ঢাকা: পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য কোল্ড স্টোরেজের সুবিধা বৃদ্ধিসহ গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ ছড়িয়ে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
রোববার (০১ অক্টোবর) অনলাইনে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে মেহেরপুরের সদর উপজেলার কালিগাংনি গ্রামে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) আয়োজিত ‘গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের মাঠ দিবসে’র অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। মজুদ করে রাখা যায় না। সহজে মজুদ করে রাখতে পারলে পেঁয়াজ নিয়ে সংকট হতো না। বিশেষত কোল্ড স্টোরেজে মজুদ করতে পারলে পেঁয়াজ নিয়ে সংকট কমতো, তবে সে ক্ষেত্রে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যেতে পারে। সেই তুলনায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ সহজতর ও অধিক সম্ভাবনাময়।
তিনি বলেন, প্রদর্শনী প্লট থেকে নমুনা পেঁয়াজ সংগ্রহে দেখা যাচ্ছে হেক্টর প্রতি প্রায় ১৯ মেট্রিক টন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে, যা খুবই আনন্দের ও আশাব্যঞ্জক। পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে এই উচ্চফলনশীল বারি-৫ জাতের পেঁয়াজের চাষ সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে হবে। কারণ, পেঁয়াজে আমরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে চাই না, পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই। দেশে পেঁয়াজ নিয়ে সংকট চলছে। পেঁয়াজ রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনা তৈরি করেছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ। পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে আমাদের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনকে দ্রুত সম্প্রসারণের নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, এই উচ্চফলনশীল বারি-৫ জাতের পেঁয়াজের চাষ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষিদের বীজ, উপকরণ, প্রযুক্তিসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
স্বল্পসুদে পেঁয়াজ চাষিদের কৃষিঋণ নিশ্চিত করতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সমন্বয়ে কমিটি করে দেওয়া হবে উল্লেখ করে ড. রাজ্জাক বলেন, পেঁয়াজ, রসুনসহ মসলাজাতীয় ফসলের চাষে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষকেদের কৃষিঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো এই কৃষি ঋণ প্রকৃত কৃষক পায় না। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব কৃষি ঋণ নিয়ে কৃষি বাদে অন্যান্য কাজে লাগান। কৃষি ঋণ যাতে প্রকৃত কৃষক পায়, পেঁয়াজ, রসুনসহ মসলাজাতীয় ফসলের চাষে কাজে লাগে তা কঠোরভাবে এসব কমিটির মাধ্যমে মনিটর করা হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, মেহেরপুর কৃষিতে অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। এখানকার মাটি খুবই উর্বর হওয়ায় প্রায় সব ধরনের ফসল প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পেঁয়াজের ফলনও অনেক। দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণে এই অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই স্বল্প খরচে যেন অধিক পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন করা যায় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। এ জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া, পেঁয়াজের পচনরোধে আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে হবে।
কৃষি সচিব মেসবাহুল ইসলাম বলেন, আগামী ৩ বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ১০ লাখ টন বাড়ানো হবে। সে জন্য গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় এ লক্ষ্য অর্জনে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে।
মাঠ দিবসে প্রদর্শনী প্লট থেকে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের নমুনা হার্ভেস্টে দেখা যায়, বারি-৫ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন হেক্টর প্রতি প্রায় ১৯ মেট্রিক টন। এ বছর মেহেরপুরে ১৭৯ জন কৃষক প্রায় ২৫ একর জমিতে বারি-৫ জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বারি’র মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২০
জিসিজি/এমজেএফ