রাঙামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটির পাহাড়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা জুম চাষ। জুমে উৎপাদিত ফসলের ওপর নির্ভর করে এসব জনগোষ্ঠীর তাদের সংসার চলে।
তবে বেশ কয়েক বছর ধরে অতিবৃষ্টি, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ধানের উৎপাদন কমে যাওয়া, ধানের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের অভাব এবং উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে আগের মতো জুম পদ্ধতিতে সোনালি ফসল ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা।
ধানের বিকল্প হিসেবে কৃষকরা তাদের জুমে ঠাঁই দিচ্ছে সবজিসহ অন্যান্য ফলজ বাগানের। বর্তমান সময়ের মধ্যে কম পরিশ্রমে লাভজনক সবজির মধ্যে- ঢ্যাঁড়স, বেগুন, কাচামরিচ, টকপাতা, হলুদ, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, লাউ, পাহাড়ি আলু এবং দীর্ঘমেয়াদি ফলজ বাগানের মধ্যে রাম্বুটান, ড্রাগন, আপেল কূল, পেঁপে, আমসহ অন্যান্য দামি ফলন চাষে আগ্রহ বাড়াচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকরা।
রাঙামাটি সদর উপজেলার মগাবান ইউনিয়নের বড়াদম এলাকার কৃষক শূলাব্রত চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, এ মৌসুমে ৮০ শতক জমিতে আউশ জাতের ব্রি-ধান রোপণ করেছি। তবে তুলনামূলক ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। যে কারণে ধান রোপণ করতে যে শ্রম ও অর্থ খরচ হয়েছে সেই পরিমাণ অর্থ তুলতে পারিনি।
কৃষক আরও বলেন, বেশ কয়েক বছর বৈরী আবহাওয়া, শ্রমিক না পাওয়াসহ নানাবিধ সমস্যা থাকায় ধান চাষ করা কমিয়ে দিয়েছি।
কৃষক শূলাব্রত চাকমা বলেন, আমি এখন ধানের ওপর নির্ভরশীল নই। ধানের পাশাপাশি সাথি ফসল হিসেবে ঢ্যাঁড়স, বেগুন, টকপাতা, মরিচ, হুলুদের চাষ করেছি। এ মৌসুমে প্রথম ধাপে ৪০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছি। আশা করছি উৎপাদিত বেগুন থেকে আরও লাখ টাকা আয় করতে পারবো।
পাশাপাশি ঢ্যাঁড়স, মরিচ, টকপাতা এবং হলুদ বিক্রি করে আরও লাখ দুয়েক টাকা আয় করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
কৃষক শূলাব্রত চাকমার স্ত্রী মিনু চাকমা বলেন, কৃষিকাজ থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলেটা কলেজে পড়ে এবং মেঝ মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ বছর হলে স্কুলে ভর্তি করাবো।
রাঙামাটি জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এইবার জেলায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ করা হয়েছিল। ধান রোপণের শুরুতে বৃষ্টি ছিল না। পরে অতিবৃষ্টিতে জুমের ধানের ভালো ফলন হয়নি। এই মৌসুমে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক ফলন পাওয়া গেছে। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। তবে সাথি ফসল পাহাড়ি সবজি এবং হলুদের ভালো ফলন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি সদর উপজেলার বড়াদম ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, কৃষির উন্নয়নে সরকার আন্তরিক। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সচল করতে সরকারের নির্দেশনা মেনে কৃষকদের নিয়ে কাজ করছি।
সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, এ এলাকায় আমরা প্রতিজন কৃষকদের ২০ কেজি করে সার, কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান করেছি। এর মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজামান বাংলানিউজকে বলেন, এবার জুম ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। মূলত অতিবৃষ্টি এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে, ধান উৎপাদন কম হলেও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা বেশি আয় করতে পারবে।
কৃষকরা বলছেন, শুধু আবহাওয়া নয় মূলত জুম ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে তারা জুমে ধানের বিকল্প অন্যান্য ফসলাদি চাষ শুরু করেছেন। জুমে উৎপাদিত এসব ফসলে তাদের আয় ধানের চেয়ে বেশি বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২৩
এসএম