যুক্তরাষ্ট্র থেকে: যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনের পাশের শহর ক্যামব্রিজ পুলিশ কর্তৃক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বোস্টন ও ক্যামব্রিজ প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
স্থানীয় সময় সোমবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে ক্যামব্রিজ সিটি হলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে প্রবাসীরা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত শিক্ষার্থী সাইদ আরিফ ফয়সালকে হত্যাকারী পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান।
গত বুধবার (জানুয়ারি ৪) দুপুরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত শিক্ষার্থী সাইদ আরিফ ফয়সালকে লক্ষ্য করে ক্যামব্রিজে পুলিশ গুলি করে। পরে তাকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। তবে এ ঘটনার পর থেকেই পুলিশ দাবি করছে ফয়সালের হাতে একটা ছুরি দেখতে পেয়ে তাকে সেটা নিচে ফেলে দিতে বলে। কিন্তু তিনি পুলিশের দিকে তেরে আসছিলেন পুলিশ তাকে গুলি করতে বাধ্য হন।
এ খবর মুহূর্তের মধ্যে বোস্টনসহ আশপাশের এলাকার প্রবাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রবাসীরা। ফয়সাল হত্যায় জড়িত দোষী পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোমবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে ক্যামব্রিজ সিটি হলের সামনে শতাধিক প্রবাসী জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান। এ সময় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যামব্রিজ এলাকা।
বিক্ষোভ সমাবেশে আগত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সান্তনা দিয়ে স্থানীয় মূলধারার রাজনীতিবিদরা বলেন, আপনাদের মতো আমরাও এ অসহায় পরিবারটির পাশেই থাকবো। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন যেন দোষীদের সঠিক বিচার করতে পারি।
তারা আরও বলেন, ক্যামব্রিজ শহরে এমন ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য আমরা সবার্ত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সমাবেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বলেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত শিক্ষার্থী ফয়সাল ছিল সম্পূর্ণ নির্দোষ। পুলিশের এমন আচরণে শুধু বাংলাদেশিরাই নয়, বিভিন্ন দেশীয় অভিবাসীরা হতবাক হয়েছেন। এ শহরের অভিবাসীরা চরম নিরাপত্তায় ভুগছেন। পুলিশ কর্তৃক বাংলাদেশি ফয়সালকে হত্যার ঘটনা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। বাবা-মার একমাত্র ছেলে ফয়সালের করুণ মৃত্যুতে তার পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের সান্তনা দেবার ভাষা আমাদের জানা নেই। তাই দোষী পুলিশদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ক্যামব্রিজ সিটি মেয়র সুম্বুল সিদ্দিকি ও কাউন্সিলম্যান বুরহান আজিম বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় জুমে এবং সরাসরি আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে। তারা দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন।
ফয়সাল হত্যার ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে তাদের পরিবারের এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের পরিবারে চরম অশান্তি বিরাজ করছিল। প্রতিনিয়তই মা-বাবার মধ্যে ঝগড়া হতো। ফয়সালের বাবা সাইদ মুজিবুল্লাহ ছিলেন একজন মদ্যপ ব্যক্তি। সংসারের অশান্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে ছিল যে ফয়সালের মা মোছাম্মদ শাহেদা কয়েক বছর আগে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য হন। পরে তিনি দেশে গিয়ে আরেকটি বিয়ে করেন।
বাবা-মার এহেন কর্মকাণ্ড দেখে ফয়সাল অসহায়ত্বে ভুগতে থাকেন। এছাড়া ফয়সাল নিজেও বোস্টন প্রবাসী সিলেটি এক মেয়েকে ভালোবাসতেন। তাদের মধ্যেও সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এসব নানা ঘটনা তাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত করে তোলে। ঘটনার দিন তার হাতে ছুরি থাকার ঘটনা থেকেই অনেকেই অনুমান করছেন যে তিনি নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার পথ খুঁজছিলেন।
ফয়সালের মৃত্যুর পরদিন বোস্টনের স্থানীয় একটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান তার বাবা ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বিনামূল্যে কবর দিতে প্রস্তাব দিলে তারা নাকচ করে দেন। তারা বলেন, ফয়সালের পরিবারের সবাই আমেরিকায় ২৫ বছর ধরে বসবাস করছেন। আমারা সবাই প্রতিষ্ঠিত। আমাদের কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই।
সূত্র: বাংলা প্রেস
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
আরআইএস