ঢাকা, শুক্রবার, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

লাল ফিতায় বন্দি খালাশপীর কয়লা খনির ভাগ্য

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১১
লাল ফিতায় বন্দি খালাশপীর কয়লা খনির ভাগ্য

ঢাকা : লাল ফিতায় বন্দি হয়ে আছে খালাশপীর কয়লাখনির ভাগ্য। দেশের উন্নতমানের এই কয়লা খনির উন্নয়নের জন্য ২০০৬ সালে আবেদন জমা দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত এর কোনও সুরাহা হয়নি।



সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘কয়লানীতি না হওয়ায় এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। ’

তবে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুবিদ আলী ভূঁইয়া এমপি বাংলানিউজকে বলেছেন, ‘কাজের জন্য কোন নীতির প্রয়োজন হয় না। কারণ নীতি কোন আইন নয় যে, এর কারণে কোন কাজ আটকে রাখতে হবে। ’

‘যতদিন না পৃথক কয়লানীতি প্রনয়ন করা হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত বিদ্যমান ১৯৯৫ সালের জাতীয় জ্বালানি নীতিমালায় খালাশপীর কয়লা খনির উন্নয়ন করা সম্ভব। ’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান নীতিদিয়ে যদি বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি উন্নয়ন হতে পারে তাহলে খালাশপীর খনি কেন নীতির জন্য আটকে থাকবে। ’

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে মদনখালী ইউনিয়নে খালাশপীর কয়লা খনির  অবস্থান।

১৯৫৯ থেকে ৬২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ভূ-তাত্ত্ব্কি জরিপ অধিদফতর (জিএসবি) পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর খনিটির অবস্থান নির্ণয় হয়।

‘পরে বাংলাদেশ জিএসবি ১৯৮৯-১৯৯০ সালে খনি এলাকায় ৪টি অনুসন্ধান কূপ খনন করে ৩টিতে ২৮৪ মিটার থেকে ৪৮০ মিটার গভীরতায় উন্নতমানের বিটুমিনাস গোত্রের কয়লার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করে।

 কয়লাখনি প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল হক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ২০০৩ সালে সরকারের কাছে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যুরো অব মিনারেল ডেভেলপমেন্ট হোসাফ কনসোর্টিয়াম ও চায়নার সেন উইন মাইনিং গ্রুপকে খালাশপীর কয়লা খনি সমীক্ষার জন্য লাইসেন্স প্রদান করা হয়।

লাইসেন্স প্রাপ্তির পর হোসাফ কনসোর্টিয়াম এবং সেন উইন মাইনিং গ্রুপ ট্রপোগ্রাফিক্যাল সার্ভে এবং দ্বি-মাত্রিক ও ত্রি-মাত্রিক সিসমিক সার্ভে করে। ওই সার্ভের মাধ্যমে কয়লার মজুদ, পুরুত্ব¡, গভীরতা, চ্যুতি ও কয়লার বিস্তুৃতি এবং স্তর সম্পর্কে পরীক্ষা চালানো হয়।

 এছাড়া ভারতের জিওটেক কোম্পানি ১৪টি অনুসন্ধান কূপ খনন করে সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষার দেখা যায় ১২.২৫ বর্গ কিমি এলাকায় বিস্তৃত খনিটিতে কয়লার স্তর রয়েছে ৮টি।

৮ স্তরবিশিষ্ট এ খনির গভীরতা ২২২ মিটার থেকে শুরু করে ৬০৭ মিটার গভীরতায় অবস্থান করছে। গড়ে ২৬৫ মিটার থেকে শুরু হয়ে ৩৮৭ মিটারে শেষ হয়েছে।

এর মধ্যে ১, ২ এবং ৪ নং স্তর অধিকতর বিস্তৃত এবং পুরু। এই খনিতে সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ধারণা করা হচ্ছে ৪৫২ মিলিয়ন টন। তার মধ্যে প্রমাণিত মজুদ ২৭৭ মিলিয়ন টন এবং অতিরিক্ত আরও ১৭৫ মিলিয়ন টন মজুদ সম্ভাবনাময় ধরা হয়েছে।

এই খনিতে বিটুমিনাস গোত্রের এ কয়লার অবস্থান নির্ণয় করা হয়েছে। যার দহন ক্ষমতা ১ হাজার ৫শ` ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (বিটিইউ)। কয়লার কোন কোন স্তরে কোকিং কোল নামে এক ধরনের কয়লা রয়েছে। যা দিয়ে যে কোন ধাতু গলানোর কাজ করা সম্ভব।

খনির ভূ-তত্ত্ববিদ অনুপ কুমার বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘পরিবেশের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করলে প্রকৃতির কোনো ক্ষতি হবে না। ’

‘হোসাফ গ্রুপ ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে কয়লা খনির সমীক্ষা প্রতিবেদন (ফেসিবিলিটি রিপোর্ট) সরকারের কাছে জমা দিয়ে মাইনিং লিজের জন্য আবেদন করেছে। ’

‘খনিটি ভূ-গর্ভস্থ (আন্ডার গ্রাউন্ড মাইনিং) পদ্ধতিতে উত্তোলন জন্য সরকারের কাছে আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতিতে শতকরা ২০ থেকে ৩৫ ভাগ পর্যন্ত উত্তোলন করা সম্ভব হবে। প্রথমিকভাবে বছরে ৩ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ’

‘তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি মূল্যায়নের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় খনিজ উন্নয়ন অধিদফতরকে। ’

‘পরে পেট্রোবাংলার হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মাধ্যমে আইএমসিএল নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয় হোসাফের জমা দেওয়া স্ট্যাডি রির্পোটটি মূল্যায়ন করার জন্য।

‘আইএমসিএল মূল্যায়ন কাজও শেষ করে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে জমা দেয়। ’

এতে হোসাফের জমা দেওয়া ফেসিবিলিটি রিপোর্ট যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে, আরো কিছু কাজ করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

সুত্র জানিয়েছে, সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, খনি উন্নয়ন করা হলে সামাজিক, কারিগরি, আর্থসামাজিক অবস্থায় কি প্রভাব পড়বে তা নির্ধারণ করার জন্য। ’

কিন্তু সেই রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর আজ পর্যন্ত হোসাফ কে জানানো হয়নি। এই কাজ করার জন্য।

পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা মকবুল ই-ইলাহী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, খালাশপীর কয়লাখনির কয়লার মান বড়পুকুরিয়ার চেয়েও অনেক উন্নত। দেশের বর্তমান জ্বালানির যে অবস্থা তাতে খালাশপীর কয়লা খনির কাজ দ্রুততর সময়ে করা উচিত।

তিনি আরো বলেন, যতদ্রুত সম্ভব হোসাফ গ্রুপকে বিষয়টি অবহিত করে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে করে নেওয়া উচিত।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, কয়লা এখন স্পর্শকাতর ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সে কারণে আমরা বিষয়টি নিয়ে সাবধানে অগ্রসর হচ্ছি। এই মুহুর্তে গ্যাসকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

পীরগঞ্জ আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এই এলাকাটি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো এই খনিটি উন্নয়নের জন্য। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি।

আর্থসামাজিক অবস্থার উপর এর প্রভার ভালোভাবে পরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।