ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৬২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ২ কিস্তি ৬২) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

দ্বিতীয় খণ্ডের ৬১তম কিস্তি
__________________________________

আমলা, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠক, প্রচার বিশেষজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানী, শিক্ষক, সাংবাদিক আর পেশাদার রাজনীতিকদের নিয়ে নতুন এই আভিজাত সমাজ গড়ে উঠল। এই মানুষগুলো, উঠে এসেছে বেতনভোগী মধ্যমশ্রেণি, ও শ্রমজীবী শ্রেণির উচ্চ গ্রেড থেকে, আকার পেয়েছে ও একসঙ্গে লালিত হয়েছে একচেটে শিল্প জগত আর কেন্দ্রীভূত সরকার ব্যবস্থায়।   অতীতের যুগে যুগে এমন মানুষের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যাবে তারা ছিল আরো কম লোভী, কম ভোগবিলাসি, ক্ষমতার জন্য তাদের ক্ষুধাটিও ছিল খাঁটি, আর, সর্বোপরি, তারা তাদের নিজেদের কৃতকর্মের বিষয়ে বেশি সচেতন ছিল, আর বিরোধী পক্ষকে ঘায়েল করার ইচ্ছাটিও ছিল প্রবল।



এই শেষ পার্থক্যটি মৌলিক। আজ যেমনটা তার তুলনায় অতীতের জুলুমবাজি শক্তিগুলো ছিল ক্ষীণ উদ্যমী আর অপটু। শাসক গোষ্ঠীগুলো বরাবরই কোনো একটা মাত্রায় উদারপন্থায় আক্রান্ত ছিল, সর্বত্রই একটা বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে রাখতে পছন্দ করত, প্রকাশ্য কিছু কর্মকাণ্ড ছাড়া প্রজারা কী ভাবছে তা নিয়ে তাদের আগ্রহই ছিল না। এমনকি মধ্যযুগের ক্যাথলিক চার্চগুলোও আধুনিক মানের ব্যাপারে সহনশীল ছিল। অংশত এর কারণ হচ্ছে, অতীতের কোনো সরকারের হাতেই প্রজাদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখার ক্ষমতা ছিল না।

ছাপাখানা আবিষ্কারের ফলে জনমতকে নিজ উদ্দেশ্য সাধনে কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি হয়, এরপর চলচ্চিত্র ও রেডিও এসে সে প্রক্রিয়া আরো জোরদার করে। টেলিভিশন তৈরির ফলে আরেক কারিগরি অগ্রগতি সাধিত হলো যেখানে একই যন্ত্র একই সঙ্গে তথ্য গ্রহণ ও সম্প্রচার দুই-ই করতে পারে, আর তার মধ্য দিয়ে ঘটে গেল ব্যক্তিগত জীবনের অবসান। প্রতিটি নাগরিক, অথবা প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিককে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা পুলিশের চোখে চোখে রাখা সম্ভব হলো, আর সরকারি কচকচানি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হলো যোগাযোগের আর সব চ্যানেল।



এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের ইচ্ছার প্রতি পূর্ণাঙ্গ আনুগত্যই কেবল নিশ্চিত করা হলো না, সকল প্রজারই এক মত, প্রথমবারের মতো তারও নিশ্চয়তা বিধান করা হলো।   পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বিপ্লব পরবর্তী সময়ে, নিজে নিজেই ফের গোষ্ঠীবদ্ধ হলো সমাজ, যেমনটা অতীতেও হয়েছে, সেই একই শ্রেণিভেদ—উচ্চ, মধ্য আর নিম্ন। কিন্তু নব্য উচ্চবিত্ত শ্রেণি সকল পূর্বসূরীদের থেকে ব্যতিক্রম হয়ে এই প্রথম নিজ চরিত্রে আবির্ভাব হলো না, বরং এবার অনেক বেশি জোর দিল নিজেদের অবস্থানকে দৃঢ় করার লক্ষ্যে। আর সে জন্য যা যা দরকার তার সব করতে শুরু করল। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার উপলব্ধি এই যে, যৌথবাদিতাই গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজের সবচেয়ে নিরাপদ ভিত। সম্পদ ও সুবিধা দুই-ই খুব সহজে সংরক্ষণ সম্ভব যদি তা থাকে যৌথ অধিকারে।

‘ব্যক্তি সম্পদের বিলোপ’ নামের যে তথাকথিত ধারা শতাব্দীর মাঝের দিককার বছরগুলোতে তৈরি হয়েছিল, তার প্রায়োগিক মানে ছিল অতীতের চেয়েও আরো কম মানুষের হাতে সম্পদ ঘনিয়ে আনা। পার্থক্য এই যে, নব্য মালিকরা অনেক ব্যক্তির সমারোহ নন বরং তারা গুটি কয় ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত গোষ্ঠী। ব্যক্তিগতভাবে পার্টির কোনো সদস্যই কোনো কিছুর মালিক নন, স্রেফ গুটিকয় ব্যক্তিসম্পত্তি ছাড়া। ওশেনিয়ায় সামগ্রিকভাবে সব কিছুই পার্টির মালিকানায়, কারণ পার্টিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে, আর যখন যেটুকু প্রয়োজন বোধ করে সেটুকু করে পণ্য ছাড়ে। বিপ্লবের পরের বছরগুলোতে পার্টি বিনা বাধায় হুকুমদাতার আসনে আসীন হয়, কারণ তখন পুরো প্রক্রিয়াটিই সাধন করা হয় যৌথবাদিতার নামে।

বরাবরের ধারণা ছিল, পুঁজিবাদীদের দখলচ্যুত করা হলে সমাজতন্ত্র আসবে; আর প্রশ্নাতীতভাবেই পুঁজিপতিদের দখলচ্যুত করা হয়েছে। কারখানা, খনি, ভূমি, আবাসন, পরিবহন—এই সবকিছুই তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো: আর যেহেতু এসবের কোনো কিছুই ব্যক্তি সম্পত্তি হিসেবে থাকল না, বলাই বাহুল্য এগুলো হয়ে উঠল সরকারি সম্পত্তি। অপেক্ষাকৃত অতীতের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সৃষ্টি হয় ইংসক, আর এর নামেও রয়েছে সমাজবাদিতার গন্ধ, সুতরাং ইংসকই সমাজতন্ত্রের ধারক। যার ফল দাঁড়াল তা-ই যা আগেই ধারণা বা প্রত্যাশিত ছিল। তা হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে, অর্থনৈতিক বৈষম্য একটি স্থায়ী রূপ পেল। তবে আধিপত্যবাদী সমাজকে একটি স্থায়ী রূপদানের সমস্যাটি আরো গভীরে প্রোথিত হলো।

দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৩তম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৮৩১ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।