কামনা করেন দ্রুত এগিয়ে যায় এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। বাংলাদেশ যুক্ত হোক স্বপ্নের পরমাণু বিদ্যুতের জগতে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আমরা সঠিক লাইনে রয়েছি। কোনোদিক থেকেই পিছিয়ে নেই। নির্ধারিত সময়েই (২০২৩ সালে) বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে সক্ষম হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। সব কিছুই ঠিক ঠাক রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭
এসআই/এএ