ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ফলন ভালো হলেও পানির জন্য মাথায় হাত পাটচাষিদের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৩
ফলন ভালো হলেও পানির জন্য মাথায় হাত পাটচাষিদের ছবি: বাংলানিউজ

মাদারীপুর: পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা নেই। খাল-বিল, পুকুর বা ডোবা-নালা শুকিয়ে আছে।

কোথাও কোথাও পানি থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। তাতে পাটের জাগ দেওয়া সম্ভব না। আর এতে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছে মাদারীপুর জেলার শিবচরের বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা। গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও তাতে পর্যাপ্ত পানি জমছে না জলাশয়ে।

সরেজমিনে শিবচরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ডোবা-নালার সামান্য পানিতে পাট জাগ দেওয়ার প্রতিযোগিতা। কোথাও কোথাও অল্প পানিতে পাট জাগ দেওয়ার পর তাও শুকিয়ে গেছে। কাদামাটিতে পড়ে আছে পাটের আঁটি। অনেকে আবার পাট গাছ ক্ষেত থেকে দূরবর্তী স্থানে নদী বা জলাশয়ে নিয়ে যাচ্ছেন জাগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে। এতে করে পরিবহন খরচও বেড়েছে কৃষকদের।

এছাড়া পর্যাপ্ত পানিতে জাগ না দেওয়ার ফলে পাটের রঙ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। এতে করে পাটের মান ও দাম উভয়ই কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা চাষিদের। তারা বলছেন, পর্যাপ্ত ফলন হলেও পানি সংকটের কারণে লাভের পরিবর্তে লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের। তাদের দাবি, পাট এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জেলার বহেরাতলা এলাকার কৃষক মো. কুদ্দুস মিয়া বলেন, এ সময় পানিতে চারপাশ ভরে থাকার কথা। অথচ পানি নাই কোথাও। পুকুরে-খালে সামান্য পানি থাকলেও তাতে কয়জনই বা পাট জাগ দেবে। বৃষ্টিও নাই। মাঝে মধ্যে একটু পড়ে, কিন্তু তাতে মাটিই ভেজে না! পাট এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কুতুবপুর এলাকার একাধিক পাটচাষি জানান, একদিকে বৃষ্টি নাই। অন্যদিকে পদ্মা থেকে খাল-বিলে পানি আসে না। গত ৭-৮ বছর ধরেই এই এলাকার জলাশয়ে পানির সংকট হচ্ছে, যা চলতি বছর প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই এলাকার জমিতে প্রচুর পাট জন্মেছে; কিন্তু পানির অভাবে যথাযথ ভাবে পাট জাগ দেওয়া যাচ্ছে না।

তারা জানান, পদ্মাপাড়ের কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে বাংলাবাজার ঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের কারণে পদ্মার পানি খাল-বিলে ঢুকতে পারছে না। বাঁধের কয়েকটি স্থানে ছোট আকারের পাইপ দেওয়া থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম পানি আসে। এই মৌসুমে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে যেমন বিপাকে রয়েছে কৃষকেরা, তেমনি পানির অভাবে অন্যান্য ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়াসহ উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি।

মো. আলতাফ হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, কাদাপানিতে গাছ জাগ দিয়েছি। এখন পাট পরিষ্কার করতে নদীতে আসতে হয়েছে। এ বছর বৃষ্টি নাই, বর্ষার পানিও নাই। বিঘার পর বিঘা জমির পাট পচানোর জায়গা নাই!

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরে চলতি বছর ৩৭ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাটের ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। গতবারের তুলনায় দুই হাজার ৫০০ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি পাটচাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা দিগ্ববিজয় হাজরা বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও পাটের ভালো ফলন হয়েছে। তবে পানি সংকটে চাষিরা বিপাকে আছে বলে খবর পাচ্ছি। দাম ঠিক থাকলে কৃষকেরা লাভবান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।