কবি আশীষ কুমারের মৃত্যুদিবস স্মরণে
অনেকদিন হলো তুমি নাই দৃষ্টিতে।
তোমার আঙ্গুলের পরশহীন কলমটি
পড়ে আছে একা, বোবা হয়ে।
ধুলোয় ঢাকা গাটি তার,
শুকিয়ে গেছে জিব।
বের হয় না নতুন নতুন কোন কথা আর।
বের হয় না মানুষের মনের ভাষা।
এরই মাঝে বাঁকখালীর কতো জল
গড়িয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগরের বুকে আর
কতো জল গড়িয়ে দু’চোখ থেকে
পড়েছে আমার বুকে!
সাঁঝের বেলায় বারে বারে ডেকে যায় হৃদয়
ডাহুকীর ডাক,
বারে বারে বয়ে যায় দীর্ঘশ্বাসের ঝড়।
তুমি নাই, আমি মুকুটহারা।
তুমি নাই, আমি সিংহাসনচ্যুত।
ব্রহ্মমুহুর্তের বাতাসে মেশে
ভেসে আসে দূর মসজিদের আযানের সুর,
একাত্মা হয়ে মেশে যায়
বিহারের কাষ্ঠধ্বনি।
তারই সাথে একাকার হয়ে বাজে
মন্দিরের শঙ্খ আর কাঁসর ঘণ্টা।
পশ্চিম তীরে ঝিমুতে থাকে
রাতজাগা চাঁদ,
পুব আকাশে পাহাড়ের চূড়ায়
লালি মারে সূর্য।
চারপায়ের ক্ষুরের আঘাতে
ক্ষয়ে যাওয়া পথ ধরে,
সাদা দাড়ি ঢাকা মুখ
ফুলের সাজি ধরা হাত
ঘোমটা টেনে বয়ে চলা কলসি অতিক্রম করে
লোকালয় ফেলে
এমনি কত সময় দু'জনে একসাথে
গিয়েছি দূর মাঠের পানে
বাঁকখালীর হাঁটু জল পেরিয়ে।
সবুজ ঘাসের বিছানায় গড়াগড়ি,
সরিষার হলুদ ফুলের সাথে হাসাহাসি,
কানাকানি মুক্ত হাওয়ার সাথে আর
ছুটোছুটি ফড়িং-প্রজাপতির পিছে।
এভাবে কেটে যেতো বেলা দু'জনের
রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে।
ক্লান্ত সূর্য ঝুঁকতে থাকে পশ্চিম আকাশে আর
শেষ বিকেলের আলো এসে পড়ে
লাওয়ে জাদির সোনার চূড়ায়।
প্রতিফলিত সূর্যের আলো
নাড়াপোড়া ধোঁয়ায় মেশে
উড়ে যায় দিগন্তের কোন নীড়ে
সাদা বকের ডানায় ভর করে।
তুমি আর আমি
মাঠের প্রান্তে
জাদি তলার শ্মশান কিনারে চরতে থাকা
গরুগুলো ডেকে নিয়ে
ফিরতাম ঘরে।
কখনো পড়েনি চোখ
শ্মশানে শুয়ে থাকা
জন্মান্তরের জ্ঞাতি মানুষগুলোর উপর।
আজ তুমি তাদের মাঝে
নিশ্চুপ, নির্ভার, মুক্ত। আর
আমি ফিরি ঘরে একা!
তুমি নাই,
চারিদিকে কপট হাসির কারাগার,
বাড়তে থাকে অচেনা মানুষের ভিড়।
মেকি ভালোবাসার তক্তপোশে বসে
প্রতিদিন যন্ত্রণা বুনি
প্রাণহীন সস্পর্কের সুতোয়।
প্রহর গুনি কখন আসবে মুক্তি
শুয়ে থাকব তোমার মতো
নিশ্চুপ, নির্ভার।
জোনাকীরা সাজাবে রাতের অন্ধকার
ছন্দে ছন্দে,
ঝিঁঝিঁপোকা গেয়ে যাবে গান
ফেলে আসা জীবনের কথা নিয়ে।
তারই মাঝে শুয়ে থাকব
তুমি আর আমি
নিশ্চুপ, নির্ভার, বন্ধনহীন।
বুঝেছি আমি-
মৃত্যুই সত্য, জীবন নয়।