মাদারীপুর: দিন দিন সবজি চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছে তরুণরা। চাকরি বা ব্যবসায়ের পাশাপাশি নানা জাতের সবজি চাষ করছেন অনেকেই।
বর্তমানে সবজি চাষে জমি প্রস্তুতকরণে আধুনিক পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছে অনেকে। সম্প্রতি এসব সবজি চাষে মাটি তৈরিতে পলিথিনের ব্যবহার বাড়ছে। কৃষি বিজ্ঞানে এই পদ্ধতি ‘মালচিং’ নামে পরিচিত।
স্থানীয় কৃষকরা তাদের জমিতে সবজি চাষে অনেকদিন ধরেই এ পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছেন। এই পদ্ধতিতে উৎপাদন অনেক বেশি বলে জানান একাধিক তরুণ কৃষক।
সরেজমিনে শিবচরের সন্যাসীরচর, দত্তপাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি সবজি ক্ষেত ঘুরে আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদ দেখা গেছে। ফসল ফলানোর পাশাপাশি সমতল জমিতে নানান ধরনের শাক-সবজির চাষ করছেন কৃষকরা। কৃষিজমিতে বিভিন্ন সবজি ফলানোর জন্য উপযোগী মাটি তৈরি করতে জৈব সারের প্রয়োগ করছেন তারা। সমতল জমিতে সারিবদ্ধভাবে মাটি উঁচু করে পলিথিনের শিট বিছিয়ে দিচ্ছেন। এর মাঝে নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুযায়ী বীজ বপন করছেন। এসব জমিতে টমেটো, ফুলকপি, বাধাকপি, করলা, ঢেঁড়স, স্কোয়াশ, ব্রুকলি, নানা জাতের বেগুন, মরিচ, ক্যাপসিকাম ফলানো হচ্ছে। কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে পোকামাকড় থেকে ফসল রক্ষা করতে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক সব পদ্ধতি।
উপজেলার রাজারচর এলাকার সবজিচাষী সুমন আহমেদ। বেসরকারি চাকরির পাশাপাশি পাঁচ বছর আগে পরীক্ষামূলক শুরু করেছিলেন সবজি চাষ। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক পরিসরে নানা জাতের শাক-পাঁচ বছর আগের চাষাবাদ করছেন তিনি।
জানতে চাইলে সুমন আহমেদ বলেন, কৃষির প্রতি তীব্র টান থেকেই শুরু করেছি। এখন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছি। শিবচরে বিদেশি সবজির মধ্যে ব্রুকোলি, স্কোয়াশ, রেড ক্যাভেজ প্রথম চাষ করি। প্রথম থেকেই ভালো ফলন হচ্ছে, এখন পরিসর বাড়িয়েছি। চাষাবাদে আধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটাচ্ছি। ফুলকপি, বাঁধাকপি, স্কোয়াশ, ব্রুকোলি, টমেটো, বেগুন, করলার চাষ করছি। জমি তৈরির ক্ষেত্রে পলিথিন পেপার ব্যবহার করছি শুরু থেকেই। এ পদ্ধতিতে ফলন ভালো হয়।
উপজেলার সন্যাসীরচর মোল্লাকান্দি এলাকার কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে মালচিং পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে সুফল পেয়েছি। চারা রোপণের পর থেকে শুধুমাত্র দেখভাল করা ছাড়া আর তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। ফলন ভালো হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জমিতে মাটি কিছুটা উঁচু করে তার ওপর পলিথিনের শিট বিছিয়ে দিতে হয়। এটাকে মালচিং পদ্ধতি বলা হয়। এ পদ্ধতিতে মাটির তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে। এতে করে মাটিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ খুবই কম হয়। জমির মাঝখানে দুই পাশ থেকে মাটি কেটে পরিমাণ মতো উঁচু করে মাটির সঙ্গে সার মিশিয়ে বেড তৈরি করা হয়। তৈরি বেডগুলো মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। প্লাস্টিকের মালচিং পেপারের কালো রঙের দিকটা থাকে নিচের দিকে আর রূপালি রঙের দিকটা থাকে ওপরের দিকে অর্থাৎ সূর্যের দিকে। এ পদ্ধতি সূর্যের আলো ও তাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে মাটিকে রাখে ফসলের উপযোগী।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র আরও জানিয়েছে, শিবচরে ৪২ জন কৃষক এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। উপজেলায় মালচিং শিট পদ্ধতিতে এ মৌসুমে ৬ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রথমদিকে জমি তৈরিতে খরচ কিছুটা বেশি হলেও পরবর্তীতে খরচ বেশ কম হয়। তাছাড়া ফসলের মধ্যে আগাছা হয় না। বারবার সার দেওয়ার ঝামেলাও নেই। পানি সেচের ঝামেলা নেই। পলিথিন শিট আদ্রতা ধরে রাখে দীর্ঘক্ষণ। সবজি চাষের জন্য এ পদ্ধতিতে ইদানিং ঝুঁকছেন কৃষকরা।
শিবচর উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, মালচিং অত্যন্ত সহজলভ্য, লাভজনক ও বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি অন্যতম পদ্ধতি। ফসলের ক্ষেতে আর্দ্রতা সংরক্ষণে মালচিং বিশেষভাবে উপকারী। মালচিং শিট ব্যবহারের ফলে মাটির রসের বাষ্পায়ন প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে মাটির উপরিতল থেকে যে পরিমাণ পানি বাষ্পীভূত হয়, তা ওই প্লাস্টিকের আবরণে বাধা পেয়ে ঘনীভূত হয়। যা বিন্দু বিন্দু জলকণায় পরিণত হয়ে আবার মাটিতেই ফিরে আসে। এতে জমিতে দুটি সেচ পর্বের ব্যবধান বাড়ানো সম্ভব হয়। ফলে সেচ কম লাগে অর্থাৎ সেচের খরচ কম হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, মালচিং পদ্ধতি চাষাবাদ একটি আধুনিক পদ্ধতি। সবুজ কৃষির জন্য ওই পদ্ধতিগুলো অত্যন্ত কার্যকর। এতে উৎপাদন খরচ কম হয়। আমরা এ পদ্ধতিটি কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি।
বাংলাদেশ সময়:১৫০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৩
এমএমজেড