ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

গ্রিসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ত্রাণ দিল সরকার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২০
গ্রিসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ত্রাণ দিল সরকার

জহিরুল ইসলাম, এথেন্স (গ্রিস) থেকে: ইউরোপের দেশ গ্রিসে প্রায় ৩৫ হাজার বাংলাদেশির বসবাস। তাদের বেশিরভাগই ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, তৈরি পোশাক ও পর্যটনের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিযুক্ত। করোনা ভাইরাসজনিত বিরূপ পরিস্থিতিতে এখানকার বাংলাদেশিরাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে স্থানীয় গ্রিকদের মতো তারাও গ্রিক সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় রয়েছেন। ফলে তারা প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে রক্ষা করতে পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রেখেছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আসছে।  

প্রথমেই করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধ ও এর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সচেতনামূলক তথ্য সমৃদ্ধ পোস্টার, লিফলেট প্রস্তুত করেছে যা গ্রিসের বিভিন্ন দ্বীপ ও মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত বাংলাদেশিদের কাছে প্রচার করা হয়েছে।

নিয়েছে আরো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

ইউরোপের প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় প্রতিবছর বাংলাদেশিসহ বিপুল সংখ্যক অভিবাসী গ্রিসে অনিয়মিতভাবে প্রবেশ করেন। কেউ পরে বৈধতা পান, কেউ পান না। সম্প্রতি অভিবাসন বিষয়ে রক্ষণশীল গ্রিক সরকারের শক্ত অবস্থানের কারণে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি গ্রিসে বৈধতা অর্জন করতে পারেননি। অবৈধ অভিবাসী হওয়ায় এসব বাংলাদেশি কর্মহীন দিন কাটাচ্ছিলেন। করোনা ভাইরাসজনিত লকডাউন ও বৈশ্বিক অচলাবস্থার কারণে এসব বাংলাদেশি আরো বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অবৈধ হওয়ার কারণে তারা গ্রিক সরকার প্রদত্ত আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমেরও অন্তর্ভুক্ত নয়।

গ্রিসে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় দশ সহস্রাধিক যারা মূলত এথেন্স, থেসালোনিকিতে, মানোলাদা, লাপ্পা ও দ্বীপাঞ্চলে বসবাস করছেন। দীর্ঘ লকডাউনে বিপর্যস্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবাসী-বান্ধব নীতির আলোকে এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে এবং তাদের সহায়তার জন্য প্রাথমিকভাবে একটি থোক বরাদ্দের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

এই সহায়তার আওতায় নিরুপায় বাংলাদেশিদের একমাসের মৌলিক খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের সহায়তার জন্য দূতাবাসের বরাবর ২০ লাখ টাকার একটি থোক বরাদ্দ দেয়। ইতোমধ্যে সহায়তার বিষয়টি প্রচারপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের অবহিত করা হয়েছে এবং দূতাবাসের নির্ধারিত টেলিফোন নম্বরে ফোন করে বাংলাদেশি জাতীয়তা প্রমাণসাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের এই সহায়তার জন্য আবেদন করার অনুরোধ জানানো হয়।

প্রায় সহস্রাধিক বাংলাদেশি নাগরিক স্বউদ্যোগে দূতাবাসের নম্বরে যোগাযোগ করে ত্রাণ তালিকায় নাম নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এই নিবন্ধিত বাংলাদেশিদের ত্রাণ বিতরণের জন্য বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় ৯টি বিতরণ কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে  এবং প্রতিটি নিবন্ধিত ব্যক্তিকে অনলাইনে বা টেলিফোনে একটি টোকেন নম্বর ও একটি নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হচ্ছে যার মাধ্যমে ওিই ব্যক্তি তার আবাসস্থান থেকে নিকটবর্তী বিতরণ কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত সময়ে তার খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করতে পারবেন।  

এই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমের প্রস্তুতিকালে দূতাবাস কিছু বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। যেমন- ত্রাণ দেওয়ার বিষয়টি সব বাংলাদেশিকে অবহিতকরণ, সহজে বাংলাদেশ দূতাবাসের নম্বরে যোগাযোগ করে নিবন্ধিত হতে পারা, ত্রাণপ্রার্থীদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা, লকডাউন বিধি নিষেধের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রবাসীদের থেকে ন্যূনতম দূরত্বে বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন এবং কোনো সংস্পর্শ ও গনজমায়েত ছাড়াই ত্রাণ বিতরণ সম্পন্ন করা। যথাযথ প্রস্তুতি, পর্যাপ্ত তদারকি ও প্রবাসী নেতাদের সহায়তায় দূতাবাস সম্পূর্ণ কার্যক্রমটি কার্যকর এবং যথাযথভাবে পরিচালনা করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।