রোববার সকালেই রওনা হলাম আমরা মেরাপি অাগ্নেয়গিরি দেখতে। এই অাগ্নেয়গিরি এখনও জীবন্ত।
সমতল থেকে হাজার মিটার উপরে উঠতে থাকি অামরা। এখানে বয়ে গেছে কালো বালুর নদী যা নেমে এসেছে আগ্নেয়গিরি থেকে। একবার অাগ্নেয়গিরি থেকে নিক্ষিপ্ত হয়ে একটি বড় পাথর খণ্ড এসে পড়ে পাহাড়ে। এই স্থানকে বলা হয় বাতু এলিয়েন, শয়তানের ছোড়া পাথর বলে বিশ্বাস করে স্থানীয়রা।
১. এখানে মধু বিক্রি হচ্ছে বোতল ভরে। সঙ্গে মধুর চাকও খান স্থানীয়রা। পলিথিনে ভরে একখণ্ড খাওয়ার চেষ্টা করলাম অামরা। তবে অধিক মিষ্টি পুরো এক খণ্ড মৌচাক খাওয়া সম্ভব হলো না। চাকে এখনও বসে অাছে মৌমাছি। তাকে গ্রাহ্য করেই মৌচাকসহ মধু খাওয়া।
২. আরও উপরে উঠতে থাকে অামাদের গাড়ি। এরপর চলে গেলাম বাংকার কালিয়াডামে। সেখানে দামার নিলো সিয়োমাই ইকান। এটা মাছের কেক। একই সঙ্গে ডিম সিদ্ধ, বেগুন সিদ্ধ এবং সয়াবিন থেকে তৈরি তোহু ও তেম্পে। ৩. লম্বা ভ্রমণ শেষে যখন অাবার সমতলে ফিরে অাসলাম, দামার জিজ্ঞাসা করলো কালিঞ্জি বা কাম্বিংয়ের মাংস চলবে নাকি? স্থানীয়রা খরগোশকে কালিঞ্জি এবং ছাগলের মাংসকে কাম্বিং বলেন। এ এলাকায় এ দুটোই খুব বিখ্যাত। দেশেও ছাগলের মাংস পাওয়া যায়, তবে খরগোশের মাংস দুষ্প্রাপ্য। তাই কালিঞ্জিকেই প্রাধান্য দিলাম। তবে এটা কালিঞ্জি সাতে, কারি নয়। বাঁশের কাঠিতে ফ্রাই করে সয়া সস দিয়ে পরিবেশন করাই হলো সাতে। এটাকে নির্দিষ্ট পরিমাণে আগুনে অাঁচ দিতে হয়। নাহলে পুড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। ভাত দিয়ে শষা আর টমেটোর সঙ্গে খরগোশের সাতের স্বাদ খাবারের পরও অনেক সময় ধরে অনুভব করলাম।
৪. জাভানিজরা খাবারের সঙ্গে চিপস ধরনের স্ন্যাকস খেতে ভুলে না। আর চিপস হিসেবে রয়েছে গরুর চামড়ার নিচের পাতলা অাবরণ থেকে তৈরি চিপস। দামার জানালো, এই চিপস পুরো ইন্দোনেশিয়া জুড়েই বেশ জনপ্রিয়।
৫. বিকেলের হাউজে ফিরে বেশ ক্লান্ত। আঁকাবাকা পাথরের পথে গাড়িতে চড়ায় পা দুটোও বেশ ব্যথা হয়ে রয়েছে। ক্লান্তিতে ঘুম জড়িয়ে অাসে।
সন্ধ্যায় হাউজের সামনেই একটি রেস্টুরেন্ট চলে গেলাম। যুগজাকার্তা ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষার্থীদের শহর বলেও পরিচিত। তাই এখানকার রেস্টুরেন্টগুলোতে শিক্ষার্থীদের অানাগোনা বেশি। শুকরের মাংসের দোকানকে এড়িয়ে গেলাম। দামার বললো, এটা এখন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। তবে এখানকার মানুষের ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়ে বড় পরিচয় জাভানিজ হিসেবে। তাই সব ধর্মীয় মানুষের খাবারই এখানে রয়েছে।
স্যুপের মধ্যে ডোবানো নুডলস, সেখানে মুরগির দুটি পা যেন জীবন্ত। মি আইয়াম চেকের চার্লিকো কিংডম একো রোমিও এই খাবারের নাম। স্যুপে অারও ডোবানো রয়েছে গরুর মাংসের বাসু গোরেং। এটা গরুর মাংসের বল। সঙ্গে তেও আইস, যেটা আসলে লাল চা এর মধ্যে বরফ ঢেলে দেওয়া।
৬. রাতে দামারের বাবার বাড়ি ঘুরে আসলাম। একটি জাভানিজ পরিবারের বাস্তুচ্যুত, একজন সংগ্রামী মানুষের গল্প, নিঁখুত ক্যাথলিক পরিবারের সুখ দুঃখ, সে গল্প আরেকদিন হবে। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে গেলাম রাজার বাড়ির সামনে। এই স্থানের নাম কোরাতান।
ঢাকা শহরের চায়ের দোকানের মতোই এখানে ভ্যানে কফির দোকান। সঙ্গে বিস্কুট বা কেকের বদলে তাহো, তাম্পে আর মুরগির কলিজার সাতে। একই ঢালায় অারও রয়েছে কোয়েলের ডিম আর মুরগির নাড়ির সাতে। আর গরুর মাংসের সসেজ। অর্ডার দিলেই কফির পানির কেটলি সরিয়ে আগুনে হালকা ঝলসে দেওয়া হয় এটি। আর কাগজে মোড়ানো ভাত পাওয়া যায় মাত্র ছয় টাকায়।
দামার বলেন, এখানে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়াতে খাবারের দামও খুব কম। শিক্ষার্থীরা রাতে এসব কফি স্টলে এসে অাড্ডা দেয়, সঙ্গে খাবারটাও সেরে নেয়।
মুরগির কলিজার সাতেতে কামড় দিতে দিতে যুগজাকার্তা রাজ্যের গল্প শুনতে থাকলাম।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৭
এমএন/আইএ