ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আমার সঙ্গে সূর্যাস্ত দেখতে যাবে? | কালপুরুষ

কবিতা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৫
আমার সঙ্গে সূর্যাস্ত দেখতে যাবে? | কালপুরুষ

আমি তোমার নাম বরফ দিয়ে লিখেছি
তুমি আমার নাম আগুন দিয়ে লেখো

**
আজ ভোর বেলায় যখন অপরূপ হাওয়া ছড়াচ্ছে
রোম্যান্টিক গাছগুলো; গভীর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে
একটি কবিতা লিখতে বলেছো আমাকে
                                                            লিখে রাখতে বলেছো আমাদের প্রেম

তোমাকে মূল্যায়নযোগ্য একটি শব্দ নিয়ে ভাবতে গিয়ে
মনে হলো—
                                                            পৃথিবী থেকে দুর্লভ কিছু পথ বিলীন হয়ে গ্যাছে

অথচ এই অধিকার কেবল মানুষের থাকা উচিৎ ছিল
এই নিয়ে এক হেমন্তে মধুর তর্ক করেছিলাম আমরা

তুমি জানতে চেয়েছিলে—
        কার্ল মার্ক্স পড়ে আমাদের কী লাভ!
        যুদ্ধ থেমে গেলেই পৃথিবীতে শান্তি আসবে?
        ধর্মগ্রন্থগুলো কি শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানের কাছে হেরে যাবে!
        বেঁচে থাকার এত উৎসাহ কোথায় পাচ্ছে মানুষ!
        ঈশ্বরের প্রেমিকা থাকলে পৃথিবী কি আরো সুন্দর হয়ে উঠত?

পৃথিবীতে এইরূপ জিজ্ঞাসা থাকা ভালো
(মনে মনে একা আমি উচ্চারণ করলাম)

তুমি বরং আমার প্রেমিকার গল্প শোনো—
     এই ব’লে অস্তগামী সূর্য ও সমুদ্রের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ালাম;
         ডুবে যাচ্ছে রানা প্লাজা, আমরা শুনতে পেলাম মানুষের ম্লান কণ্ঠস্বর
             ইয়েমেনে ঝরে পড়ছে ধর্মীয় বোমা, আমরা শুনতে পাচ্ছি মানুষের ম্লান কণ্ঠস্বর
                  অস্ত্র ও শান্তি উৎপাদনে শীর্ষ দেশ আমেরিকা, আমরা শুনতে পাই মানুষের ম্লান কণ্ঠস্বর

আমার প্রেমিকার কোনো গল্প নেই রোহিণী
আমরা বরং একটা ছবি আঁকি কান্নারত শিশুর

                 যাদের উল্লাস ভালো লাগে তারা উৎসব করুক
                                         মৃত মানুষের কোনো গল্প থাকে না
                 যাদের মৃত্যু ভালো লাগে তারা যুদ্ধে যাক
                                         মৃত মানুষের কোনো গল্প থাকে না

আমার প্রেমিকার কোনো গল্প নেই রোহিণী
আমরা বরং ঈশ্বরের অসুখ দেখে আসি

***
আমরা প্রত্যেকে জীবনের পাশে গভীর এক অসুখ নিয়ে শুয়ে থাকি
একজন কোমল নার্সের স্বাভাবিক তবু বিষণ্ণ বুক দেখে আমাদের অসুখ গাঢ় হয় আরো
আমরা যে মৃত্যুকে ঘৃণা করি অভিশাপ দেই—বস্তুত দুঃখ আছে তারও
আমরা তবু জীবনের পাশে গভীর দুখি এক প্রেম নিয়ে শুয়ে থাকি

                                                   তবু
                           “দু একটি সূর্য আরো ডুবে গেলে—পৃথিবীর জলে
                           আরো কিছু নারীর গভীর ভালবাসা পেলে—যেতে পারি চলে”
                                                                                                   ভাবতেই মনে পড়ে—

সঙ্গে তোমার দ্যাখা হয়নি কখনো (প্রেমে এইরূপ হয়?)
দেখবার আকাঙ্ক্ষা নেই
         আকাঙ্ক্ষা নেই!
                অথবা চিরকাল তোমার সঙ্গে দ্যাখা হয়
যে হাওয়া তোমার চুল ছুঁয়ে ছিল সে হাওয়ায়
             হাত রেখে আমার ভীষণ কবিতা লেখা হয়
দুঃখ অর্জনের এ এক গভীর আশ্চর্য দিক
                    মৃত্যু নয় মৃত্যুর অধিক
             বেদনা নিয়ে লিখে রাখি তোমাকে
প্রত্যহ
তোমার শরীর তোমার আত্মা তোমার বেদনাকে

****
এভাবে মরবার আগে একবার তোমায় দেখে নিতে চাই
                                                            একটা সাপের সঙ্গে দ্যাখা হয়

আমি চেয়েছিলাম তোমার হাঁটা পথ
                                      আমার সঙ্গে হাঁটুক

আমি আবিষ্কার করতে চেয়েছিলাম পাথরের উচ্চারণভঙ্গি
বৃষ্টির রাতে আমি তোমাকে—তোমার বেদনাকে অনুবাদ করতে চেয়েছিলাম
                                                                                   একটি কোমল অন্ধকারের সঙ্গে দ্যাখা হয়

আমার আছে একটি আস্ত যুবতী নদী হারাবার দুঃখ।
                    তোমার?

                    আমার আছে মৃতকে জীবিত করার কৌশল।



আমার সঙ্গে সূর্যাস্ত দেখতে যাবে?



বাংলাদেশ সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।