প্রায় চারশ’ যাত্রীর মধ্যে নানা দেশের নানা জাতির মানুষ। সবার গন্তব্য ইমিগ্রেশন কাউন্টার।
হঠাৎ করেই যেন একটি কাউন্টার থমকে গেলো। পেছনের যাত্রীদের চোখে মুখে তখন বিরক্তি।
হঠাৎ এই বিপত্তির কারণ সবুজ পাসপোর্ট। পাসপোর্টধারীকে নানা প্রশ্ন করে যাচ্ছেন ইমিগ্রেশন অফিসার। পাসপোর্টটিতে ইউরোপসহ নানা দেশের ভিসা থাকলেও প্রশ্নের পর প্রশ্ন চলছেই।
এক পর্যায়ে ফিরতি টিকিট আছে কি না জানতে চাইলেন ইমিগ্রেশন অফিসার।
জবাবটা হ্যাঁ হওয়াতেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হলো না। এবার তাকে কাউন্টারে দাঁড় করিয়েই সেই কর্মকর্তা পাসপোর্ট আর টিকিট নিয়ে ছুটলেন উর্দ্ধতন কর্মকর্তার কক্ষে।
কিছু সময় বাদে ফিরে এসে বললেন- সরি, আপনাকে আমার সঙ্গে যেতে হবে।
কাচুমাচু মুখে উর্দ্ধতন কর্মকর্তার কক্ষে যাবার পর নারী ও এক পুরুষ কর্মকর্তা মিলে শুরু হলো নতুন জেরা পর্ব।
প্রায় আধা ঘণ্টা পর মুক্তি। শেষ পর্যন্ত মিললো ইন্দোনেশিয়ায় ঢোকার অনুমতি।
এই গল্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ. কেনেডি এয়ারপোর্টে ঘটলে না হয় মানা যেতো। ট্রাম্প জমানায় অবাক হবার কিছু থাকতো না। কিন্তু মুসলিম প্রধান ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশিদের এ হাল কেনো?
উত্তরটা যেন মুখে তোলাই ছিলো অভিবাসন কর্মকর্তা রেদোয়ান এম টংকুর।
বেশ বিরক্তি নিয়ে বললেন, কেন জানো না! কি হচ্ছে বাংলাদেশে! বলতে পারো, বাংলাদেশকে মনে মনেই উচ্চ সতর্কতার দেশ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছি আমরা।
কারণ অবশ্য আরো একটা আছে। সেটা অন অ্যারাইভাল ভিসা’র অপ-ব্যবহার।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানবপাচারকারীরা পর্যটক পরিচয়ে এনে দেশের অসহায় মানুষদের সমুদ্রপথে পাচার করে দিচ্ছে নানা দেশে। ধরা পড়লে যার খেসারত দিতে হচ্ছে ইন্দোনেশিয়াকে।
যে কারণে সব মিলিয়ে সবুজ পাসপোর্টের দিকে নজরদারি তুলনামূলক বেশি- যোগ করেন ওই অভিবাসন কর্মকর্তা।
প্রবাসীদের চাকরি, ব্যবসা কিংবা বিনিয়োগে এখনো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেনি ইন্দোনেশিয়া। তবে মধ্যবিত্ত বাংলাদেশিদের অনেকের ছুটি কাটানোর প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে দেশটির পর্যটনের স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত বালি।
তবে দেশের মধ্যে জঙ্গিদের সিরিজ হামলা আর ফ্রি ভিসার অপব্যবহার বাংলাদেশের ইমেজকে করে তুলেছে বিপন্ন। বিষয়টি নিয়ে ঢাকার একাধিক কুটনীতিকের সঙ্গে কথা বলেও আশঙ্কার আভাস পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে তারা জানান, ২০১৪ সালে ২২ জানুয়ারি প্রথমে ৬১টি রাষ্ট্রকে অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধে দেয় ইন্দোনেশিয়া। পর্যায়ক্রমে এই তালিকাটা বিস্তৃত হতে থাকে। গত বছরের ২ মার্চ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে জকো উইদোদো সেই সংখ্যাটা বাড়িয়ে ১৬৯ দেশের নাগরিকদের নিজ দেশে প্রবেশে ভিসা ফ্রি সুবিধার ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্য বাংলাদেশ বাদ পড়লে নানা পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করে এ সুবিধা বহাল রাখা সম্ভব হয়।
এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আজমল কবির বাংলানিউজকে বলেন, এটা সত্যিই একটা বড় সমস্যা । আমরা নিজেরাও উদ্বিগ্ন। আমার কাছে এ বিষয়ে সরাসরি উদ্বেগ জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে আমি আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যদি ঠিকভাবে যাচাই করা হয়, তবে এ সমস্যা অনেকটাই কেটে যেতো।
কিন্তু আদম পাচারকারিরা অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধার অপব্যবহার করায় এখানকার বিমানবন্দরে আটক হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। খবর পেয়ে আমরা ছুটে যাচ্ছি। গত সপ্তাহেও এভাবে দু'জন এসে আটকে পড়েন এখানে। তারা কোথায় এসেছেন, কার কাছে যাচ্ছেন, এমন কি কোন হোটেলে থাকবেন তাও বলতে পারেননি।
পরে দশদিন ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় তাদের।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এসব ঘটনা আমার দেশের মর্যাদাকে ছোট করে। ক্ষুণ্ন করে দেশের সন্মান।
এসব কারণে কতো দিন এই সুবিধা বহাল থাকবে সেই প্রশ্ন আর আশঙ্কার কথাই এখন বেশি বেশি শোনা যাচ্ছে জাকার্তার মাটিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৭
জেডএম/
আরও পড়ুন
** তথ্যপ্রযুক্তিতে সুস্থ রাখার এক ফেরিওয়ালা সাজিদ রহমান
** ইন্দোনেশীয় ইউলিয়ানা আর বাংলাদেশি পলাশের প্রেমের আখ্যান!
** ঘামে ভেজা গেঞ্জি থেকেই সাফল্য!
** ইন্দোনেশিয়ায় নেমেই কোটিপতি!
** বাংলার পুকুরেই সাগরের ভেটকি
** প্রবাসে ভবিষ্যত বাংলাদেশ
** ইন্দোনেশিয়ায় অনন্য বাংলাদেশকেই মেলে ধরছেন হুমায়রা
** সন্ধ্যা হতেই বাতি নেভে শাহজালালের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের
**ঢাকা-জাকার্তা অনন্য উচ্চতায়
** ইন্দোনেশিয়া হতে পারে সেরা গন্তব্য
** এবার ইন্দোনেশিয়ার পথে বাংলানিউজের জাহিদ