বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) সকালে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ঢাকা আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবের (ঢাকা লিট ফেস্ট) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমনটাই বলছিলেন উৎসবের আয়োজকরা।
তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে আয়োজন সম্পর্কে আলোকপাত করে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা লিট ফেস্টের তিন পরিচালক সাদাফ সায্ সিদ্দিকী, আহসান আকবর ও কাজী আনিস আহমেদ।
এ সময় লিট ফেস্টের পরিচালক, কথাসাহিত্যিক ও প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ বলেন, আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলা ও মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী। তাই এ সাহিত্য উৎসব সবসময়ই সেই ধারাকে উৎসাহিত করে। তাই শুধু সাহিত্যে বন্দি না থেকে আমরা সাহিত্যের পাশাপাশি শিল্প এবং মুক্তচিন্তার ধারাকেও এ উৎসব থেকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করবো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে কত্থক নৃত্যের মধ্য দিয়ে স্বাগত জানানো হয় উৎসবে আগত অতিথি এবং শিল্প-সাহিত্য অনুরগীদের। এ সময় নজরুলের ‘ভোরের হাওয়া এলে’ গানের সাথে কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন মুনমুন আহমেদ। লাল-নীল আলোর রোশনাই আর কত্থকের মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায় পুরো মিলনায়তনে।
মুনমুন আহমেদের পর নৃত্য পরিবেশন করেন কত্থক শিল্পী অপরাজিতা মুস্তফা। এরপরই ‘ও পাখি তারে বলে দিস’ গানের সঙ্গে কত্থকের বৈঠকী ঠুমরীর পরিবেশন নিয়ে আবারো হাজির হন মুনমুন আহমেদ। সবশেষে রেওয়াজ পারফর্মিং স্কুলের শিক্ষার্থীরা তিনটি রাগ ও তিনটি তালের সমন্বয়ে পরিবেশন করেন ‘তারানা মল্লিকা’।
নৃত্যের মুগ্ধতা ছড়িয়ে পরার পর ফিতা কেটে আয়োজনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্মাতা শেখ মুজিবুর রহমানও শিল্প-সাহিত্যে অনুরাগী ছিলেন। বর্তমান সরকারও শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নয়নে নানাবিধ কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আগত বিদেশি অতিথিদের ধন্যবাদ জানিয়ে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আপনারা বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন আমাদের এই সাহিত্য উৎসবে যোগ দিতে। এখানে আপনারা আমাদের যেমন আপনাদের সংস্কৃতির সম্পর্কে জানাবেন তেমনি আমাদের সংস্কৃতিকেও আপনারা বয়ে নিয়ে যাবেন নিজেদের ভেতর। এভাবেই আমাদের দেশ, সংস্কৃতি পৌঁছে যাবে বিশ্বদরবারে।
আয়োজনের অন্যতম পরিচালক সাদাফ সায্ সিদ্দিকী বলেন, এবারের উৎসবে সবথেকে বড় যে বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করছি, তা হচ্ছে তরুণদের অংশগ্রহণ। এ উৎসবে এবার যারা অংশগ্রহণ করছেন তাদের শতকরা ৮০ ভাগের বয়স ২৫ বছরের নিচে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের একটি বিষয়।
তিনি বলেন, এবারের উৎসবে সাহিত্য ছাড়াও আর্ট, ফটোগ্রাফি ও ফিল্ম প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকছে। এগুলো নিয়ে আয়োজনের তিনদিনে অনুষ্ঠিত হবে ৯০টির বেশি সেশন। নারী চরিত্রকে তুলে ধরার পরিকল্পনায় এবারের উৎসবে থাকছে নারী নির্মাতা নন্দিতা দাশের ছবি, ছয় নারী কবি, রোহিঙ্গা নারীদের কথা, নারী বাউল শিল্পীসহ নারীদের সরব উপস্থিতি।
আরেক পরিচালক আহসান আকবর বলেন, ঢাকা সাহিত্য উৎসব মূলত বাংলা সাহিত্য ও বাংলাদেশকে প্রচার ও প্রসারের চেষ্টা। আমরা সে চেষ্টা সবসময় অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক। আমরা বিশ্বাস করি আমরা সেটা একটু হলেও করতে পারছি।
অনুষ্ঠানে কথা বলেন অভিনেত্রী ও অ্যাক্টিভিস্ট নন্দিতা দাস। তিনি বলেন, আজকের এই সময়টা আমাদের সব ধরনের কাজে উৎসাহ প্রদানের একটি সময়। বাংলাদেশ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এ দেশের শিল্প-সাহিত্যও বেশ সমৃদ্ধ। সেই ধারাকে অব্যাহত রাখতে আমাদের আরো বেশি মুক্তচিন্তার চর্চা চালিয়ে যেতে হবে।
এবারের উৎসবে বিদেশি অতিথিদের মধ্যে অংশ নিচ্ছেন পুলিৎজার বিজয়ী মার্কিন সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ অ্যাডাম জনসন, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক ও কলামনিস্ট মোহাম্মদ হানিফ, ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ফিলিপ হেনশের, বুকার বিজয়ী ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জেমস মিক, ভারতীয় জনপ্রিয় লেখিকা জয়শ্রী মিশ্রা, লন্ডন ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব রাইটিংয়ের পরিচালক ও কথাসাহিত্যিক রিচার্ড বিয়ার্ড, ভারতীয় লেখিকা হিমাঞ্জলী শংকর, শিশুতোষ লেখিকা মিতালি বোস পারকিন্স, ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এশিয়ার প্রধান হুগো রেস্টল, মার্কিন সাংবাদিক প্যাট্রিক উইন, লেখক ও সাংবাদিক নিশিথ হাজারি।
লিট ফেস্টের অষ্টম এ আয়োজন এবার মুখরিত হবে বিশ্বের ২৫ দেশের দুই শতাধিক সাহিত্যিক, বক্তা, পারফর্মার এবং চিন্তাবিদের অংশগ্রহণে। আয়োজনে আলোচনা, পারফরম্যান্স ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ থাকবে আনপ্লাগড মিউজিক কনসার্ট। বাংলাদেশে সাহিত্য জগতে স্বনামধন্য ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’ ঘোষণা করা হবে লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিনে। একইদিনে চালু হবে কেম্ব্রিজ শর্ট স্টোরি প্রাইজ।
সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এ আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বাংলা একাডেমির আয়োজনে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে যাত্রিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৮
এইচএমএস/এসকেবি/এমজেএফ