ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের মান বাড়াবে: ইয়াফেস ওসমান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১১
রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের মান বাড়াবে: ইয়াফেস ওসমান

ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের মান-মর্যাদা বাড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।

বুধবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি সইয়ের পর বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

 

তিনি বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করবে। ’

অত্যাধুনিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর চার লাখ টন ওজন ক্ষমতার আঘাত এলেও এর কোনও ক্ষতির ঝুঁকি নেই বলেও তিনি জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বাংলাদেশের জন্য একটি স্মরণীয় ঘটনা এবং ইতিহাসের পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত বন্ধু রাশিয়া এ কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের অভিনন্দন জানাই। ’

‌এ সময় তিনি যা কিছু করা হয়েছে, দেশের জনগণের স্বার্থেই করা হয়েছে বলেও দাবি করেন।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। কিন্তু আমাদের দেশের বিদ্যুৎ খাত অনেক তিমিরে অবস্থান করছে। এই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমাদেক সেই তিমির থেকে আলোতে আনবে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপিত হলে দেশের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে বলেও মনে করছেন তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু করার জন্য। আমরা আশা করছি ২০১৩ সালের প্রথম দিকে এর কাজ শুরু করা হবে। কাজ শুরুর দিন থেকে ৫ বছরের মধ্যে উৎপাদনে যাবে এই কেন্দ্রটি।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে মোট দুটি ইউনিট থাকবে। এর একেকটি ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উপাদন করবে বলে জানান ইয়াফেস।

তিনি বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে খরচ হবে এক তৃতীয়াংশ এবং তেল –গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের তুলনায় এক পঞ্চমাংশ হবে ।

প্রচলিত অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় নির্মাণ খরচ বেশি হলেও ১৫ বছরের মধ্যে এর বিনিয়োগ উঠে আসবে এবং এখানে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ উপদান করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।

এছাড়া দেশের জ্বালানি সংকট নিরসনে পারমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিকল্প নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেণ।

পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তুলনামূলক বেশি পরিবেশবান্ধব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‌এতে কার্বন নির্গমন হয় না। ৩ টন কয়লা পুড়িয়ে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে মাত্র ১ গ্রাম ইউরিনিয়ামের প্রয়োজন পড়বে।

রাশিয়ান ফেডারেশনের দ্য স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি কপোরেশন ( রোসাটম) এর মহাপরিচালক সার্জেই ভি কিরিনকো বলেন, এই চুক্তি স্বাক্ষর ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিকল্প নেই। এই চুক্তির মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

তিনি আরও বলেন, রোসাটম এ যাবত ২৯ টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডিজাইন করেছে।

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখানে নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটিতে ৫ পর্যায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।

যান্ত্রিক কিংবা কোনও দুর্যোগের মুখোমুখি হলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।

‌‌‌‌‌তিনি বলেন, এছাড়া ৪০ হাজার বিমানের যে শক্তি সেই শক্তি সমান আঘাত হানলেও এর কোন ক্ষতি করতে পারবে
না। ‌‌‌

রূপপুর প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, "ফুকোশিমা দুর্ঘটনার পর নতুন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা নতুন নকশায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করবো। এতে পাঁচটি নতুন ব্যবস্থা যোগ করা হয়েছে। "

তিনি জানান, রুশ সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ঋণ দেবে। অর্থায়ন নিয়ে পরে চুক্তি হবে।

এছাড়া পরমাণু বিদুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করবে রাশিয়া। ব্যবহৃত হওয়ার পর তেজস্ক্রিয় জ্বালানি ফেরতও নেবে রাশিয়া।

 সেইসঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাংলাদেশি কর্মকর্তাদেরও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেবে রাশিয়া।

কিরিয়েঙ্কো বলেন, "আগামী বছর থেকে উচ্চপর্যায়ের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। "

অপর এক প্রশ্নের জবাবে কিরিনকো বলেন, ফুকিশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ছিল ৪০ বছর আগে নির্মিত। এখন প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গেছে। সে কারণে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে কোনও ঝুঁকি নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।