ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৫১) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৫১) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৫০তম কিস্তি
___________________________________

আধুনিক যুদ্ধের মূল লক্ষ্য হচ্ছে (দ্বৈতচিন্তার নীতি অনুসারে, ইনার পার্টির মগজওয়ালাদের কাছে যা একইসঙ্গে স্বীকৃত এবং অস্বীকৃত দুইই) যন্ত্রে উৎপাদিত পণ্যের ব্যবহার বাড়বে, কিন্তু সাধারণের জীবন মান বাড়বে না। উনিশ শতকের শেষ ভাগ থেকে উদ্বৃত্ত ভোগ্য পণ্য নিয়ে শিল্প সমাজগুলো একটি সুপ্ত সমস্যায় পড়ে আছে। এই সময়ে, যখন খুব কম মানুষই জীবন ধারণের মতো পর্যাপ্ত পায়, তখন এমন সমস্যা নিঃসন্দেহে জরুরি কিছু নয়। আর জরুরি হয়ে উঠবেও না। উদ্বৃত্ত পণ্য ধ্বংস করে দেওয়ার কোন কৃত্রিম পদ্ধতি কাজ না করলেও নয়।

১৯১৪ সালের আগের পরিস্থিতির তুলনায় এখনকার বিশ্ব ভুখা, নাঙ্গাদের এক বিপর্যস্ত ভূমি। আর আমরা যদি একটি কল্পিত ভবিষ্যতের দিকে তাকাই, এহেন পরিস্থিতি আরও বাড়বে। বিশ শতকের গোড়ার দিকে ভবিষ্যত সমাজের স্বপ্ন ছিলো অভাবনীয় ধন, অফুরান অবসর, নিয়মতান্ত্রিক আর কার্যকর এক সমাজ-- কাচ-ইস্পাত আর বরফ-সাদা কংক্রিটের এক ঝকমকে বিশ্ব। প্রায় প্রতিটি শিক্ষিত মানুষের সচেতন ভাবনাই ছিলো এমন। অভাবনীয় গতিতে এগিয়ে চলছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যাত্রা, আর ধরেই নেওয়া যায় এই গতি আরও বাড়বে। তারপরেও প্রত্যাশিত সমাজ গড়ে উঠতে পারেনি, অংশত দীর্ঘ ধারাবাহিক যুদ্ধ আর বিপ্লবের কারণে সৃষ্ট দারিদ্র এর কারণ, আর অংশত এই জন্যে, যে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি উন্নয়ন ঘটছে তা স্রেফ চিন্তার ব্যবহারিক চর্চার ভিত্তিতে, যা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত সমাজে টিকে থাকতে পারছে না।

মোটের ওপর, বিশ্ব আজ পঞ্চাশ বছর আগের বিশ্ব থেকে একটু বেশিই আদিম। পিছিয়ে থাকা কিছু এলাকা এগিয়েছে, কিছু কল-কৌশলও তৈরি হয়েছে যা কোনও না কোনওভাবে যুদ্ধের আর পুলিশের গোয়েন্দাগিরির কাজে লাগছে, কিন্তু পরীক্ষা-নীরিক্ষা বা আবিষ্কার-উদ্ভাবন বন্ধ রয়েছে, আর ১৯৫০ এর দশকে ঘটে যাওয়া আনবিক যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ধ্বংস আর ক্ষতি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা কখনোই সম্ভব নয়।

এছাড়াও যন্ত্রের সঙ্গে এর অন্তঃস্থায়ী বিপদ আর ঝুঁকিতো রয়েছেই। প্রথম যখন যন্ত্র এলো তখন সমঝদার মানুষমাত্রের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলো, মানুষের কায়িক শ্রমের দিন ফুরিয়েছে। আর আরও একটু বড় পরিসরে বলতে গেলে ধারনা করা হচ্ছিলো মানুষে মানুষে অসমতাও কমবে। যদি সে কারণেই যন্ত্রের ব্যবহার চলে তা আগামী কয়েক প্রজন্মের মধ্যেই ক্ষুধা, অতিরিক্ত কাজ, অশিক্ষা, রোগ-বালাই আর পুঁতিগন্ধময় জীবন দূর করবে।

তবে বাস্তবতা হলো, এমন কোনও উদ্দেশ্যে নয়, স্বয়ংক্রিয় এক প্রক্রিয়ায় এসব যন্ত্র সম্পদ উৎপাদন করতে থাকলো, যার বণ্টনও কখনো কখনো অসম্ভব হয়ে থাকলো না- আর তাতে পঞ্চাশ বছরের মধ্যে অর্থাৎ উনিশ শতকের শেষ ও বিশ শতকের গোড়ার ভাগে এসে গড়-পড়তা মানুষের জীবনের মান ভীষণভাবে বেড়ে গেলো।

কিন্তু এটাও স্পষ্ট, সম্পদের উপচয় সর্বত্র যে ধ্বংসের হুমকি দেয়, অন্য বিবেচনায় সে ধ্বংস আধিপত্যবাদী সমাজেরই। বিশ্বে মানুষ এখন কম খাটে, পর্যাপ্ত খায়, ঘরে থাকে- যার ভেতরেই পায়খানা-গোসলের ব্যবস্থা, ফ্রিজে খাবার তুলে রাখে, মোটরগাড়ি হাঁকায়, অথবা এমনকি উড়োজাহাজেও চেপে যেতে পারে কোথাও। তাতে বলাই যায়, বা বলাটা জরুরিও বটে যে, বৈষম্য দূর হয়েছে। বিষয়টি এখন সাধারণেও বিস্তৃত। সম্পদের বেশি-কমের ফারাকটি আর বড় হয়ে নেই।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৫২তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।