ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৪২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (৪২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিমাল ফার্ম’।
___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

৪১তম কিস্তির লিংক
___________________________________

ছোট্ট দোকানের ভেতরটা মালপত্রে ঠাসা। কোনওটিই কমদামি না। মেঝেও ফাঁকা পড়ে নেই, দেয়ালে গাদা গাদা ছবির ফ্রেম ধুলো জমিয়ে ঝুলে আছে। জানালায় পাতা ট্রেতে ছোট ছোট নাট-বোল্টু, ভাঙা বাটালি, হাচড়া-খাচড়া ধাঁরহীন কলম-ছুরি, দমহীন ঘড়ি, যা আর কখনোই সময় দেবে না; আর এমন আরও নানা ধরনের ভাঙাচোড়া বস্তু-সামগ্রী। এক কোনায় একটি ছোট টেবিলও ভরে আছে নানা সামগ্রীতে- কারুকাজ করা নস্যির কৌটা, আকিক পাথরখচিত কাপড়ের পিনসহ এমন সব জিনিষ যা দেখলেই পছন্দ হবে, মনে হবে দারুণ কিছু।

টেবিলের ওপর গোলাকার একটি বস্তুতে চোখ আটকে গেলো উইনস্টনের। গোল, মসৃণ, বাতির আলোয় হালকা দ্যুতি ছড়াচ্ছে। আলগোছে বস্তুটি হাতে তুলে নিলো সে। কাঁচের তৈরি স্বচ্ছ ভারি একটি বস্তু। এক পীঠ বাঁকানো অন্যদিক সমান, ফলে গোলার্ধের রূপ নিয়েছে। রঙ ও স্বচ্ছতায় মনে হবে বড় এক ফোঁটা স্ফটিক বৃষ্টি জল। ঠিক মাঝখানে অদ্ভুত গোলাপী একটা কিছু কু-লী পাকিয়ে বসানো। দেখলে গোলাপ কিংবা সামুদ্রিক তারাফুল মনে হবে। বাঁকানো অংশের কারণে উপর থেকে চোখে সেটি বড় হয়ে ধরা দেয়।

‘কি এটা?’ আগ্রহ ভরে জানতে চাইলো উইনস্টন।
 
‘ওটা কোরাল,’ বললো বুড়ো দোকানি। অবশ্যই ভারত মহাসাগর থেকে এসেছে। কাঁচের ভেতর বসানো হয়েছে সামুদ্রিক কোরাল। আমার মনে হয় না এটির বয়স শত বছরের কম হবে, দেখে মনে হচ্ছে তারও বেশি হবে।

‘ভীষণ সুন্দর,’ বললো উইনস্টন।

‘হ্যাঁ, খুব সুন্দর,’ প্রশংসাসূচক উচ্চারণ দোকানির। ‘তবে আজকাল আর এগুলো বেশি পাওয়া যায় না। ’ খানিকটা কেশে নিয়ে বুড়ো ফের বললো, ‘এখন তুমি যদি এটা কিনতে চাও, পুরো চার ডলার দাম পড়বে। আমার দিব্যি মনে আছে পুরো আট পাউন্ড দিয়ে কিনেছি। আর আট পাউন্ড মানে হচ্ছে- না ঠিক হিসাব কষতে পারবো না, কিন্তু এটা বুঝি অনেক টাকা। সত্যিকারের প্রাচীন বস্তুতে কারই বা আগ্রহ বলো? হোক না এখন এগুলো খুব কমই মেলে?’

উইনস্টনের মন ধরে গেলো বস্তুটিতে, তাই দ্রুত চার ডলার তুলে দিয়ে ওটি পকেটে পুরে নিলো। এর সৌন্দর্য তার কাছে বড় বিষয় নয় বরং আজকালের বস্তুগুলোর চেয়ে এটি ভিন্ন কিছু, যার মালিকানা পাবার তীব্র বাসনাই বড় আবেদন হয়ে ধরা দিয়েছিলো। বৃষ্টির পানির মতো স্বচ্ছ এমন কাঁচের গোলক আর কখনোই সে দেখেনি। আপাত এই প্রয়োজনহীনতাই বস্তুটিকে তার কাছে দ্বিগুণ আকর্ষণের করে তুললো, যদিও সে জানে একদিন হয়তো সে এটি পেপারওয়েট হিসেবেই ব্যবহার করতে শুরু করবে। পকেটে খুব ওজন লাগছিলো, তবে পকেটে বস্তুটি খুব একটা ফুলে উঁচু হয়ে নেই সেটাই বাঁচোয়া। এটি অদ্ভুত একটা বস্তু, একজন পার্টি সদস্যের মালিকানায় থাকার জন্য অস্বাভাবিকও বটে। যা কিছু পুরোনো, আর যা কিছু সুন্দর তাই সন্দেহের উদ্রেক ঘটায়। পুরো চার ডলার হাতে পেয়ে বুড়োর খুশি মুখটা দেখার মতো হয়ে উঠেছিলো। উইনস্টনের মনে হলো বুড়ো আসলে তিন ডলারে এমনকি দুই ডলারেই বেচতে রাজি হয়ে যেতো।

‘উপরের তলায় আরেকটি কামরা আছে, তুমি চাইলে একবার ঘুরে দেখতে পারো,’ বললো দোকানি। ‘খুব বেশি কিছু নেই, মাত্র কয়েকটা জিনিষ। তুমি যেতে চাইলে বাতি হাতে করে যেতে হবে। ’

‘আরেকটা বাতি জ্বালালো বুড়ো, আর ধনুক-বাঁকা পীঠে খাড়া, ভাঙা সিঁড়ি ভেঙ্গে ধীরে ধীরে উপরে উঠলো। পরে সরু একটি পথ ধরে তারা যে কামরায় ঢুকলো সেখান থেকে রাস্তা দেখা যায় না, তবে বাইরে চোখে পড়ে পাথর বিছানো আঙিনা আর চোঙা-আকৃতির বড়বড় পাত্র। উইনস্টন দেখলো ঘরের ভেতরে আসবাবপত্র সাজানো, যেনো কেউ এখানে বসবাস করে। মেঝেতে এক ফালি কার্পেট বেছানো, দেয়ালে ঝোলানো এক-দুটি ছবি। একটি নিচু নোংরা হাতলওয়ালা চেয়ার ফায়ার প্লেসের সামনে পাতা। পুরোনো ফ্যাশনের বারো ঘণ্টা ডায়ালের একটি কাঁচের ঘড়ি চুল্লির উপরের দেওয়াল থেকে বেরিয়ে আসা তাকের ওপর বসে টিক টিক করে সময় দিচ্ছে। জানালার নিচে কামরার সিকিভাগ জুড়ে বড় মাপের একটা বিছানা পাতা।

‘আমার স্ত্রী যদ্দিন বেঁচেছিলো এখানেই থাকতাম,’ আবার ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি বুড়োর কথায়। ধীরে ধীরে আসবাবপত্রগুলো বেচে দিচ্ছি। ওই যে বড় মেহগনি কাঠের বিছানাটি দেখছো ওটাই বাকি আছে, ছারপোকা ছাড়াতে পারলে ওটাও বেচবো। তবে বলতে পারি কাজটা ঝামেলারই হবে। ’

৪৩তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময় ১৯৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।