ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

তুমি ফিরে এসেছো বাংলাদেশ হয়ে | সুকদেব বিশ্বাস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৬
তুমি ফিরে এসেছো বাংলাদেশ হয়ে | সুকদেব বিশ্বাস

নিজের চোখে মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। কিন্তু অনুভব করি প্রতিক্ষণ।

মায়ের সামনে শিশুকে গলা টিপে হত্যা করা, ছেলের সামনে মাকে সম্মানহানি আর পিতাকে গুলি করে হত্যা, যখন বাস্তবে এমন দৃশ্য আমাকে দেখতে হতো, তাহলে আজ এ লেখা লিখতে গিয়ে হয়তোবা আমার হাত কেঁপে কলমটিই পড়ে যেতো। কিন্তু তাই বলে কি লিখতে গিয়ে আমার হাতটি কাঁপেনি? কলম কি দু’-একবার থেমে যায়নি? সেই বীভৎস কাহিনি লিখতে গেলে আমারও হাত কাঁপে, আমারও মাঝে মাঝে কলম থেমে যায়। আমি কি অনুভব করি না সেই পৈশাচিক ঘটনাকে? অবশ্যই অনুভব করি, আর ভাবি- আমরাই বুঝি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি যারা শুধু দেশের জন্য এতো বলিদান দিয়েছে।

আমি সেই জল্লাদের গল্প পড়েছি, যে নিরস্ত্র লোককে গলা টিপে হত্যা করেছে। আমি সেই কবিতা পড়েছি যেখানে ধর্ষিত বোনের শাড়ি আজ আমাদের লাল সবুজের পতাকা হয়েছে। আমি সেই গল্প শুনেছি যেখানে এক মহান নেতার ডাকে কৃষক-শ্রমিক উলঙ্গ হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে শত্রুর উপর। হে মুক্তি সৈনিকরা, আমরা প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি তোমাদের। জন্মেই লাল-সবুজের পতাকা দেখেছি স্কুলের আঙিনায়। তোমরা হয়তো অনেকেই দেখে যেতে পারোনি লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দৃশ্য
কিন্তু আমরা তোমাদের দেখতে পাই। তোমরা ওই পতাকার মধ্যেই উড়তে থাকো সারাক্ষণ। যে শিক্ষা বই-পুস্তক ঘাঁটলে পাওয়া যায় না, সেই শিক্ষাই তোমরা আমাদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে গেছো। দেশকে কতো ভালোবাসো সেটা বুঝিয়ে দিয়ে গেছো গোটা বিশ্বকে। আমাদের রেখে গেছো গর্ব করার সর্বোচ্চ  শিখরে। সত্যিই তাই আজ আমরা নিজেদেরকে নিয়ে গর্ব করি।

হে বিশ্ববাসী, দেখো, আমাদের জীবনের চেয়ে আমরা আমাদের  দেশকে কতো  ভালোবাসি। একটি নয় দু’টি নয়, ত্রিশ লাখ শহীদের দিকে চেয়ে দেখো।

প্রিয় দেশমাতৃকার সৈনিক, আমি জানি, তুমি তোমার প্রিয় মানুষটির সঙ্গে শেষ দেখাটুকু করে যেতে পারোনি, অনেক কথা জমিয়ে রেখেছিলে বলবে বলে, কিন্তু তুমি ফিরে আসতে পারোনি, তাই তুমি ফিরে এসেছো ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ এরকম হাজারো গান হয়ে। তুমি তোমার মাকে চিঠি লিখেছিলে, শিগগিরই তুমি যুদ্ধ করে ফিরে আসবে কিন্তু তুমি আসতে পারোনি, এসেছো গোটা বাংলাদেশ হয়ে। তুমি দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলে, খালি হাতে ফিরবে না, তোমার সেই সাধনা আর স্বপ্ন বিফলে যায়নি। তুমি একটি পরিবারকে ছেড়ে গিয়েছিলে, কিন্তু ফিরে এসেছো বাংলার প্রতিটি পরিবারে। তুমি গর্ভবতী স্ত্রীকে রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলে, তোমার সেই সন্তান স্বাধীন দেশে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তোমার সেই সন্তান স্কুলের আঙিনায় দাঁড়িয়ে স্যালুট দেয় লাল-সবুজের পতাকার দিকে তাকিয়ে। গায়, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। স্বাধীনতা দিবস এলে তার আনন্দের সীমা থাকে না, যা দেখলে তোমারও আনন্দের সীমা থাকতো না।

হে মুক্তি সৈনিক, যখন তোমার দেশ থেকে কেউ হিমালয় পর্বতের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ  করে, তখন সেখানে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে তোমাকেই স্মরণ করে। যখন ক্রিকেট বিশ্বে তোমার সন্তানরা জয় ছিনিয়ে আনে তখন প্রথমে তোমাকেই স্মরণ করে। যে নারীকে তুমি ভয়ে ঘর থেকে বের হতে দেখোনি, তোমার দেশের সেই নারীরা আজ বিশ্ব চরাচরে। তুমিই তো স্বপ্ন দেখেছিলে, তোমার দেশের মেয়েরা একদিন প্রধানমন্ত্রী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট হবে। তোমার সব আশাই আজ পূর্ণ হয়েছে। আজ তোমার দেশের নারীরা কখনও পাহাড়ের চূঁড়ায় আরোহণ করছে, কখনও ফুটবল মাঠে, কখনওবা ক্রিকেট মাঠে।

তুমি স্বপ্ন দেখেছিলে, কৃষকেরা মন ভরে ফসল ফলাবে তার উন্মুক্ত মাঠে আর তা গোলায় তুলবে। তোমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, তুমিই যেনো ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি হয়ে ফিরে এসেছো। দক্ষিণ হাওয়ায় তুমিই যেনো দুলে বেড়াও সেই ফসলের মধ্য দিয়ে। তুমিই মিশে আছো সুন্দরবনের সবুজ প্রকৃতিতে।

আমাদেরকে এতো কিছু দেওয়ার জন্যই বুঝি সেদিন শত্রুর সামনে দাঁড়িয়ে তুমি বলেছিলে, ‘আমাকে গুলি করে বিদ্ধ কর, কিন্তু আমার দেশকে তোমরা নিও না, নিতে পারবে না। ’

মুক্তিযোদ্ধাদের ছিনিয়ে আনা সেই সোনার বাংলাকে আমরা সবাই মিলে আরও সুন্দর করে গড়ে তুলি। সবার কাছে সেই প্রত্যাশাটুকু রাখি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৬
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।