ঢাকা, বুধবার, ২৭ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

আগাম জাতের আলুর বাম্পার ফলন, দামে খুশি চাষিরা

শাহিদুল ইসলাম সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩
আগাম জাতের আলুর বাম্পার ফলন, দামে খুশি চাষিরা

জয়পুরহাট: আগাম জাতের আলু চাষ করে বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি আশাতীত দাম পেয়ে এবার জয়পুরহাটের আলু চাষিরা বেজায় খুশি।

চলতি মৌসুমে আলু বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, মজুরি, সেচ সবকিছু মিলিয়ে আলু উৎপাদনে খরচ বেড়েছে আলু চাষিদের। এবার ভালো দাম পাওয়ায় লোকসানের মুখে না পড়ায় কৃষকরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছেন।  

জানা গেছে, প্রতি বিঘায় আলু উৎপাদনের খরচ বাদ দিয়ে এক বিঘা জমিতে কৃষকের লাভ হচ্ছে গড়ে ২৫-৩০ হাজার টাকা। জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে। বাজারে বেশি আলু আমদানি হলে এ দাম থাকবে না। কৃষকরা বলছেন, প্রথম দিকে দাম ভালো পাওয়া যায়।

জয়পুরহাট জেলায় দুই ধরনের জমিতে আলু চাষ হয়ে থাকে। আগাম জাতের আলু চাষ হয় জেলার বিভিন্ন গ্রামের ভিটে মাটির জমিতে। আর আমন ধান কাটার পর ব্যাপক হারে চাষ হয় এঁটেল ও দো-আঁশ মাটির জমিতে। গত অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আগাম জাতের আলু বীজ রোপণ মৌসুম শুরু হয়। ৬৫-৭০ দিনে আগাম জাতের এ আলুর ফলন হয় ৪৫-৫০ মণ প্রতি বিঘা জমিতে।  

তারপর জমি থেকে আলু তুলে হাটে বাজারে বিক্রি শুরু হয় আগাম আলু। আমন ধান কেটে নমলা জাতের (পরে লাগানো) আলুর উৎপাদন বিঘা প্রতি ৮০ মণ থেকে ১০০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। দাম ভালো পাওয়ায় আগাম জাতের আলুতে কৃষককে লোকসানের মুখে পড়তে হয় না বললেই চলে।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলার পলি এলাকার সদর উপজেলার সাহাপুর, পালী, ভাদসা, মূহরুল, জামালপুর, দাদড়া, ধুলাতর, চান্দা, ক্ষেতলালের মহব্বতপুর, জিয়াপুর, আমিড়া, আক্কেলপুর উপজেলার পালসা, মাতাপুর, ইসমাইলপুর, রুকিন্দ্রীপুর, গভরপুর এবং পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম অংশে ভিটে মাটিতে আগাম জাতের আলু আবাদ হয়ে থাকে।

এসব গ্রামের আগাম জাতের আলু চাষ করেছেন, এমন একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আশ্বিন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এ আলু বীজ রোপণ করা হয়। আলুর জমি পরিচর্যা শেষে ৬০-৭০ দিন পর আলু তুলে বিক্রি শুরু হয়। নতুন এ আলুর চাহিদাও বেশ ভালো। কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ মৌসুমে আলু উৎপাদনের খরচ বেড়েছে অনেক বেশি। এখন পর্যন্ত ভালো দাম পাওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে না তাদের।

জয়পুরহাট শহরের নতুনহাটে আগাম জাতের লাল আলু বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন সদর উপজেলার ভাদসা গ্রামের কৃষক জামিল হোসেন। তিনি বলেন, আলুর ফলন এবার একটু কম। রোমনা জাতের আলু এক বিঘায় তিনি ৩২ মণ ফলন পেয়েছেন। ৩০ হাজার টাকা আলু চাষে খরচ হয়েছে। আজ হাটে দুই হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে পাঁচ মণ আলু বিক্রি করলেন। খরচ বাদে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ হবে।  

একই গ্রামের আলম হোসেন ক্যারেজ জাতের আলু দুই হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেন। লাল জাতের আলুর ছোট বড় প্রকারভেদে দুই হাজার ২০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ফলন একটু কম। তারপরও ভালো লাভ হবে। দিন দিন বাজারে আমদানি বাড়বে। তখন এ দাম থাকবে না।

বাজারে আলুর জাত ও ছোট বড় আলু হিসেবে খুচরা ৩০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শহরের মাদরাসা পাড়া এলাকার আনিছুজ্জামান কাঁচাবাজার করতে এসে জানালেন কৃষক ভালো দাম পাচ্ছে এটা ঠিক। কিন্তু আমরা বাজারে এসে দাম নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছি।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেশি, উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু কৃষক দামও ভালো পাচ্ছেন। এবার আলুতে লোকসান হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।