ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ২১) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ২১) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।
___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ২০তম কিস্তি
___________________________________

মনে হলো পুরো গানটাই হৃদয়ঙ্গম করেছে এই নারী। গ্রীস্মের মিষ্টি হাওয়া তার গান ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দূর থেকে আরও দূরে। দারুণ গলার সুরের সঙ্গে মিশেছে সুখের দুঃখগাথা। কেউ ভাবতেই পারে, জুনের এই বিকেলটা যদি হয়ে ওঠে অনন্ত, আর যদি কাপড়ের যোগান থাকে অফুরান, তাহলে এই নারী ডায়াপার শুকোতে দিতে দিতে আর গান করে কাটিয়ে দিতে পারবে হাজার বছর।



উইনস্টন ভাবল, সে তো কখনওই পার্টির কোনও সদস্যকে এমন একাকীত্বে উদার-উদাস গলায় গান গাইতে শোনেনি। এমনটা প্রথাবিরুদ্ধই কেবল নয় বিপদও ঘটে যেতে পারে। একা একা কথা বললে যে বিপদ—ঠিক তেমনই। হতে পারে মানুষ যখন বুভুক্ষের পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন তাদের কণ্ঠে গান এমন করেই আসে।

‘হ্যাঁ এবার ঘুরতে পার’—বলল জুলিয়া।

ঘুরল উইনস্টন। আর এক সেকেন্ড মোটে চিনতেই পারছিল না তাকে। তার প্রত্যাশা ছিল জুলিয়া নগ্ন হয়ে তাকে আহ্বান জানাবে, কিন্তু সে যা করেছে তা যে নগ্নতার চেয়েও বিস্ময়ের! মুখে রঙ মেখে সেজেছে সে।

নিশ্চয়ই প্রোলেতারিয়েতদের কোনও দোকানে ঢুকে সাজসজ্জার সব উপকরণ কিনে এনেছে এই মেয়ে। ঠোঁটদুটো গাঢ় লাল, গালে রুজ মাখানো, নাকে পাউডার, চোখের নিচেও কিছু একটা লাগিয়েছে—এতে তার চোখদুটো বেশ টানা টানা লাগছে। দক্ষ হাতে হয়নি কোনও কিছুই, কিন্তু উইনস্টনের চোখে তা ধরা পড়ার কথা নয় কারণ এ নিয়ে তার বোধটাও সমৃদ্ধ কিছু নয়। পার্টির কোনও মেয়ের মুখে প্রসাধনি মাখা দেখবে এমনটা এর আগে সে কল্পনাও করেনি। সাজের পর তার মুখটা দেখতে চমৎকার হয়েছে। মুখের কয়েকটি জায়গায় কয়েকটি রঙের ব্যবহার তাকে কেবল আরও সুন্দরীই করেনি, বরং, বলা যায় আরও বেশি নারীসুলভও করে তুলেছে। তার ছোট চুল, ছেলেদের মত আলখেল্লাও সে রূপে সামান্যই প্রভাব ফেলতে পেরেছে। আর যখন সে তাকে বাহুতে তুলে নিল সুগন্ধির একটি ধাক্কা এসে লাগল তার নাসিকা রন্ধ্রে। তার মনে পড়ে গেল আধো-অন্ধকারে ঢাকা সেই নিচতলার রান্নাঘরের কথা, আর প্রকাণ্ড মুখের এক নারীর চেহারা। গন্ধটা একই রকম। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই এসব নিয়ে ভাবতে বসার সময় এটা নয়।

‘সুগন্ধীও!’—বলল সে।

‘হ্যাঁ, প্রিয়তম, সুগন্ধীও। আর তুমি কি জানো, এরপর আমি কী করতে যাচ্ছি? আমি সত্যিকারের মেয়েদের একটি ফ্রক জোগাড় করব আর এই ফালতু ট্রাউজার ফেলে সেটা পরব। আমি মখমলের মোজা পরব, হাইহিল জুতো পরব। এই কামরার ভেতরে আমি সত্যিকারের একজন নারী হয়ে উঠব, পার্টির কমরেড হয়ে থাকব না। ’

দুজনেরই শরীর থেকে বসন খসে পড়ল একে একে, আর দুই নগ্ন দেহ মেহগনি কাঠের বিছানায় ঝাপিয়ে পড়ল। এই প্রথমবার জুলিয়ার সামনে পুরোপুরি নগ্ন হলো উইনস্টন। এখনও শরীরের জেগে ওঠা শিরা আর গোড়ালির ওপরের ঘা সহ ফ্যাকাশে কৃশকায় শরীরটি নিয়ে লজ্জায় থাকে সে। বিছানায় কোনও চাদর পাতা নেই, ছেঁড়া হলেও কম্বলটি মসৃণ, তার ওপরই শয্যা রচিত হলো দুজনের। বিছানাটি বড়সড়ো আর বেশ স্প্রিংয়ি। ‘আমি নিশ্চিত এই বিছানা ছারপোকায় ভরা, কিন্তু তাতে কারই পাত্তা?’—বলল জুলিয়া। প্রোলদের ঘরে ছাড়া, আজকাল ডাবল সাইজের বিছানা আর দেখাই যায় না। ছেলেবেলায় উইনস্টন মাঝেমধ্যে এমন একটি বিছানায় ঘুমিয়েছে, কিন্তু যদ্দূর মনে পড়ে জুলিয়া কখনওই এমন বিছানায় গা ছোঁয়ায়নি।

দুজনই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তবে অল্প সময়ের জন্য। উইনস্টনের যখন ঘুম ভাঙল তখন ঘড়ির কাঁটা নয়টার কাছাকাছি। নড়ল না, কারণ জুলিয়া তখনও তার বাহুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে। ওর মুখের প্রসাধনীর অনেকটা এখন তারও মুখমণ্ডলে লেগে আছে, তবে রুজমাখা গাল দুটি দারুণ সুন্দর লাগছিল।

দ্বিতীয় খণ্ডের ২২তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৫
টিকে/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।