গাজীপুর: জলাবদ্ধতা সহনশীল, স্বল্পজীবনকাল ও বড় দানা বিশিষ্ট উচ্চফলনশীল সয়াবিনের জাত উদ্ভাবন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) একদল গবেষক।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং নোয়াখালী ও লক্ষীপুর থেকে প্রায় ২০০ জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে ২০০৬ সাল থেকেই বিভিন্ন আঙ্গিকে সয়াবিন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বশেমুরকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগ।
উপকূলীয় অঞ্চলে সয়াবিনের পরিপক্বতার প্রারম্ভেই সাইক্লোনের জন্য আকস্মিক অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়। ফলে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এবং সয়াবিনের প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। সেই জন্যই উপকূলীয় অঞ্চলের সয়াবিন চাষিদের দীর্ঘদিন ধরে স্বল্পজীবনকাল ও জলাবদ্ধতা সহনশীল জাতের চাহিদা ছিল। সে লক্ষেই বশেমুরকৃবি এ বিষয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সংগৃহীত ইউ২৩৩৪ জার্মপ্লাজমটি উচ্চ ফলনের পাশাপাশি সাত দিন ধরে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে।
জাতটি উদ্ভাবন টিমের প্রধান প্রফেসর ড. আব্দুল করিম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে কৃষকপর্যায়ে এর সঠিকতা যাচাই করার জন্য নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় জাতটির মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সম্পৃক্ত করে রবি ও খরিফ দুই মৌসুমেই চাষ করা হয়।
দীর্ঘমেয়াদি এ গবেষণায় আর্থিক সহযোগিতা করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বশেমুরকৃবির গবেষণা উইং। কৃষকের মাঠ পর্যায়ে গবেষণায় বিভিন্ন আঙ্গিকে সহযোগিতা করেছে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া নামে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট কৃষক ও গবেষকদের মতামতের ভিত্তিতে ইউ২৩৩৪ জার্মপ্লাজমটি বিইউ সয়াবিন-৫ নামে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগে নিবন্ধন করা হয়। বিভিন্ন উপজেলায় জাতটির ফলন পাওয়া গেছে ৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। লক্ষ্যণীয় যে, দেশের অন্যান্য জাতের জীবনকাল যেখানে ১০০-১১০ দিন সেখানে বিইউ সয়াবিন-৫ মৌসুম ভেদে ৭৫-৮৫ দিনেই পরিপক্ব হয়। ফলে সয়াবিনের ফল পাকার প্রাক্কালে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে আকস্মিক জলাবদ্ধতা থেকে জাতটি রক্ষা পাবে। বিইউ সয়াবিন-৫ এর ১০০০-বীজের ওজন ২৮৫ গ্রাম, যা বাংলাদেশের বিদ্যমান যেকোনো জাতের চেয়ে বেশি। জাতটির প্রোটিনের পরিমাণ ৩৮ শতাংশ এবং তেল ২০ শতাংশ। বাংলাদেশে এখনও পশু ও মাছের খাদ্য হিসেবেই মূলত সয়াবিন ব্যবহৃত হয়। তবে ইদানিং বিভিন্ন স্ন্যাকস, সয়ামিট বল ও সয়ামিল্ক হিসেবে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সয়াবিনে প্রোটিন বা আমিষের পরিমান ৩০-৫৫ শতাংশ যা অন্যান্য যেকোনো ফসল, যেমন ডাল, তেল কিংবা দানাদার শস্যের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া সয়াবিনে ১৮-২০ শতাংশ তেল, ভিটামিন এ, বি, সি, কে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ পদার্থ থাকে। এন্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবে ক্যানসারের ঝুঁকি, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমানোসহ হৃদরোগ, অবসাদ এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে শ্লথ করাসহ বহুবিধ রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এতে বিদ্যমান ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উপযোগী। কাজেই বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক পুষ্টি সমস্যা সমাধানের জন্য সয়াবিনের ব্যবহার বৃদ্ধি একান্ত আবশ্যক।
উল্লেখ্য- ২০১৪ সালে বশেমুরকৃবির কৃষিতত্ত্ব বিভাগ থেকে বিইউ সয়াবিন-১ নামে খর্বাকৃতি ও অপেক্ষাকৃত কম সময়ে পরিপক্ব উচ্চ ফলনশীল এবং ২০২০ সালে বিইউ সয়াবিন-২ নামে উচ্চ ফলনশীল খরা সহিষ্ণু, ২০২৩ সালে বিইউ সয়াবিন-৩ এবং বিইউ সয়াবিন-৪ নামে ২টি লবণ সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোনের কারণে হঠাৎ জলাবদ্ধ সৃষ্ট জমিতে সয়াবিনের উৎপাদন বাড়াতে নতুন জাত বিইউ সয়াবিন-৫ বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০২৪
আরএস/এএটি