ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

প্রবাস ছেড়ে কৃষিতে সফল উদ্যোক্তা সোনাগাজীর রুবেল

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২১
প্রবাস ছেড়ে কৃষিতে সফল উদ্যোক্তা সোনাগাজীর রুবেল প্রবাস ছেড়ে কৃষিতে সফল উদ্যোক্তা সোনাগাজীর রুবেল। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: সৌদি আরবে একটি আন্তর্জাতিক হোটেলের ব্যবস্থাপনায় চাকরি করতেন সোনাগাজী চর চান্দিয়া ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এলাকার মো. আবু সাঈদ রুবেল। বিদেশের মাটিতে আয় রোজগারও বেশ ভালো ছিলো এই প্রবাসীর।

নানা প্রতিকূলতায় আর টানাপোড়নে শেষ পর্যন্ত আর সেখানে থাকা হয়নি তার। ফিরে এলেন দেশে। হাতাশ হয়ে এদিক সেদিক ঘুরছিলেন। তার এ হতাশা লক্ষ্য করলেন সোনাগাজী ধান গবেষণা কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা। সেই কর্মকর্তার পরামর্শেই রুবেল এখন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। প্রতিমাসে আয় ছাড়িয়ে যায় অর্ধলক্ষাধিক টাকা। তার কৃষি খামারে গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করেন।

রুবেল বলেন, তাদের পারিবারিক ৩২ একর জমিতে তিনি চাষাবাদ করছেন। বোরো, আউশ আমন ধানসহ বিভিন্ন সবজির চাষাবাদের পাশাপাশি মাছ ও মুরগির খামারও আছে তার। আউশ ধান চাষ করেছেন তিন একর, বোরো দুই একর এবং আমন ধান চাষ করেছেন ছয় একর।

বার্লি ৬০ শতক, গম এক একর, সূর্যমূখী চার হেক্টর,  তরমুজ দুই একর, ঢেঁড়শ এক একর, ক্যাপসিকাম ২০ শতক, ভূট্টা তিন একর, টমেটো ২০ শতক, রসুন ৩৫ শতাংশ, মরিচ এক একর এবং ৪৫ একরের মধ্যে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। এছাড়াও ১২শ সোনালী মুরগির শেড রয়েছে তার। পুকুরে রয়েছে মাছের চাষাবাদ। বাড়ির পাশের খালি জমিতে রয়েছে সর্জন পদ্ধতিতে সবজির আবাদ।  

রুবেল জানান, বছরে ২০ লাখ টাকার মত বিনিয়োগ করেন তিনি। এ বিনিয়োগে সব খরচ বাদ দিয়ে তিনি সাত লাখ টাকার মত লাভ করতে পারেন। সারা বছর তার খামারে গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করেন।

এ কৃষি উদ্যোক্তার অভিমত যদি খালি জমি থাকে তাহলে যে টাকা খরচ করে বিদেশ যাবেন সে টাকা জমিতে বিনিয়োগ করবেন। স্বজন পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে দেশেই ভাল থাকবেন বিদেশ যেতে হবে না।

তিনি বলেন, তার এ কৃষি উদ্যোগে মূল সমস্যা সেচ। যে সময়টাতে পানির প্রয়োজন সে সময়টাতে পানি পাওয়া যায় না। রুবেল বলেন, সরকারিভাবে যদি খাল থেকে সংযোগ করে দেওয়া যায় তাহলে অথবা বোরিং করে যদি টিউবওয়েলের মাধ্যমেও সেচের ব্যবস্থা করা যায় এ অঞ্চলের কৃষির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়াও রয়েছে শ্রমিক সমস্যা। স্থানীয়ভাবে শ্রমিক না পাওয়ায় দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে শ্রমিক আনতে হয়। স্থানীয় অনেকেই আছেন চোখ লজ্জায় কৃষি কাজ করতে চান না। তারা যদি সংকোচ বাদ দিয়ে এ কাজে লেগে পড়েন তাহলে এ সংকটও কেটে যায়। কোনো কাজই ছোট নয়- কৃষিকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।

সফল এ কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, নিজের জমিতে নিজে চাষাবাদ করে মনের তৃপ্তি পাচ্ছি। স্থায়ী কিছু হচ্ছে। ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে মানুষের সেবা করতে পারছি। পরিবার পরিজনকেও সতেজ খাবার দিতে পারছি।  

স্থানীয় আরেক কৃষি উদ্যোক্তা ওয়াসিউর রহমান খসরু বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠিকটাক মত খোঁজ খবর রাখেন না। তারা যদি এসব উদ্যোক্তাদের  ঠিকমত খোঁজ নিতেন, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতেন তাহলে আরও ভালো করতে পারতেন।

চরচান্দিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশ্রাফ হোসেন পাটোয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, মো. আবু সাঈদ রুবেলের মধ্যে প্রচেষ্টা আছে। প্রচুর উদ্যমী তিনি। তার এই কৃষি উদ্যোগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নানা ভাবে সহযোগীতা করেছে। সার, বীজ থেকে শুরু করে চাষাবাদ পরামর্শ সব কিছু দিয়ে পাশে ছিলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২১
এসএইচডি/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।