ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বালুতে মিলেছে মূল্যবান খনিজ, পৃথকীকরণে বসছে প্ল্যান্ট

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
বালুতে মিলেছে মূল্যবান খনিজ, পৃথকীকরণে বসছে প্ল্যান্ট

ঢাকা: বাংলাদেশের নদীবক্ষের বালুতে মিলেছে ভারী মণিকের (মূল্যবান দ্রব্য) উপস্থিতি। এর মধ্যে ইলমেনাইট, জিরকন, রুটাইল, মোনাজাইট, কায়ানাইট এবং গার্নেটের মতো মূলবান ধাতুর উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে।

সম্প্রতি কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে নদীবক্ষ থেকে বালুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে ল্যাবরেটরিতে এসব বালুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মূল্যবাদ ধাতুর সন্ধান পাওয়া যায়।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষাগারে এসব বালু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিটন বালুতে ৪০০ গ্রাম রুটাইল, ৪০০ গ্রাম জিরকন ও আড়াই কেজি ইলমেনাইটসহ মূল্যবান খনিজ সম্পদের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এসব ধাতুর সিরামিক শিল্প, গাড়ির পলিশিং পেপার শিল্প, উড়োজাহাজের খুচরা যন্ত্রাংশ, হাঁটুর জয়েন্ট বল, নকল দাঁত ও লোহার আকরিক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।  
জানা যায়, এসব মূল্যবান দ্রব্যাদি পৃথকীকরণে প্রকল্পের আওতায় ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি (আইএমএমএম) বিভাগ জয়পুরহাটে একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এই প্ল্যান্ট চলতি বছরের আগস্টের শেষ সপ্তাহে চালু হবে। এতে কাজ করছেন অস্ট্রেলীয় পরমর্শকেরা। বালি থেকে ভারি মণিক পৃথকীকরণের জন্যই মূলত এই প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে।
 
ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জির (আইএমএমএম) পরিচালক ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান বাংলানিউজকে বলেন, বালিতে ভারি মণিক মিলেছে এটা আমাদের জন্য সুখবর। এর মাধ্যমে দেশে বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে পারে।  

‘কীভাবে এসব দ্রব্য বালু থেকে আলাদা করা তা নিয়ে কাজ চলছে। আমরা অস্ট্রেলিয়ার কিছু পরামর্শকের মাধ্যমে প্ল্যান্ট চালু করতে যাচ্ছি আগস্ট মাসে। প্রতি বর্গ কিলোমিটার বালুতে কী পরিমাণে মণিক আছে তা নির্ণয় করা হবে। আমরা এ বিষয়ে একটি ডাটাবেজও তৈরি করবো। বালুতে মিশ্রিত মণিকে দেশি ও বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চাই। ’
 
জানা যায়, প্রকল্পের আওতায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং ভোলা জেলার নদী মোহনা এলাকায় আরো জরিপ করা হবে। নদীবক্ষের বালু ও উপকূলীয় দ্বীপ এলাকার বালুতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।  
 
‘বাংলাদেশের নদীবক্ষের বালিতে মূল্যবান খনিজের উপস্থিতি’ প্রকল্পের আওতায় এসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ৩৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।  

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হলে দেশের খনিজ বালুর একটি প্রাথমিক তথ্যভাণ্ডার তৈরি হবে। এই তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে মূল্যবান খনিজ বালুসমূহ রফতানি করলে অধিক পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।  
 
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বিএসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ।
 এ বিষয়ে বিসিএসআইআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও গবেষণা সমন্বয়কারী ড. মোসাম্মৎ হোসনে আরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এরই মধ্যে ভারী মণিকের মধ্যে ইলমেনাইট, জিরকন, রুটাইল, মোনাজাইট, নিউকোক্সিন, কায়ানাইট, সিলেমিনাইট এবং গার্নেটের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে।  

এসব দ্রব্যের ব্যবহার প্রসেঙ্গে তিনি বলেন, এসব দ্রব্য ব্যবহার করে উন্নতমানের ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট বোর্ডসহ নানা পণ্য তৈরি করা যেতে পারে। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হতে পারে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
এমআইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।