উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা নেই। এটিও গতানুগতিক ধারায় চলছে।
এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়নের নেতিবাচক প্রভাব রাজস্ব আয় ও কর্মসংস্থানে। প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে উৎস করসহ বিভিন্ন মালপত্র আমদানি থেকে সরকার রাজস্ব পায়। সেখানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আর কাটছাঁট করার ফলে মানুষের কাজের সুযোগ কমে যায়। অনেক মানুষ বেকার হয়ে যায়। তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট হচ্ছে।
এর মধ্যে সরকারের অংশ থেকে ৩০ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক বরাদ্দ থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত বেশি পরিমাণ অর্থ এডিপি থেকে কাটছাঁট করা হয়নি। শুধু সড়ক-মহাসড়ক বিভাগ থেকেই ১১ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা কাটছাঁটের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ধরা হয় দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের এক অতিরিক্ত সচিব জানান, চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে প্রায় অর্ধলক্ষ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হচ্ছে।
যদিও মন্ত্রণালয়গুলোর চাহিদা আরো প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কম। মূলত প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দে সঠিক পরিকল্পনার অভাব এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অদক্ষতায় প্রতিবছরই এডিপি বাস্তবায়ন কম হচ্ছে।
আইএমইডির সর্বশেষ এডিপি বাস্তবায়নের তথ্যে দেখা যায়, ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১৭.৯৭ শতাংশ। এর চেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য সংস্থাটির ওয়েবসাইটে নেই। সেই আলোকে গত এক যুগে এত কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। এদিকে ছয় মাসে ৫০ হাজার দুই কোটি টাকা অর্থছাড় হয়েছে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন। গত অর্থবছরে ৬১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা ছাড় হয়েছিল এই সময়ে। শুধু গত ডিসেম্বর মাসে অর্থছাড় হয়েছে ১৫ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা, যেখানে আগের অর্থবছরের ডিসেম্বর মাসে ছাড় হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, আগের সরকারের সময়ে নেওয়া চলমান সব প্রকল্পই সরকার পর্যালোচনা করেছে। অগুরুত্বপূর্ণ ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া অনেক প্রকল্প বা স্কিম বাদ যাচ্ছে। এতে অর্থ ব্যয়ের চাহিদা কমেছে। আবার জুলাই অভ্যুত্থানের পর অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক চলে গেছেন। অনেক প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ফলে এডিপি বাস্তবায়নের হারও কমে গেছে। অনেক দেশি ঠিকাদারও প্রকল্প এলাকায় এখনো ফিরে আসেননি। একইভাবে বৈদেশিক অর্থায়নের অনেক প্রকল্পে বিদেশি ঠিকাদার অনুপস্থিত রয়েছেন। এই বাস্তবতায় এডিপিতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাস্তবায়ন গতি কম থাকায় সরকারি তহবিলের চাহিদাও অনেক কমেছে। সাধারণত অন্যান্য অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সরকারি তহবিল থেকে চাহিদা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এডিপিতে যে পরিমাণ সিলিং বেঁধে দেওয়া হয়েছে, চাহিদা তার চেয়ে কম রয়েছে। তবে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে চলতি অর্থবছরে চাহিদার চেয়ে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে ৭০-৭৫ হাজার কোটি টাকা চাহিদা দিয়েছিল। কিন্তু সরকার বৈদেশিক অর্থায়ন ব্যবহারের গুরুত্ব দেওয়ায় বরাদ্দ বাড়িয়ে ৮১ হাজার কোটি টাকার সিলিং দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সচিব মামুন আল রশিদ বলেন, ‘প্রকল্প পরিচালকদের কখন কোন কাজ করতে হবে সেই পরিকল্পনা দেওয়া থাকে। কিন্তু সে অনুযায়ী তাঁরা সময়মতো কাজ করতে পারেন না। বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করায় অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি। প্রকল্প বাস্তবায়নে এটি প্রথম বাধা। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে, যাঁরা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন, সেই প্রকল্প পরিচালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। তৃতীয়ত, প্রকল্পে কেনাকাটার ক্ষেত্রেও তাঁদের কারিগরি জ্ঞান খুবই সীমিত।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রকল্পের কাটছাঁটে টাকা বাঁচে ঠিক। তবে সরকারি কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না হলে রাজস্ব আয় হয় না। আবার মানুষেরও কাজের সুযোগ কমে যায়। এগুলো আবার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। এদিকে সরকারকে ‘ট্রেড অফ’ করতে হবে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৫