বগুড়া: বাজারে আলুর দাম কমছে না, বরং বাড়ছে। আর এরই মধ্যে অধিক লাভের আশায় বগুড়ার ১২টি উপজেলায় কমবেশি আগাম আলু চাষে মাঠে নেমেছেন চাষিরা।
জেলাটিতে এখনও রোপা ও আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষ না হলেও অতিরিক্ত মুনাফার আশায় চাষিরা তাদের সবজি আবাদি জমিগুলো ফেলে না রেখে আগেভাগেই আলু চাষ শুরু করে দিয়েছেন।
রোববার (২২ অক্টোবর) বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অধিক লাভের আশায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার উঁচু জমিগুলোতে আলু চাষ শুরু করেছেন চাষিরা।
আগাম জাতের অ্যাস্টেরিক ও কার্টিনাল আলু রোপণের ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মাথায় তা বিক্রির উপযোগী হয়। কিছুটা অধিক পুষ্টিকর ও তুলনামূলক কম সময় লাগায় এ আলু চাষ করে লাভবান হওয়া যায় সহজেই। তাই যারা সঠিকভাবে জমিতে যত্ন করতে পারবেন, তাদের লোকসান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই গতবারের মতো এবারও আগাম আলু চাষে নেমেছেন চাষিরা। আলু চাষের জন্য বেলে ও দোঁ-আশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী।
বগুড়ার সদর, শাজাহানপুর, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম সবজিখ্যাত হিসেবে পরিচিত। এসব এলাকার চাষিরা কখনও জমি ফেলে রাখেন না। আর তাই মৌসুমি বিভিন্ন সবজি আবাদের পর তারা এবারও আগাম আলু চাষে ঝুঁকেছেন। আগাম জাতের অ্যাস্টেরিক ও কার্টিনাল আলুতে অতিরিক্ত মুনাফা হওয়ায় চাষিরা বেশ আকৃষ্ট হয়েছেন। ইতোমধ্যে জেলার আলু চাষিরা প্রস্তুতকৃত জমিতে আলুর বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চাষিদের কেউ কেউ তাদের জমি তৈরি করে অ্যাস্টেরিক ও কার্টিনাল জাতের বীজ আলু মাঠে নিয়ে আসছেন ও কেটে প্রস্তুত করছেন। এরপর সেই আলু জমিতে রোপণ করা হচ্ছে।
জেলার সদর, শিবগঞ্জ ও শাজাহানপুর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখন বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কাঁচা-পাকা ধান শোভা পাচ্ছে। আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই এসব ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হবে। ধান মাড়াই শেষ হলে জেলার চাষিরা একযোগে তাদের বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ করবেন। এদিকে ফাঁকা জমি চাষের জন্য প্রস্তুত করতে একদিকে চাষিরা হাল দিচ্ছেন, আবার আলগা মাটি সমান করতে জমিতে দিচ্ছেন মই। অন্যদিকে আলু বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কেউ কেউ।
বগুড়া সদর ও শাজাহানপুর উপজেলার সেলিম মিয়া, তরিকুল হাসান, কোব্বাত আলীসহ একাধিক চাষি বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েক বছর ভালো দাম পাওয়ায় এখন আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন তারা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলুর বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা। কৃষি বিভাগ থেকে আলু চাষের প্রশিক্ষণ ও উৎপাদিত আলু সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করলে তারা বেশি লাভবান হওয়ার পাশাপাশি আলু চাষে আরও আগ্রহী হবেন বলেও জানান চাষিরা।
তারা জানান, চলতি বছর তাদের দ্বিগুণ দামে আলুর বীজ কিনতে হচ্ছে। বর্তমানে বাজার থেকে তারা লাল পাকরি আলুর বীজ কিনছেন প্রতিকেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় আর কার্ডিনাল জাতের বীজ প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। তবুও সবমিলিয়ে আলুতে অধিক লাভের আশায় বুক বেধেছেন তারা। কঠোর পরিশ্রম আর অর্থ ব্যয় শেষে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোই তাদের স্বপ্ন।
নন্দীগ্রাম উপজেলার শাহ-আলম, ফজলে রাব্বি, তইমুর রহমানসহ একাধিক চাষি বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর অতিরিক্ত মুনাফার লক্ষ্যে তাদের মতো অনেকেই আগাম আলু চাষ করেন। তবে চলতি বছর আলুর বীজের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। এতে শঙ্কিত তারা। বীজ কিনতে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন বলেও জানান চাষিরা।
শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক মনসুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আগাম মৌসুমে আলুতে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি। এবার তিনি আলু চাষে মনোযোগ দিয়েছেন। ফলন ভালো হলে অধিক মুনাফাও হবে। গতবছর তিনি সাড়ে ১০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। এবছর দাম বেশি থাকায় ১৪ বিঘা জমিতে আলুর চাষ শুরু করেছেন। তবে বীজের দাম বেশি থাকায় এবং শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় গতবারের চেয়ে এবার আলু চাষের খরচ বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
বগুড়া সদর উপজেলার কালিবালা এলাকার কাশেম মোল্লা, দিদার হোসেন নামে কয়েকজন শ্রমিক বাংলানিউজকে জানান, এলাকার সামসাদ হোসেনের প্রায় ১০ বিঘা জমিতে অ্যাস্টেরিক জাতের আলুর চাষ করছেন তারা। তারা দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। এজন্য দিন শেষে তারা পাচ্ছেন ৫০০-৬০০ টাকা। সেসঙ্গে একবেলা খাবারও রয়েছে। এ আয় দিয়ে চলে তাদের সংসার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, শুকনো মাটির জমি আলু চাষের জন্য উপযোগী। বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় তুলনামূলক উঁচু জমিগুলোতে আলু চাষ শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত লাভের আশায় অনেকেই তাদের জমিগুলোতে আলু চাষ শুরু করেছেন। রোপা ও আমন ধান কাটার পর এসব জমিতে একযোগে আলুর আবাদ শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২৩
কেইউএ/আরআইএস