ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ফরিদপুরে ‘নকল বীজের’ ফাঁদে লোকসানের মুখে কৃষক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
ফরিদপুরে ‘নকল বীজের’ ফাঁদে লোকসানের মুখে কৃষক

ফরিদপুর: ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কোদালিয়া শহিদনগর ইউনিয়নের আটকাহনিয়া গ্রামের অধিকাংশ কৃষকরা জানিয়েছেন, অসাধু পেঁয়াজ বীজ ব্যবসায়ীদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে লোকসানের চিন্তায় দিন পার করছেন তারা।

তাদের অভিযোগ, ভাঙ্গা উপজেলার ‘আশরাফ সিড’ নামের এক বীজ ব্যবসায়ীর প্রলোভনে ও নগরকান্দা বাজারের কসমেটিকস ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মনিরের প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা।

ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, মনিরুজ্জামান ওরফে মনিরের দোকান থেকে ‘আশরাফ সিড’ কোম্পানির পেঁয়াজ বীজ সংগ্রহ করে বপণ করেন তারা। আর সেসব বীজ থেকে বের হওয়া বেশিরভাগ পেঁয়াজ গাছ হলুদ এবং লালবর্ণ ধারণ করে শুকিয়ে মরতে শুরু করেছে।  

মনিরের দোকান থেকে নেওয়া বীজকেই দায়ী করছেন ভুক্তভোগী এসব কৃষক।

উপজেলার আটকাহনিয়া গ্রামের কৃষক সানোয়ার শেখ বলেন, নগরকান্দা বাজারের বিসমিল্লাহ কসমেটিক্স ও বীজ ভান্ডারের ব্যবসায়ী মনিরের প্রলোভনে পড়ে ৫ কেজি বীজ কিনি। বীজ বপনের পর চারা গঁজানোর কিছুদিন পর হঠাৎ ক্ষেতের পেঁয়াজ গাছ হলুদ ও লালচে রঙ হয়ে শুকিয়ে মরতে শুরু করে। বিষয়টি দোকানদার মনিরকে জানালে তিনি আমাদের কোনো সঠিক সমাধান দিচ্ছেন না। আমার মতো এমন অনেক কৃষক এখন মহাবিপদে পড়েছে।

একই এলাকার কৃষক মো. উসমান বলেন, এনজিওর ঋণ ও ধারদেনার টাকায় মনিরের কাছ থেকে বীজ কিনেছিলাম। মনির আমাকে আশরাফের বীজ দিয়েছে। মনিরের সেই বীজ বুনে এখন আমি পথের ফকির হতে চলেছি। এত টাকা ঋণের বোঝা আমি কীভাবে শোধরাবো? আমি এই প্রতারক মনিরের কঠিন শাস্তি দাবি করছি।

আরেক কৃষক রুহুল আমিন বলেন,  মনিরের বীজ ছাড়াও আমি বিভিন্ন কোম্পানির বীজ রোপণ করেছি। সেখানে কোনো সমস্যা পাইনি। শুধু মনিরের দোকান থেকে কেনা বীজের চারাগুলো মরে হলুদ হয়ে যাচ্ছে। অধিক ফলনের প্রলোভন দেখিয়ে মনির আমাদের কাছে নিম্নমানের দুই নম্বর বীজ বেচেছে। আমরা এই প্রতারকের শাস্তি চাই।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নগরকান্দা বাজারের কসমেটিকস ব্যবসায়ী বিসমিল্লাহ স্টোরের মনিরুজ্জামান ওরফে মনির বলেন, চারা মরে যাওয়ার খবর শুনেছি। কিন্তু বীজ তো আমি তৈরি করি নাই। আশরাফ সিড কোম্পানি আমাকে যে বীজ দিয়েছে আমি সেটাই বিক্রি করেছি। কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিলে আশরাফ দেবে, আমি কিছু জানি না।

এসময় তার কাছে বীজ বিক্রয়ের ছাড়পত্র দেখতে চাইলে তিনি একটি মেয়াদোত্তীর্ণ ছাড়পত্র বের করেন।

এ ঘটনার বিস্তারিত জানতে বীজ উৎপাদনকারী  প্রতিষ্ঠান আশরাফ মিড কোম্পানির মালিক গিয়াসউদ্দিন শরিফের গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গা উপজেলার কৈডুবি সদরদী গ্রামে গেলে কথা হয় তার সাথে।

এসময় তিনি বলেন,  নগরকান্দার মনির আমার কাছে বাকিতে বীজ কিনতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তাকে বাকি দিইনি। তাই তিনি আমার কোম্পানির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। আমি এবছর প্রায় ৩৫ মণ বীজ বিক্রি করেছি, যার কিছু অংশ আমার নিজের খামারে উৎপাদিত এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত।  

এসময় তার বীজ কিনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিষয়টি তার ছেলে আশরাফের ওপর ছেড়ে দেন।

তিনি বলেন, দুই বছর আগে আমার কোম্পানির নাম ছিল ‘শরিফ সিড’। এখন নাম পরিবর্তন করে ছেলে আশরাফের নামে ‘আশরাফ সিড’ রাখা হয়েছে। ব্যবসা এখন ছেলেই দেখাশুনা করেন।  

এ বিষয়ে গিয়াসউদ্দিন শরিফের ছেলে আশরাফ শরিফকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, দুই পক্ষের লোকদের নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।  

সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান আশরাফ।

এ বিষয়ে নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলক কুমার ঘোষ বলেন, আমাদের কাছে কৃষকরা বীজের প্যাকেটসহ অভিযোগ করলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।