চাঁদপুর: চাঁদপুরে চরাঞ্চলসহ জেলার ৮ উপজেলায় খামারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকেই গবাদি পশু পালন করেন। এসব পশু থেকেই প্রতিবছর কোরবানির অধিকাংশ চাহিদা পূরণ হয়।
সরকারি হিসেব মতে চাঁদপুরে এবছর কোরবানির জন্য মোট পশুর চাহিদা ৭০ হাজার। মে মাস পর্যন্ত প্রস্তুত আছে ৬৯ হাজার। এরই মধ্যে কোরবানির হাটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এ বছর জেলায় প্রায় দুই শতাধিক কোরবানির পশুর হাট বসবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুরের মেঘনা উপকূলীয় এলাকায় অধিকাংশ মানুষ কৃষি, পশু পালন ও মৎস্য আহরণ করে জীবীকা নির্বাহ করেন। মূলত চরাঞ্চল থেকেই অধিকাংশ হাটে কোরবানির পশু আসে। ব্যক্তি উদ্যোগে এবং খামারিদের পশু বিক্রির জন্য কোরবানির হাটকেই উপলক্ষ্য হিসেবে রাখেন। যার ফলে এখন খামারিরা তাদের বিক্রিযোগ্য পশুগুলো লালন পালন ও যত্ন নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার অনেকেই কোরবানির হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে এক থেকে দু’মাস আগে অন্য জেলা এবং বিভিন্ন হাট থেকে পশু কিনে অস্থায়ী খামার করেছেন।
জেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ৮ উপজেলায় তালিকাভুক্ত খামারি আছে ২ হাজার ৬৩৪জন। কোরবানির চাহিদার জন্য তাদের খামারে পালনকৃত ষাঁড়, বলদ, গাভী, মহিষ ও ছাগল রয়েছে ৬৯ হাজার। গত বছর কোরবানি হওয়া পশুর সংখ্যা অনুযায়ী এ বছর চাহিদা ৭০ হাজার।
চাঁদপুর জেলার সবচাইতে বড় পশুরহাট হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা বাজার। গত একসপ্তাহ ওই বাজারটিকে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ক্রেতাদের হাঁটার রাস্তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হচ্ছে। বাজারের ইজারাদার অমল ধর বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কর্মী রাখা হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর হাসিল কম ধরা হয়েছে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে হাসিল ছাড় রাখারও নিয়ম রাখা হয়েছে।
মেঘনা উপকূলীয় নিয়মিত গরুর হাট সদর উপজেলার সফরমালি বাজার। সেখানে প্রতি সপ্তাহে হাট বসে। কোরবানি উপলক্ষে গরুর আমদানি বেড়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবছর গরুর দাম ১০-১৫% বেশি। যে কারণে ক্রেতারা দেখেই চলে যান, কিনতে চান না।
চাঁদপুর শহরের সুইটি ডেইরি ফার্মের পরিচালক মো. ইব্রাহীম খলিল বাংলানিউজকে বলেন, গত দুবছর করোনার কারণে আমাদের অনেক লোকসান হয়েছে। এখন বাজারে খাবারের দাম বেশি। যার কারণে খরচ হিসেবে করে দাম ধরলে বেশি হয়ে যায়। অনেকেই দেখতে আসেন, কিন্তু কিনছেন না। এখন আমাদেরকে কোরবানির হাট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
একই ফার্মের শ্রমিক মজনু ও শাহাবুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, খামারে পালনকৃত গুরুগুলোকে ঘাসসহ দেশীয় বিভিন্নভাবে উৎপাদিত খাবার খাওয়ানো হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্যেই এসব গরু বেড়ে উঠে। ক্ষতিকারক কোন খাদ্যই খাবারে ব্যবহার হয় না।
চাঁদপুর জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বখতিয়ার উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, জেলায় ২ হাজার ৬৩৪ জন খামারি রয়েছেন। তাদের সবার ৫টির বেশি গবাদিপশু রয়েছে। যারা ১ থেকে ২টি গবাদিপশু পালন করেন এরকম প্রায় ৪২ হাজার গবাদিপশু রয়েছে। কোরবানির জন্য এ বছর গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে ৭০ হাজার। মে মাস পর্যন্ত প্রস্তত আছে প্রায় ৬৯ হাজার।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি এ বছর আমাদের যে চাহিদা আছে তা মিটিয়ে অতিরিক্ত পশু থাকবে। এ বছর আমরা খুবই সুন্দরভাবে কোরবানি উদযাপন করব।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৮ ঘণ্টা, ২০২২
এমএমজেড