ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বেহুদা সময়ে কাঁকড়া শিকার | আহমেদ খান হীরক

গল্প / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৯ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৫
বেহুদা সময়ে কাঁকড়া শিকার | আহমেদ খান হীরক

বেহুদা সময় নষ্টের মানে নাই কোনো, সমুদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমেদের এরকম মনে হয়। কারণ অনেকক্ষণ ধরেই সে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে এবং সমুদ্রে নতুন কোনো ঘটনা ঘটছে না।



সমুদ্রের প্রশংসা কম শুনে আসে নি সে। প্রথম শুনেছিল ছোটবেলায়। তখন বয়স সাত কি আট। তাদের এক বন্ধুর বড় ভাই কিভাবে কিভাবে যেন কক্সবাজার গেল বেড়াতে বা বিয়ে খেতে কি আর অন্য ব্যাপারে, সে এলো নূড়ির মালা নিয়ে। পকেটভরা পাথর। ঝনঝন করে। বলল, সমুদ্র তাফাল জিনিস। খালি ডাকে। গোঁ গোঁ করে ডাকে। আর বালু আর পাত্থর। কাঁকড়াও আছে ম্যালা!

কাঁকড়া ব্যাপারটা তখন আকর্ষণ করেছিল আমেদকে। বালুর ওপর দিয়ে কাঁকড়া হেঁটে যাচ্ছে আর বড় একটা পাথর দিয়ে সে কাঁকড়াকে পিষে পিষে মারছে এরকম একটা দৃশ্য সে মনে মনে ভেবেছিল সমুদ্র বিষয়ে। আর বিষয়টা ভাবতে গিয়ে তার খুব ভালো লেগেছিল। কাঁকড়া মারার অদ্ভুত আনন্দ তার ভেতর ছড়িয়ে গিয়েছিল। সে ভেবেছিল কাঁকড়া মারার জন্য সে একবার সমুদ্রে যাবে। কিন্তু তারপরে তার আর কোনোদিন সমুদ্রে যাওয়া হয় নি।

তবে অনেকবার সমুদ্র দেখেছে সে। স্বপ্নে। কিন্তু ওই সমুদ্র ছোট, অনেকখানি পদ্মানদীর মতো। বর্ষায় যে পদ্মা আমেদ দেখেছিল নিশার সাথে—ওইরকম। আর সে স্বপ্নে নিশাও থাকত। দু’জনে হাত ধরাধরি করে হেঁটে যাচ্ছে সমুদ্রের তীর বা পদ্মার পাড় ধরে। আর হাঁটতে হাঁটতে তখন সমুদ্র বা পদ্মা আর মুখ্য থাকত না। নিশা মুখ্য হয়ে যেত, নিশার ঠোঁটে বাতাসে উড়ে উড়ে আসা চুলগুলো মুখ্যতর হয়ে যেত। আমেদ তখন বারবার আড়চোখে নিশার চুল দেখত। তবে নিশা চোখ পাকাত এই ভেবে যে আমেদ বোধহয় চুলের ওড়াউড়ি না দেখে আড়চোখে বাতাসের বিরুদ্ধে টপ ফুঁড়ে বেরোনো তার বুক দেখছে। নিশা চোখ পাকাত আর হাসতও। মানে একটা প্রশ্রয় থাকত হাসিতে। প্রশ্রয় পেয়ে স্বপ্নের মধ্যেই আমেদের খুব খারাপ লাগত। স্বপ্নের মধ্যেই ভাবত, আহারে, এইরকম টপটোপা মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেল! স্বপ্নের মধ্যেই একটা দুঃখবোধ তাকে ঘিরে পাকিয়ে উঠত, ব্যাকুল করত। আর স্বপ্নেই সে নিজেকে কুঁকড়ে ফেলত। আর নিশাকে নিয়ে সৈকতে গড়াগড়ি যাবার ইচ্ছাটা তখন আরো প্রবল হয়ে উঠত। মনে হতো নিশার চুল সরিয়ে ঠোঁটে একটা কামড় দিয়ে বালির ভেতর ঘুমিয়ে যাবে সে। মৃত্যুর মতন একটা দীর্ঘ ঘুম দেবে। আর মৃত্যুর কথা এলেই সে দেখত নিশা চলে যাচ্ছে দূরে। সিনেমায় যেমন ব্যাক রিওয়াইন্ড হয় সেভাবে নিশা উল্টোদিকে চলে যাচ্ছে চলে যাচ্ছে চলে যাচ্ছে আর একটা বিন্দুতে গিয়ে যখন একেবারেই হারিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনই মনে হয় যে মনেহয় আর কোনো কিছু নেই কেবল একটা কালো আর কুচকুচে বিন্দু অথচ সেখান থেকে ধীরে ধীরে একটা কাঁকড়া হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে আসতে থাকে এগিয়ে আসতে থাকে এগিয়ে আসতে থাকে এগিয়ে আসতে থাকে। আর এগিয়ে আসতে আসতে আসতে আসতে যেন আসা আর শেষ হয় না কাঁকড়ার। আমেদের চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আমেদ যেন ডুবে যেতে থাকে বালুর মধ্যে আর কাঁকড়া এগিয়ে আসতেই থাকে। বালুর ভেতর পাথর খুঁজতে থাকে আমেদ। কিন্তু হাত নাড়াতে পারে না। তার চোখ নাক-চোখ-মুখ সব বালুর ভেতর ডুবে যেতে থাকে। আর একেবারে শেষ মুহূর্তে দেখে কাঁকড়াটা এসে দাঁড়িয়েছে তার চোখের সামনে। চোখের সামনে একটা কাঁকড়া, অথচ পাথর দিয়ে মারতে পারছে না এরকম একটা হতাশা দিয়ে তার স্বপ্নটা শেষ হয়। বা আসলে ঘুম ভাঙে। বা আসলে নতুন একটা স্বপ্নের শুরু হয় তখন।

২.
সমুদ্র নিস্তরঙ্গ। মানুষও প্রায় নেই। অনেক অনেক অনেক দূরে কেউ শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে হয়ত। হয়ত স্বপ্ন দেখছে। আর তার ওপর দিয়ে একটা কাঁকড়া চলে যাচ্ছে। ফলে কিছু না হয়ে ওঠা সমুদ্রে যেন একটা ঘটনা পায় আমেদ। সে তার হাতের পাথরটা নিয়ে ঘুমিয়ে থাকা সেই মেয়েটার দিকে বা না ঘুমিয়ে থাকা কাঁকড়ার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।



বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।