ঢাকা, শুক্রবার, ১০ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১৯ মহররম ১৪৪৬

কৃষি

‘বায়ার’র ধানের বীজে আশানুরূপ গজাচ্ছে না চারা, দুশ্চিন্তায় কৃষক

মো. জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৪
‘বায়ার’র ধানের বীজে আশানুরূপ গজাচ্ছে না চারা, দুশ্চিন্তায় কৃষক

কুষ্টিয়া: জেলার ছয় উপজেলার অসংখ্য কৃষক বায়ার কোম্পানির ‘ধানী গোল্ড’ হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ কিনে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

জানা গেছে, ভালো ফলনের আশায় চড়া দামে ‘ধানী গোল্ড’ বীজ কিনেছিলেন কৃষকেরা।

এ বীজ থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ চারা গজাচ্ছে না। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। ধানের চারাও রোগাটে হয়েছে। এতে ধানের ফলন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকেরা ক্ষতিপূরণ ও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

তবে বায়ার বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার এরিয়া ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ধানী গোল্ড’ বীজের মান খুবই ভালো। কিন্তু এবার অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে হয়ত চারা গজায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের কেউ অভিযোগ দিলে তাদের ক্রয়ের সমপরিমাণ বীজ পুনরায় দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে কিছুই জানেন না জেলা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ পেলে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কুমারখালী উপজেলার কৃষক সোহেল রানা বলেন, কুষ্টিয়া কলেজ মোড় থেকে চার ব্যাগ (চার কেজি) ‘ধানী গোল্ড’ ধানের বীজ কিনেছিলাম। প্রতি কেজি বীজের দাম ৪৩৫ টাকা। আমি ধানী গোল্ড কোম্পানির নির্দেশনা মতো সবকিছু সুন্দরভাবে করেছি। কিন্তু বীজের অর্ধেক পরিমাণ চারা বের হয়েছে আর অর্ধেক বের হয়নি। আমি গরীব মানুষ। ধানী গোল্ড বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমি ক্ষতিপূরণ চাই। এবং এই সমস্যার সমাধান চাই।  

কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শিংদহ গ্রামের জিন্দার আলীর ছেলে কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ১৫ দিন আগে কুষ্টিয়া কলেজ মোড় থেকে ১০ কেজি ধানী গোল্ড বীজ কিনেছি। প্রতি কেজির দাম নিয়েছিল ৪৩৫ টাকা। অর্ধেক বীজই নষ্ট। অর্ধেক বীজ থেকে চারা হয়েছে আর অর্ধেক নষ্ট। কোম্পানির নির্দেশনা মেনে প্রথমে পানিতে ধান বীজ ভিজিয়ে রাখি। পরে পানি থেকে তুলে চারা গজানোর জন্য জাগ দেই। কিন্তু ওই ধান বীজ থেকে অর্ধেক চারা গজিয়েছে আর অর্ধেক নষ্ট হয়ে গেছে।

কৃষি উদ্যোক্তা মনিরুল ইসলাম জানান, ১০ বিঘা জমিতে ধান রোপণের জন্য ২০ কেজি ধানী গোল্ড বীজ কিনেছি। কিন্তু ৩০ শতাংশ বীজ থেকে চারা হয়নি। ফলে আমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত হয়েছি। ধানের চারাগুলোও দুর্বল ও রোগাটে। এ নিয়ে আমরা টেনশনে আছি। ধান লাগানোর জন্য ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়েছি। কিন্তু বীজ থেকে চারা না হওয়ায় তিন থেকে চার বিঘা জমিতে ধান লাগাতে পারবো না। ধানী গোল্ড বীজ কিনে আমার মতো অসংখ্য কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা এ সমস্যার সমাধান চাই। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।

মনিরুল, সাইদুল, সোহেল রানার মতো একইভাবে বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলার অসংখ্য কৃষক।

ভাদালিয়া বাজারের বীজ ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নান জানান, ধানী গোল্ড ধানের বীজ থেকে ঠিকমতো চারা হচ্ছে না। ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বা তারও বেশি বীজ থেকে চারা গজাচ্ছে না। ৫-৬ জন কৃষক আমার দোকান থেকে বীজ কিনেছিল। তাদের এমন সমস্যা হওয়ায় ধানী গোল্ড ধানের বীজ বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছি।

আব্দুল হান্নানের মতো অনেক বীজ ব্যবসায়ী ধানী গোল্ড ধানের বীজ বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারাও এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সৌতম কুমার শীল, কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসার দেবাশীষ কুমার দাসসহ কৃষি কর্মকর্তারাও বিষয়টি জানেন না। তারা খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, এখনও কোনো কৃষক অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি আমরা জানি না। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার একেএম কামরুজ্জামান জানান, বিষয়টি আমি জানতাম না। আগামীকালই ওই বীজ সংগ্রহ করবো এবং ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করবো। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।