জেলার আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে আবু তালেব। ফরিদপুরের একটি বে-সরকারি ফার্মে চাকরি করেন।
বড় কমলাবাড়ি বটতলা এলাকায় গতবছর নিজেদের ৬৫ শতাংশ জমিতে পাঁচ শতাধিক পিলারে ২০ হাজার চারা রোপণ করে তৈরি করেন ড্রাগন বাগান। নাটোর জেলা থেকে ড্রাগন ফলের চারা ক্রয় করেন তারা। দেড় বছর বয়সে ফল দেওয়ার কথা থাকলেও তা ১০-১১ মাসেই ফল দেওয়া শুরু করেছে। বিদেশি এ ফল ও বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন ভিড় জমায় আবু তালেবের ড্রাগন বাগানে।
আবু তালেবের ভাই আব্দুল্লা বাংলানিউজকে জানান, প্রথম দিকে জমি ভাল করে কর্ষণ দিয়ে নির্দিষ্ট দূরুত্বে গর্ত করে জৈব ও কীটনাশক সার দিয়ে গর্ত ঢেকে রাখা হয়। এরপর প্রতিটি গর্তে পাঁচ ফিট উচু একটি করে সিমেন্টের আরসি পিলার বসানো হয়। যে পিলারে দাঁড়াবে ড্রাগন গাছ। এরপর প্রতিটি পিলারের চার দিকে একটি করে মোট চারটি ড্রাগন চারা রোপণ করা হয়। এরপর পরিচর্যা করে গাছ পাঁচ ফিট লম্বা হলে সেখানে ঝুলে থাকার জন্য প্রতিটি পিলারের মাথায় গাড়ির টায়ার বেঁধে দিতে হয়। টায়ার পর্যন্ত গাছ উঠে গেলে গাছের আগা ভেঙে দিতে হয়। তবে অনেকগুলো শাখা প্রশাখা তৈরি হবে। প্রতিটি শাখা প্রশাখার ডাটায় ফুল ও ফল আসবে। আস্তে আস্তে শাখা প্রশাখায় ঢেকে নেবে পুরো এলাকা। এভাবে একবার চারা রোপণ করে আজীবন পাওয়া যায় ড্রাগন ফল। তাদের বাগানের বয়স মাত্র ১০-১১ মাস। এতেই ফল এসেছে। একটি গাছে অসংখ্য ফল আসে। প্রতি চারটি ড্রাগনের ওজন হবে এক কেজি।
আবু তালেবের বড় ভাই আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, তাদের এ বাগান তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় সাত লাখ টাকা। তবে প্রথমে খরচ হলেও পরবর্তীতে শুধুই পরিচর্যা। পরিচর্যা করলে সারা জীবন ড্রাগন ফল পাওয়া যাবে এ বাগান থেকে। প্রথম দিকে বাগান ফাঁকা থাকে। তাই ড্রাগনের সাথী ফসলের চাষ করা যায়। তারা সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন জাতের সব্জি চাষ করেন। বর্তমানে ড্রাগনের সাথী ফসল হিসেবে রয়েছে কাঁচা মরিচ। সবজি চাষাদের আয়েই পরিবারের খরচ যোগানো যায়। ড্রাগন ফল হবে মুনাফা। যা সারা জীবন আয় করা যাবে। এলাকায় প্রথম হিসেবে দূর-দূরান্ত থেকে ড্রাগন ফল ও বাগান দেখতে প্রতিদিন মানুষজন ভিড় করে। যারা আসে তাদের সবাইকে বাগান করার উৎসাহ দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
বড় কমলাবাড়ি গ্রামের রেজাউল করিম রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও ঔষধি গুণ থাকায় এ ফলের দেশে চাহিদা অনেক বেড়েছে। তাই জেলার সৌখিন কৃষকেরা এ বাগান দেখতে আসছেন এবং নিজেরাও ড্রাগন বাগান করার কৌশল জেনে নিচ্ছেন। আগুন্তুকদের অনেকেই বাগান করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সে অনুযায়ী আগামীতে জেলায় ড্রাগন চাষ বাড়তে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন আলাল বাংলানিউজকে বলেন, শখের করা ড্রাগন বাগানটি এখন ওই পরিবারের একটি আয়ের মাধ্যম হতে চলেছে। এখন অনেক আগ্রহী কৃষক ড্রাগন চাষ করার কৌশল জানতে ওই বাগানে আসেন।
আদিতমারী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আলীনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ড্রাগন খুবই পুষ্টিকর একটি ফল। শখের বসে হলেও আবু তালেবের ড্রাগন বাগানটি বাণিজ্যিক। সৌখিন কৃষকরা নিজেদের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণে বাড়ির পাশে দু'চারটি করে ড্রাগন গাছ লাগাতে পারেন। সেই লক্ষ্যে কৃষিবিভাগ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ জেলায় ব্যাপকভাবে ড্রাগন চাষ হবে বলেও আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২০
এনটি