ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৩)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৯ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১৩)

মূল: অগাস্ট কুবিজেক
অনুবাদ: আদনান সৈয়দ

[লেখক অগাস্ট কুবিজেক ছিলেন কুখ্যাত নাজি বাহিনীর জনক অ্যাডলফ হিটলারের ছেলেবেলার বন্ধু। তার জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ’ থেকে জানা যায়, হিটলার তার প্রথম যৌবনে গান গাইতেন, ধ্রুপদী সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন, ছিলেন একজন প্রেমিক ও ছবি আঁকায় তার ছিলো আজন্ম ঝোঁক।

তিনি যেনো এক অন্যরকম হিটলার! লেখক অগাস্ট কুবিজেক গ্রন্থটির মাধ্যমে হিটলারের জীবনের অনেক অজানা অধ্যায়কে উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন: অনুবাদক]

পর্ব ১৩

পঞ্চম অধ্যায়

‘হিয়েলডার’ নাম পরিবর্তন করে ‘হিটলার’ নাম নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন অ্যাডলফ হিটলারের বাবা আলইস হিটলার। তবে তার কাছে হিটলার নামটি কেন ‘হিয়েলডার’ থেকে বেশি প্রিয় হয়েছিলো এটি সত্যি জানার বিষয়। তিনি নিজেই ‘হিটলার’ বানানটি কীভাবে হবে তা তৈরি করেছিলেন। যেকোনো বিষয় তিনি তার নিজের মতো করে তৈরি করতে ভালোবাসতেন। এটি ছিলো তার স্বভাব। হয়তো এ কারণেই তিনি তার নাম এমনভাবে পরিবর্তন করে থাকবেন। আলইস হিটলার তার দীর্ঘ চল্লিশ বছরের কাস্টম কর্মকর্তা জীবনে মোট চার বার বিভিন্ন শহরে বদলি হয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে চাকরির সূত্রে সালফেলডেন, ব্রাউনাউ, পাসাউ ও লিজ শহরে বদলি হয়েছেন। প্রতিটা জায়গাতেই তিনি বেশ সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। শুল্ক কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিটা শহরেই তাকে বেশ মানিয়ে গিয়েছিলো। তবে তিনি কোথাও কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানায় বেশিদিন থাকেননি। কেন থাকেননি এটিও এক অপার বিস্ময়! নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায় তিনি যখন ব্রাউনাউ ছিলেন শুধুমাত্র সেই শহরেই তিনি বারো বার বাসা বদল করেছিলেন। সম্ভবত তারও বেশি হবে। পাসাউতে দু’বছর থাকাকালীন তিনি মোট দু’বার বাসা বদল করেছিলেন। তিনি যখন অবসরে যাবেন যাবেন করছেন ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি লিজ থেকে বদলি হয়ে হেফেলডে চলে আসেন। হেফেলড থেকে লামবাচ, তারপর সেখান থেকে লেইনগার্নার ইন ও এরপর স্কেউইকবেচ। স্কেউইকবেচ থেকে তিনি চলে যান লিউনডিংয়ে। আমার সঙ্গে অ্যাডলফ হিটলারের যখন প্রথম দেখা হয় তখন সে ইতোমধ্যেই সাতটি বিভিন্ন ঠিকানা ও পাঁচটি স্কুল হজম করে বসে রয়েছে। এটা বললে ভুল হবে যে, বাড়ির করুণ দশার জন্যেই হিটলারের পরিবার এতো ঘন ঘন বাড়ি বদল করতো। তবে বসতবাড়ি হিসেবে প্রোমার ইন ছিলো আলইস হিটলারের খুব প্রিয় একটি জায়গা। এটি ছিলো গোটা ব্রাউনাউ শহরের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও বিলাসী একটি অ্যাপার্টমেন্ট যেখানে অ্যাডলফ হিটলারের জন্ম হয়েছিলো। অ্যাডলফের জন্মের পরপরই তার বাবা সেটি ছেড়ে অনত্র চলে যায়। তিনি এক অ্যাপার্টমেন্টে বেশিদিন থাকতে পারতেন না। একটি ছেড়ে আরেকটিতে যাওয়া ছিলো তার স্বভাব। এমন উদ্ভট স্বভাব কেন তার হয়েছিলো কেউ কি তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারবেন?  

সম্ভবত আলইস হিটলার একই জায়গায় খুব বেশি দিন থাকতে পছন্দ করতেন না। আর তাছাড়া চাকরিগত কারণেই হয়তো তিনি বেশিদিন এক জায়গায় থাকতে পারতেন না। যতো তাড়াতাড়ি নতুন জায়গায় বসবাস করা যায় ততোই যেনো তার জন্য মঙ্গল। পুরাতনকে ভুলে নতুনভাবে আবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া। অ্যাডলফও ঠিক তার বাবার মতোই ছিলো।

জীবনের তিনটি পর্বে আলইস হিটলার তার পরিবারকে নতুনভাবে দেখভাল করেছেন। অবশ্য এটি সম্ভবত হয়েছে তার ভাগ্য ও পারিপার্শিক অবস্থার কারণেই। আমরা জানি, তার প্রথম স্ত্রী আনা সবসময় অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী থাকতেন এবং সম্ভবত এমন কারণ থেকেই তার সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায়। পরবর্তীতে আনা শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে মারা যান। তার প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকাকালীন আলইস হিটলারের দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তাদের সন্তান চলে আসে। যখন দ্বিতীয় স্ত্রী অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী তখন বিয়ের আগেই তৃতীয় স্ত্রী ক্লারা সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন। তাতেই বোঝা যায়, আলইস হিটলার খুব সহজ-সাধারণ স্বামী ছিলেন না। অ্যাডলফের মায়ের সঙ্গে কথা বলে এটা টের পেতাম, তিনি মেজাজের দিক থেকে একরোখা ছিলেন ও তার মুখ সবসময়ই থমথমে থাকতো। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, আলইস হিটলার কখনও তার সমবয়সী কাউকে বিয়ে করেননি। আনার সঙ্গে তার বয়সের ব্যবধান ছিলো চৌদ্দ বছর, ফ্রানজিস্কা ছিলেন তার চেয়ে চব্বিশ বছরের ছোট এবং ক্লারা ছোট ছিলেন তেইশ বছরের।


এটি ছিলো তার স্বভাব এবং এই বিস্ময়কর স্বভাবের কারণে তিনি কখনও স্বতস্ফূর্ত জীবনে বিচরণ করতে পারতেন না। তার বাবার এই অদ্ভুত আচরণ কখনও কখনও আমি যেনো তার ছেলের মধ্যেও খুঁজে পেতাম। মনে আছে, আমরা যখন কোনো জায়গায় যেতাম বা প্রকৃতির সান্নিধ্যে গিয়ে শান্তির অন্বেষণে ব্যস্ত হয়ে পড়তাম তখন হঠাৎ করেই সে যেনো তার মনের ভাব পরিবর্তন করে গম্ভীর হয়ে পড়তো। সে তখন তার মনের বিরুদ্ধে নিজেকে দাঁড় করিয়ে আমাকে শুনিয়ে বলতো, রাস্তার পাশের এই বাড়িটার অবস্থান একদম বেমানান। এটাকে ভেঙে নতুন করে বানানো উচিৎ। অথবা রাস্তাগুলো কেমন জানি ঠিকমতো তৈরি হয়নি। রাস্তাটিও ভেঙে নতুন করে মেরামত করা জরুরি। আরে ধুর ছাই! এই শহরটাই খুব এলোমেলো গোছের। চল গোটা শহরটাকেই নতুন করে ঢেলে সাজাই।  

শুধু তাই নয়। হয়তো চার্চের সামনে কোনো ভিক্ষুক ভিক্ষার আশায় বসে রয়েছে। অ্যাডলফ সঙ্গে সঙ্গেই হয়তো ভিক্ষুকদের জীবন ও সরকারিভাবে তাদেরকে কীভাবে পূনর্বাসন করা যায় এ নিয়ে বক্তৃতা দিতে শুরু করে দিলো। কোনো শান্তশিষ্ট মহিলা হয়তো এক হাতে দুধের বালতি আর আরেক হাতে তার পোষা কুকুর নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। অ্যাডলফ সে দৃশ্য দেখেই খেঁকিয়ে উঠে বলতো- দেখ, পশুর প্রতি তাদরে নূন্যতম কোনো ভালোবাসা নেই। তাদের হৃদয়ে এই ভালোবাসা তৈরি করার জন্যে আমাদের কাজে নেমে যেতে হবে। এতে বোঝা যায়, অ্যাডলফ হিটলারের মুড পরিবর্তন হতে সময় লাগতো না।

এমন অনেক অদ্ভুত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্ভবত সে তার পিতার কাছ থেকেই পেয়েছিলো যার প্রকাশ তার স্কুল এবং বাড়িতেও ঘটতো। বাবার চরিত্রের অনেককিছু নিজের রক্তে বহন করা, এটি এমন এক শক্তি যা শুধুমাত্র প্রকৃতিই নির্ধারণ করে দিতো। যদিও পিতা-পুত্রের জীবনের লক্ষ্য দু’রকম ছিলো কিন্তু পিতার শান্তি-শৃঙ্খলায় ভরা জীবনকে সে তার জীবনের ইস্পিত লক্ষপূরণে স্থান দিয়েছিলো। অ্যাডলফ তার বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী জীবনের লক্ষ্যকে স্থির করতে চাইতো না। যদিও সে নিজেও পরিষ্কারভাবে নিজের জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে জানতো না। একজন শিল্পী হওয়ার যে শখ সে হৃদয়ে পোষণ করতো, এ কথাটি সম্ভবত তার বাবার জন্যে সবচেয়ে অপমানজনক ছিলো। তার বাবা এই বিষয়টিকে যতোই ঘৃণা করতেন অ্যাডলফ যেনো ততোই বিষয়টির দিকে ঝুঁকে পড়েছিলো।

সিভিল সার্ভিসের প্রতি এই অনীহার কারণে অ্যাডলফের সঙ্গে তার বাবার এমন একটি দূরত্ব তৈরি হয় যে এটি পুনরুদ্ধার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সম্ভবত অ্যাডলফ তার জীবনের জন্যে সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিয়েছিলো। পরবর্তীতে আমি দেখেছিলাম, সে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব সূক্ষ্মভাবে ভাবতো ও চিন্তা করতো। সে এমন একটি পেশায় নিজেকে দেখতে চাইতো যেখানে সে তার মেধাকে ঢেলে দিতে পারবে।

তার বাবার মৃত্যুর কিছুদিন আগেও যখন অ্যাডলফ হিটলারের বয়স ছিলো তের, তখন তাকে লিজ শহরের কাস্টম অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিলো একটাই, কাস্টম অফিসের কাজকর্ম দেখে ছেলে যদি সিভিল সার্ভিস চাকরির প্রতি আকৃষ্ঠ হয়! কিন্তু কে শোনে কার কথা! অবাধ্য ছেলের মতো সে তার বাবার এই আশায় ছাই দিয়ে নিজের চিন্তায় দৃঢ় হয়ে থাকলো।

আলইস হিটলার ১৯০৩ সালের ০৩ জানুয়ারি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো পয়ষট্টি বছর। পয়ষট্টি বছর বয়সেও তিনি শারীরিকভাবে অনেক শক্ত ছিলেন। প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল দশটার দিকে খাবার খেতেন। একদিন হঠাৎ করেই তিনি তার চেয়ার থেকে নিচে পড়ে যান। ডাক্তার অথবা পাদ্রীর কাছে নিয়ে যাওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।

চৌদ্দ বছরের বালক অ্যাডলফ তার বাবার এই অকাল মৃত্যু দেখে সেদিন পাগলের মতো হাউমাউ করে কেঁদেছিল। এতেই বোঝা যায়, উপর দিয়ে সে যতোই বাবার প্রতি বিরূপ থাকুক না কেন ভেতরে ভেতরে সে ছিলো ভীষণভাবে বাবা ভক্ত এক সন্তান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
এসএনএস

আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন-
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-২)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৩)

**দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৪)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৫)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৬)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৭)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৮)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-৯)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১০)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১১)
** দ্য ইয়ং হিটলার আই নিউ (পর্ব-১২)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।