ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

‘মাছি’ চাষে সাফল্য

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২২
‘মাছি’ চাষে সাফল্য

নীলফামারী: চার বন্ধু পেশায় শিক্ষক। গল্প-আড্ডায় ভিন্ন কিছু করার চিন্তাভাবনা করতে থাকেন।

সেই ভাবনা থেকেই চাকরির ফাঁকে অবসর সময়ে শুরু করেন ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ চাষ প্রকল্প।  

নীলফামারীর সৈয়দপুরে চার শিক্ষিত যুবকের এ প্রয়াস।  সেখান থেকে উৎপাদিত লার্ভা থেকে তৈরি হচ্ছে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ পোল্ট্রি খাবার।  

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, এ ধরনের উদ্যোগ এ অঞ্চলে নতুন। তারা সফল হলে অল্প সময়ের মধ্যে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

এ চার বন্ধ হলেন মো. সিরাজুল ইসলাম, মো. সাদেকুজ্জামান লাবু, মো. রেজাউল করিম রাজু ও মো. মাহাফুজার রহমান। তারা সবাই পেশায় শিক্ষক।  

অবসরে গল্প-আড্ডায় সময় কাটতো তাদের। শিক্ষকতার পাশাপাশি নতুন কিছু করার পরিকল্পনা থেকে চার বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন গরু-ছাগলের ছোট একটি খামার। কিন্তু তাতে তো আর নতুন কিছু করা হলো না। এর মধ্যে বন্ধু সিরাজুল ইসলাম অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পারেন, ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা দিয়ে তৈরি খাবার পাখি, হাঁস, মুরগি ও মাছকে খাওয়ানো হয় উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে। এ নিয়ে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে ধাপে ধাপে শুরু হয় ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা।  

অবশেষে সিরাজুল ইসলাম খোঁজ পান সৈয়দপুরের গোলাহাটে মোখলেছুর রহমান নামে একজন এ মাছির চাষ শুরু করেছেন। পরে সেখানে গিয়ে হাতে-কলমে এর উৎপাদন প্রক্রিয়া শিখে নেন তারা।

প্রশিক্ষণ শেষে সৈয়দপুরের বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের বাড়াইশাল পাড়ায় তাদের নিজস্ব খামারে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাইয়ের লার্ভা চাষ শুরু করেন।

উদ্যোক্তারা জানান, ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই পরিবেশের জন্য বন্ধু মাছি হিসেবে পরিচিত। গৃহস্থালি বর্জ্যই এদের প্রধান খাবার। ফলে স্বল্প খরচে এ মাছি দিয়ে পোল্ট্রি খাবার উৎপাদন করা সম্ভব। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পোল্ট্রি খাবারের দাম। ফলে হাঁস, মুরগি ও মাছ চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই চাষ করে পোল্ট্রি খামারিরা তাদের খরচ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারেন। এ মাছি দিয়ে উৎপাদিত পোল্ট্রি খাবার অনেক বেশি প্রোটিন সমৃদ্ধ। এ খাবারে পশুপাখির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি শারীরিকভাবেও দ্রুত বাড়বে।

তারা বলেন, আমরা ট্রায়াল চাষে সফল হয়েছি। এরই মধ্যে একটি ফিড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। আমাদের উৎপাদিত লার্ভা তারা মাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করছে। এ চাষের পরিধি বাড়াতে পারলে যেমন মানুষের কর্মস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, তেমনি আমাদের আয়ের নতুন একটি পথও তৈরি হবে।

সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল কুমার রায় বলছেন, দেশের কয়েকটি স্থানে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই চাষাবাদ শুরু হলেও এ অঞ্চলে এটি নতুন উদ্যোগ। লাভবান হলে এতে বেকার যুবকদের কর্মস্থান সৃষ্টি হবে। বর্তমানে এ খামার থেকে সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ কেজি লার্ভা উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি এখান থেকে বেরিয়ে আসছে জৈব সার। যা ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছেন সৈয়দপুর উপজেলা ও আশেপাশের কৃষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।