ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

গোপালনগর বীজগ্রাম এখন কৃষকদের আস্থারস্থল 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৯
গোপালনগর বীজগ্রাম এখন কৃষকদের আস্থারস্থল  সংরক্ষণ করা বীজ। ছবি: বাংলানিউজ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি)-২ এর আওতায় কৃষক সমিতি গঠনের মাধ্যমে মানসম্মত বীজ সংগ্রহের পর তা নিজেদের মধ্যে বিতরণের পাশাপাশি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে উদ্বৃত্ত বীজ গ্রামের সমিতি বহির্ভূত অন্যান্য কৃষকের মধ্যেও ন্যায্যমূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। যার মাধ্যমে সমিতির আয় বাড়বে।

জেলার সব উপজেলায় এ ধরনের সমিতির মাধ্যমে কৃষকদের রোগমুক্ত ও উচ্চ ফলনশীল বীজ সরবরাহ করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রথম বীজগ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে শস্যবীজ কেন্দ্রিক গোপালনগর সমিতি।

এতে কৃষক প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবে।  

পাইলট প্রকল্প হিসেবে ইতোমধ্যেই জেলার শিবগঞ্জে গড়ে ওঠা প্রথম এ সমিতিটি সফল হয়েছে। ফলে আরও বিভিন্ন শষ্যবীজ সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে এই সমিতিটি।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এনএটিপি-২ প্রকল্পের আওতায় জেলার ৫ উপজেলায় কৃষকদের স্বার্থে ‘কমোন ইন্টারেস্ট গ্রুপ’ (সিআইজি) নামে একটি সমিতি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে সর্বপ্রথম ২০১৬ সালে এ প্রকল্পের আওতায় শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৫০টি সিআইজি গঠিত হয়। সিআইজি গঠনের পর সব সদস্য সঞ্চয় শুরু করেন এবং ২০১৮ সালে তাদের সঞ্চিত টাকা আয় বর্ধকমূলক কাজে ব্যবহারের উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে গোপালনগর সিআইজি প্রথম সমিতি হিসেবে নিজেদের বীজগ্রাম হিসেবে সফলতা দেখাতে পেরেছে।  

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সর্বপ্রথম গঠিত গোপালনগর সিআইজি পুরুষ (ফসল) সমবায় সমিতি মানসম্মত বীজ উৎপাদন ও বিতরণ ইতোমধ্যেই শুরু করছে এবং সফল হয়েছে। এটি সফল হওয়ায় অন্যান্য ৪ উপজেলাতেও বাস্তবায়নে কাজ শুরু হয়েছে।

স্থানীয় পর্যায়ে মানসম্মত বীজের অভাব থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তারা গম গবেষণা কেন্দ্র থেকে বারি গম-৩০ এর ভিত্তি বীজ সংগ্রহ করেন এবং ভাল মানের বীজ উৎপাদন শুরু করেন। চলতি বছর তারা প্রায় ৮০ মণ বীজ সংরক্ষণ করেছেন যার মূল্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।  

‘কমোন ইন্টারেস্ট গ্রুপ’ (সিআইজি) সমিতির কার্যালয়সমিতির সদস্যরা বীজ নেওয়ার পর উদ্বৃত্ত বীজ গ্রামের অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করা হয়। সমিতির টাকা বৃদ্ধির মাধ্যমে আগামীতে কৃষি অফিসের সহায়তায় গবেষণাগার থেকে উন্নতমানের সরিষা, মাসকলাই, মসুর ও ধানের আধুনিক জাতের মানসম্মত বীজ উৎপাদন করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে গোপালনগর সিআইজি পুরুষ (ফসল)  সমবায় সমিতির সভাপতি মো. কামরুজ্জামান জানান, আগে তারা বাজার থেকে বীজ কিনে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। আর কেনা বীজ রোগাক্রান্ত ও নিম্ন ফলনশীল হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পরবর্তীকালে তারা বিষয়টি কৃষি অফিসকে জানালে তাদের একটি সমিতির মাধ্যমে ভাল উন্নতমানের বীজ পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে তারা আর বীজ নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন না।

সমিতির সদস্য মো. মোতুর্জা জানান, তিনি সিআইজি সদস্য হওয়ার পর প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন এবং নিজেদের সমিতি থেকে ভাল মানের বীজ সরাবরাহ পাচ্ছেন।

অন্যদিকে গোপালনগর গ্রামের কৃষক মো. আশরাফুল হক জানান, স্থানীয় পর্যায়ে ভাল মানের বীজ স্বল্প মূল্যে পাওয়ায় তিনি আর বাজার থেকে বীজ কেনেন না। বীজের নিশ্চয়তা থাকায় দ্রুত সমিতির সদস্য হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

একই এলাকার কৃষক খাইরুল ইসলামও এ বছরের মতো প্রতিবছর গ্রামেই বীজ পেলে আর বাজারে বীজ কিনবেন না বলে জানান।

এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম আমিনুজ্জামান জানান, কৃষকদের কাছে রোগমুক্ত উন্নতমানের বীজপ্রাপ্ততা নিশ্চিত করতে সারাদেশে এ ধরনের বীজগ্রাম গড়ে তোলা হবে। তার দাবি শুধু শিবগঞ্জ উপজেলায় নয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেও গোপালনগর সিআইজি প্রথম এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যা প্রশংসনীয়।  

তিনি জানান, কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে গোপালনগর সিআইজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং এই সমিতির মতো সারাদেশে অসংখ্য বীজগ্রামের বিস্তার লাভ করবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বর্তমানে ৪১০টি সিআইজি সমিতি রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।