সোমবার (১৫ জুন) জেলার কয়েকটি উপজেলা ও হাট ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বোরোর বাম্পার ফলনে ও ভালো দামে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।
উত্তরাঞ্চলের শস্যভাণ্ডার খ্যাত বগুড়া জেলায় এ বছর চলতি মৌসুমে মোট ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। কৃষকরা তাদের সিংহভাগ জমিতে আবাদ করেছেন ব্রি-২৮, ২৯, কাটরিভোগ, জীরাশাইল জাতের ধান, যার প্রতি বিঘা ফলন হয়েছে প্রায় ২২ মণ। বর্তমানে বাজারে এ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৯৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত। জেলার কৃষকরা জানান, ধানের এ বাড়তি দামে বেজায় খুশি তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বেশিরভাগ জমির ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কৃষাণ-কৃষাণীরা তাদের সে ধান শুকানোর কাজও প্রায় শেষ করেছেন। অনেকেই তাদের উৎপাদিত ফসল রোদে শুকিয়ে হাটে তোলার প্রস্ততি নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে প্রখর রোদ আর বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ধান ঘরে তোলা ও বাজারজাত করার কাজ।
অন্যদিকে হাটগুলোতে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষি ও বেচাকেনা। কৃষকরা তাদের ধান ভটবটি, মিনি ট্রাক ও ভ্যান গাড়িতে করে হাটগুলোতে নিয়ে যাচ্ছেন। আশানুরূপ দাম হাঁকলেই বিক্রি করছেন খুচরা ও পাইকারি ক্রেতাদের কাছে। হাটে ধানের দাম ঠিক হওয়ার আগেই কৃষকদের হাতে টাকা গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করছেন অনেক পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী।
দুপচাঁচিয়া, কাহালু, শেরপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার তোজাম উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, তোতা মিয়া, ফজলুসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর পরিচর্যায় এ বছর বোরো মৌসুমে তাদের উৎপাদিত ফসলের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বর্তমানে ধানের দামও ভাল হওয়ায় তারা বেজায় খুশি। কেননা খরচ বাদ দিয়ে তাদের বিঘা প্রতি লাভ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এটা গ্রামের খেটে খাওয়া কৃষকদের হিসাব বলে যোগ করেন তারা।
তারা জানান, কিছু জমিতে কাটা-মাড়াই কাজ শেষের দিকে। সোনারঙা সেই ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তারা।
নন্দীগ্রাম উপজেলার আহসান হাবিব বাংলানিউজকে জানান, এ বছর প্রায় ৫৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন তিনি। প্রতি বিঘায় তার ফসল হয়েছে গড়ে প্রায় ২০-২২ মণ। তার প্রতি বিঘাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা এবং ধান বিক্রি করছেন প্রায় ২১ থেকে ২২ হাজার টাকায়।
তিনি জানান, এ হিসাবে প্রতি বিঘায় খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ হচ্ছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। তবে বর্গাচাষিদের বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা বর্গা বাবদ দিতে হওয়ায় তাদের লাভ কম আসছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে এ জেলায় বোরোর বেশ ভালো ফলন হয়েছে। বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে দামও ভালো পেয়ে লাভবান হচ্ছেন ধানচাষিরা। ’
তিনি বলেন, ‘বোরোর এ মৌসুমে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৭ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন। কিন্তু ফলন ভাল হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে অর্জন হয়েছে ৮ লাখ ২৩ হাজার ২৫ মেট্রিক টন। ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি ২০-২২ মণ হারে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩২ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০
কেইউএ/এফএম