ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

পাঠক খরায় ভুগছে বাগেরহাটের সরকারি গ্রন্থাগার

এস. এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৩ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২৪
পাঠক খরায় ভুগছে বাগেরহাটের সরকারি গ্রন্থাগার

বাগেরহাট: সুসজ্জিত ভবন, ভেতরে বড় বড় তাকে সাজানো নানা ধরনের বই। সামনে বই পড়ার জন্য সারি সারি চেয়ার।

রয়েছে টেবিলের ওপর বিভিন্ন নামের জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা। সামনে চেয়ারে বসে বই ও পত্রিকা পড়ছেন মাত্র ৫ জন পাঠক।  

রোববার (৪ মার্চ) বেলা সাড়ে ১২টায় বাগেরহাট শহরের সরুইস্থ সম্মিলনী স্কুল রোড সংলগ্ন বাগেরহাটের জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়।  

প্রতিনিদের চিত্র প্রায় একই রকম জানালেন সেখানকার পাঠকেরা।  

জেলার একমাত্র সরকারি এই গণগ্রন্থাগারে এক সময় প্রচুর পাঠক থাকলেও, দিন দিন পাঠক সংখ্যা কমছে।  

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এই গ্রন্থাগারটিতে ৪০ হাজার ৯৪২টি বই রয়েছে। এর মধ্যে বাংলা ভাষার ৩৭ হাজার ৩৩৬টি, ইংরেজি ভাষার ৩ হাজার ৫১৩টি এবং অন্যান্য ভাষার ৯৩টি বই রয়েছে। এ বিপুল সংখ্যক বই পড়তে প্রতিদিন মাত্র ৪০ থেকে ৬০ জন পাঠক আসেন। এভাবেই পাঠক খরায় ভুগছে গ্রন্থাগারটি।

নির্দিষ্ট অঙ্কের জামানত দিয়ে এই গ্রন্থাগারের সদস্য হয়ে ধারে বাড়িতে বই নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। সে সুযোগও নিয়েছেন অল্পসংখ্যক। মাত্র ৮৭ জন সদস্য রয়েছে এই গ্রন্থাগারে। তার মধ্যে পুরুষ ৪২, নারী ২২ এবং শিশু ২৩ জন।  

এদের মধ্যে মাত্র ২২ থেকে ৪০ জন সদস্য নিয়মিত বই সংগ্রহ করেন। পাঠক সংকটের পাশাপাশি জনবল সংকটও রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে।

এখানে একজন লাইব্রেরিয়ান, একজন লাইব্রেরি সহকারী, একজন অফিস সহকারী কাম নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছেন। আউট সোর্সিংয়ে একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান ও একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছেন।  

তবে শূন্য রয়েছে জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান, ক্যাটালগার, বুকশাটার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও নিরাপত্তা প্রহরীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ।  

জেলার প্রধান এই গ্রন্থাগারে প্রতি বছর সরকারের ব্যয় হয় ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকার মতো। এরপরেও, গ্রন্থাগারে পাঠক না আসায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।

নিয়মিত গ্রন্থাগারে আসা মো. রাকিব খান নামের এক ব্যক্তি বলেন, পড়াশুনা শেষ করেছি এখন চাকরির চেষ্টা করছি। এজন্যই নিয়মিত এখানে এসে পত্রিকা ও চাকরির বই পড়ি। তবে দিন দিন পাঠক কমতেছে এখানে।

অপর পাঠক সরকারি পিসি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাফিজা আক্তার দোলা বলেন, এখানে এসে একাডেমিক বিভিন্ন টপিকের বই পড়ি। মাঝেমধ্যে পত্রিকাও পড়ি।  

শুধু এই গ্রন্থাগার নয়, বাগেরহাট সরকারি পিসি কলজের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, সরকারি মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা গ্রন্থাগারে পাঠক নেই বললেই চলে।

দশ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান সরকারি পিসি কলেজের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ২৯ হাজার বই রয়েছে।  

প্রতিদিন ৩ থেকে ৪’শ শিক্ষার্থী বই পড়তে আসেন। বই সংগ্রহ করে বাড়িতে বা হোস্টেলে নিয়ে পড়েন মাত্র ২০ থেকে ৫০ জন। তবে পরীক্ষার আগ মুহূর্তে এই সংখ্যা বাড়ে। এখানের শিক্ষার্থীরা বেশি পড়েন একাডেমিক, মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা সম্পর্কিত বই।  

সরকারি পিসি কলেজ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক মো. আল আমিন হোসাইন শেখ বলেন, কলেজে শিক্ষার্থী অনেক। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪’শ শিক্ষার্থী বই পড়তে আসেন। যদি জায়গা বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি গ্রন্থাগারমুখী হবেন।  

পাশাপাশি লোকবল ও অন্যান্য সুবিধাও বৃদ্ধি করার ওপর জোড় দেন তিনি।

সরকারি মহিলা কলেজ গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক মো. শাহদাত হোসেন বলেন, কলেজে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত গ্রন্থাগারে আসেন। তবে পরীক্ষার সময়, অনেক শিক্ষার্থী গ্রন্থাগারে আসেন।

এর বাইরে শহরের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারেরও একই অবস্থা বলে জানা গেছে। বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে ওঠা শহরের প্রাণ কেন্দ্র ডাকবাংলোর মোড়ে অবস্থিত ম্যাকপার্সন লাইব্রেরিতেও পাঠক নেই বললেই চলে।

বাগেরহাট জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, বই পড়ার অভ্যাস তৈরির জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি করা যেতে পারে।  

মোবাইলফোনে আসক্তি কমাতে পারলে পাঠক বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এই গ্রন্থাগারে সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রন্থাগারের সদস্য হতে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে হয়। আবেদনের পরে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে সদস্য হওয়া যায়। এজন্য পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির জন্য এক হাজার টাকা, শিক্ষার্থী ৫০০ এবং শিশুদের জন্য মাত্র ২০০ টাকা জামানত দিতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২৪
এসএম/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।