বগুড়া: বগুড়ায় রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে এ জেলার কৃষক। প্রতিবছর রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি চাষ করে কম-বেশি লাভবান হওয়া যায়।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) জেলার সবজিখ্যাত কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে দেখা গেছে, রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি নিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন কর্মব্যস্ততা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানান, জেলার কিছু কিছু এলাকায় এখনও খরিপ-১ মৌসুমের কিছু সবজি মাঠে রয়েছে। বর্তমানে রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে এ জেলার কৃষক। মূলত আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে চাষাবাদকে আগাম চাষ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত চাষাবাদকে রবি মৌসুমের চাষাবাদ বলা হয়।
এ জেলার কৃষক শীতকালীন আগাম সবজি চাষ আগেই শেষ করেছেন। এখন যেসব জমি ফাঁকা হচ্ছে সেগুলোতে নতুন করে সবজি চাষে আবারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সদর, শাজাহানপুর, শিবগঞ্জ, শেরপুর সবজিখ্যাত উপজেলা হিসেবে পরিচিত। এসব উপজেলায় বছরের বারোমাসই রকমারি সবজি ফলান এখনকার কৃষক। এরমধ্যে শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলায় সবজি চাষের পাশাপাশি বছরজুড়ে বিভিন্ন জাতের সবজি চারা তৈরি করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, শীতকালীন সবজিতে মাঠে সবুজের সমারোহ বিরাজ করছে। কেউ ক্ষেতে সবজি তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। কেউবা জমির আগাছা পরিচর্যা করছেন। কেউ কেউ আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন। সব মিলিয়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, মূলা, করলা, লাউ, ঢেঁড়স, গাজর, পটল, বেগুন, শিম, টমেটো, লাল ও পালংশাকসহ বিভিন্ন জাতের সবজিতে ভরে আছে মাঠ।
সদর উপজেলার লাহেড়ীপাড়া, শাখারিয়া, পীরগাছা এলাকার ইলিয়াস হোসেন, মোজাম শেখ, মিল্লাত মিলুসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি আবাদে প্রায় তিনভাগে চাষে নামেন কৃষকরা। অনেকেই শীতের প্রথম ভাগে সবজি বাজারে তুলতে মাঠে নামেন। কারণ এই সময়টাতে সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। দ্বিতীয় ভাগে শীতের মাঝামাঝিতে সবজি হাটে-বাজারে তোলার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করেন কৃষকরা। আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে এ সময়টাতে সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। তবে শেষভাগে উৎপাদিত সবজির ভালো দাম পাওয়া নিয়ে অনেকটা অনিরাপদ থাকে।
শাজাহানপুর উপজেলার বড়পাথার এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, শীতকালীন সবজি আবাদে আবহাওয়ার একটু হেরফের হলে সবজির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাড়তি বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশা হলে ফসলের ক্ষতি হয়। শীতকালীন সবজি চাষ করতে বেশি জমির প্রয়োজন হয় না। তুলনামূলক অল্প সময়ে তা বাজারজাত করা যায়। নিজেদের চাহিদা মেটানোসহ হাট ও বাজারে বিকিকিনি করা যায় সবজি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় এখন রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। তবে কিছু কিছু এলাকায় এখনো খরিপ-১ মৌসুমের কিছু সবজি মাঠে রয়েছে। মূলত আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে চাষাবাদকে আগাম চাষ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে এবং ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত চাষাবাদকে রবি মৌসুমের চাষাবাদ বলা হয়।
তিনি বলেন, সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনে এ জেলার চাষিরা নিজেরাই অনেকটা অভিজ্ঞ সম্পন্ন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও নিয়মিতভাবে চাষিদের প্রয়োজনী পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিবছর শীতের সবজি নিয়ে বগুড়া জেলার কৃষকরা বরাবরই ব্যস্ত থাকেন। আবহাওয়া অনুকূলে ও বাজার দর ভালো থাকলে শীতকালীন সবজি চাষে বেশ লাভবান হওয়া যায়।
জেলায় এই পর্যন্ত গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে রবি মৌসুমের শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। গেল বছর পুরো রবি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১২ হাজার ৮১৩ হেক্টর জমিতে রকমারি সবজি চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না মন্তব্য ওই কর্মকর্তার।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২৩
কেইউএ/এএটি