ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

তিতাস গ্যাসে প্রি-প্রেইড মিটারের কার্যক্রম শুরু

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১১
তিতাস গ্যাসে প্রি-প্রেইড মিটারের কার্যক্রম শুরু

ঢাকা: তিতাস গ্যাসের ‘প্রটোটাইপ প্রি-প্রেইড গ্যাস মিটার’ স্থাপন পাইলট প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। বুধবার থেকে চালু করা হয়েছে প্রি-প্রেইড মিটার কার্যক্রম।



রাজধানীর লালামাটিয়া এবং মোহাম্মদপুরে পরীক্ষামুলক নেওয়া এই প্রকল্পে আওতায় মিটার স্থাপনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার।

এরই মধ্যে বসানো হয়েছে ৩হাজার ৫শ ৩৭ টি, হাতে সময় রয়েছে আরও ১ মাস।

তবে তিতাসের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকতাদের কারসাজির কারণে প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

সিস্টেম লসসহ বিভিন্ন নামে দুর্নীতি রোধে এই প্রকল্প কার্যকরী ব্যবস্থা হওয়ার সম্ভবনা থাকলেও তিতাসের কর্মকর্তারা প্রকল্পকে সরাসরি সফল বলতে চাননি। উত্তর দিয়েছেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে।

গ্যাসের অপচয়, দুর্নীতি রোধ, গ্যাস বিল জমাদানের হয়রানি এড়ানো এবং কোম্পানি রাজস্ব বৃদ্ধি ও গ্রাহক সেবা বৃদ্ধির লক্ষে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞগণ দাবি করেছেন, এই প্রি-প্রেইড মিটার চালু হলে তিতাসের সিসটেম লসের নামে ২ শতাংশ গ্যাস লুটপাটসহ দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে। এই প্রকল্প সর্বত্র চালু করা গেলে গ্যাস কোম্পানিগুলোর চেহারা রাতারাতি পাল্টে যাবে।
তবে তারা আশংকা প্রকাশ করেছেন, এই প্রকল্প চালু হলে কর্মকর্তাদের দুর্নীতি করার সুযোগ থাকবে না সে কারণে তিতাসের অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এই প্রকল্পকে মনে প্রাণে মেনে নিতে পারছে না।

তারা চাইছে এই প্রকল্প ভেস্তে যাক। সে কারণে এই প্রকল্প কতটুকু আলোর মুখ দেখবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লি. মেট্রো ঢাকা বিপণন বিভাগ-৫ প্রকল্প শুরু করা হয় নভেম্বর ২০০৯ সালে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৭০ লাখ ৫১ হাজার ৬শ টাকা।

প্রকল্পের তত্বাবধানে রয়েছেন বুয়েটের আইআইসিটি (ইন্সটিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি) বিভাগ। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য লালমাটিয়া এলাকায় মেসার্স সিগমা এন্টারপ্রাইজ এবং মোহাম্মদপুর এলাকায় মেসার্স প্যারামাউন্ট ইন্টারন্যাশনাল ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছে।

বুয়েট উদ্ভাবিত এই মিটারের বিষেশত্ব হচ্ছে গ্রাহকের ব্যালান্স শেষ হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে গ্যাস সরবরাহ। তবে গ্রাহকের ১০ ঘনমিটার গ্যাস সমান (বর্তমান দর) ৫১.৬০ টাকা থাকতেই ব্যালান্স থাকা অবস্থায় এলার্ম দিবে মিটার।

যাতে গ্রাহক আগে ভাগেই রিচার্জ করতে পারেন। এছাড়া হয়রানি এড়ানোর জন্য নেগেটিভ ব্যালান্স ব্যবহারের সুযোগ থাকছে।

ব্যালান্স শেষ হওয়ার কারণে মিটার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পুশবাটন চাপ দিয়ে ২০ ঘনমিটার নেগেটিভ ব্যালান্স ব্যবহার করতে পারবে গ্রাহকরা। যা পরবতী রিচার্জের সময় সমন্বয় করে নেওয়া হবে।

রিচার্জ করার জন্য গ্রাহককে দেওয়া হয়েছে স্মার্ট কার্ড। স্মার্ট কার্ড রিচার্জের জন্য ইউসিবিএল আসাদ গেট শাখা এবং রূপালী ব্যাংক আসাদ গেট মহিলা শাখায় ভেন্ডিং স্টেশন খোলা হয়েছে। এখানে গ্রাহকেরা সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করতে পারবে।

শনিবার এবং ঈদসহ বড় ধরণের ছুটির সময়ে যাতে গ্রাহকদের বিড়ম্বনায় ভুগতে না হয় সে জন্য তিতাসের লালমাটিয়া কার্যালয়ে ইমার্জেন্সি ভেন্ডিং স্টেশন খোলা হয়েছে। এখানে টাকা না দিয়ে ৫০ টাকা সমপরিমানের রিচার্জ করা যাবে। যা পরবতী রিচার্জের সময় সমন্বয় করা হবে।

এই প্রক্রিয়ায় গ্রাহকদের জন্য সর্বনিম্ন মাসিক ফি থাকছে না। তবে মিটার ভাড়া হিসেবে প্রতিমাসে ৫০ টাকা দিতে হবে।

‘প্রকল্পের মনিটরিং করার জন্য তিতাসের প্রধান কার্যালয়ে বসানো হয়েছে সিসটেম মাস্টার স্টেশন (এসএমএস)। যেখান বসেই দেখা যাবে মিটারের সার্বিক অবস্থা।

প্রটোটাইপ প্রি-প্রেইড মিটার প্রকল্পের ম্যানেজার বাসুদেব সাহা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে মিটার বসানোর কাজ শুরু হলেও গত ১২ অক্টোবর থেকে মিটারগুলোকে প্রি-প্রেইডে নেওয়া শুরু হয়েছে। ১২ এবং ১৩ অক্টোবর দুইদিনে প্রায় ১০০ টি মিটার প্রি-প্রেইডে নেওয়া হয়েছে।

পর্যায়ক্রমে সব মিটার প্রিপ্রেইডে নেওয়া হবে। এতদিন কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের স্মার্ট কার্ড রিচার্জ করে দেওয়া হয়েছে। এখন গ্রাহকরা নিজেরাই সব প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করবেন।

এই প্রকল্প সফল কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ঘুরে ফিরে উত্তর দেন। তার পরেও তিনি একে সফল বলেন নি।

তিনি দাবি করেছেন, আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। এই প্রকল্পে অনেক লোকের প্রয়োজন।

তিতাসের এমডি আব্দুল আজিজ খান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, কেবলমাত্র মিটার বসানো শেষের দিকে এ্বং গত পরশু থেকে মিটারগুলো প্রি-প্রেইডে নেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রকল্প সফল বা ব্যর্থ বলা কঠিন।

সফল কিনা এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা বললে কি হবে জনগণ বললে সেটাই ভালো দেখাবে। কারণ তারা ভুক্তভোগি।

আপনার ব্যক্তিগত মতামত কি এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি মনে করি দেশের যে জ্বালানি সংকট রয়েছে তা মোকাবেলায় প্রি-প্রেইড মিটারের বিকল্প নেই।

তবে তিনি জ্বালানি সংকট মোকাবেলার জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বলেন, যে পানির দামে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। এতে করে জনগণ অপচয় বন্ধ করবে না। দাম বাড়ালে গ্রাহকরা সাশ্রয়ের জন্য আগ্রহী হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪২ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।