ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

রং-তুলিতে বিস্ময়, আছে ধাতবখণ্ডে প্রাণের ব্যঞ্জনা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৮
রং-তুলিতে বিস্ময়, আছে ধাতবখণ্ডে প্রাণের ব্যঞ্জনা প্রদর্শনীর কয়েকটি শিল্পকর্ম/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ছবিগুলো দেখলে একটা শান্তির অনুভূতি হয়। একটু বিস্মিত হতে হয়, কীভাবে এমন কাজ করা যায়! যেন বিভ্রম! আর্টে টেকনিক বেশি থাকলে আর্ট মরে যায়, তাই একটি নির্দিষ্ট সময়ে টেকনিকটিকে মেরে ফেলতে হয়। শিল্পী তাই করেছেন। সময়ের সঙ্গে বিষয়বস্তুর পরিবর্তন এনে পরিমিত রং, ভালো সাবজেক্ট আর নিবিড় যত্নে নিজের ছবিগুলোকে করে তুলেছেন অনন্য।

বলছিলাম বিশিষ্ট ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী হামিদুজ্জামান খানের একক চিত্র প্রদর্শনী ‘নকটার্নাল শেডস’ এর কথা। রাজধানীর মধ্যবাড্ডার অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে সম্প্রতি শুরু হয়েছে মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীতে চিত্রের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে শিল্পীর সৃজনশীল ও নিরীক্ষাপ্রবণ কিছু ভাস্কর্য। কঠিন ধাতব পদার্থ বা পাথরের বুক চিরে শিল্পী গড়ে তুলছেন নিত্যনতুন শিল্পকর্ম। তার হাতের স্পর্শে ধাতবখণ্ডে যেন প্রাণ সঞ্চারিত হয়। প্রকাশিত হয় অসীম প্রাণের ব্যঞ্জনা। অবয়বের গুণে জড়বস্তু প্রাণসঞ্চারী হয়ে নজর কাড়ে শিল্পানুরাগীর।

ভাস্কর্যের সঙ্গে রং-তুলির আঁচড়ে শিল্পীর শিল্পকর্মগুলো যেনে অনেকটা গানের মতো। সেগুলো কখনো স্পষ্ট বোঝা যায়, আবার কখনো বোঝা যায় না। বারবার দেখতে গিয়ে একটার পর একটা ইমেজ তৈরি হয়, যার প্রতিটির অর্থ আছে। চোখ বুজে তাকালে রং ও রেখা ধরা দেয় ঘূর্ণির মতো। এসব ঘূর্ণন অ্যাবস্ট্রাকট, শব্দ দিয়ে তাকে বোঝানো যায় না। আর সে ঘূর্ণনের সঙ্গে আছে স্তব্ধতাও। সেই সমগ্র স্তব্ধতার মধ্যেই শিল্পী গতি খুঁজে সম্পূর্ণ নিজস্ব ঢঙে গড়ে তুলেছেন এক একটি শিল্পকর্ম।

প্রদর্শনীর কয়েকটি চিত্রপ্রদর্শনী নিয়ে বরেণ্য শিল্পী মনিরুল ইসলামও জানালেই তেমনই। তার মতে, চিত্রকর্মগুলোতে শিল্পীর চিন্তার জগতটা একটু অন্যরকম। নিজের অনুভূতি নিয়েই তিনি ছবি এঁকেছেন। বিশ্বের নানা প্রান্তে শিল্পীরা শিল্পকর্ম তৈরি করছেন। কিন্তু নিজস্ব শিল্পগুণসমৃদ্ধ শিল্পকর্মের যথেষ্ট অভাব। হামিদুজ্জামান খানের শিল্পকর্মগুলো নিজস্বতায় ভরপুর, যা বেঁচে থাকবে বহুদিন।

বলা হয়, শিল্পীরা সবসময় সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করেন। মানুষের রুচি তৈরি করতে এবং সুন্দর সমাজ গঠনে শিল্পীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ প্রদর্শনী যেনো তারই উদাহরণ। শিল্পী তার মনের রংগুলোকে বাস্তবে রূপান্তরিত করে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। এসব শিল্পের মধ্যে আছে অনেক গভীরতা ও ভাবরস। জলরঙে আঁকা বিমূর্ত ধারার চিত্রকলায় তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ। তাইতো শিল্পীর আঁকা ছবিগুলো প্রকৃতির কথা কথা বলে, মননের কথা বলে, সৌন্দর্যের কথা বলে।

প্রদর্শনীর কয়েকটি চিত্রদেশবরেণ্য শিল্পীর এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ১৩০টি শিল্পকর্ম। এর মধ্যে আছে একটি পেইন্টিং যা ৫২ ফুট চওড়া আর উচ্চতায় ছয় ফুট। প্রায় তিনটি দেয়াল জুড়ে ছবিটি টাঙানো। পাশেই একফুট বাই একফুট জলরঙের কাজ ১০০টি। আছে ১০টি ভিন্ন ধারার ভস্কর্য। বাকিগুলো ক্যানভাসে। আর এই সবগুলোর সম্মিলিত আয়োজনই মন জয় করছে শিল্পরসিকদের।

এ প্রসঙ্গে শিল্পী হামিদুজ্জামান খান বলেন, আমি সব সময় ভাস্কর্য নিয়েই থাকি। তবে এ বছর আমি সবচেয়ে বেশি ছবি এঁকেছি। তারই সমন্বয়ে এ আয়োজন।

এসময় তিনি অবিন্তা গ্যালারিতে প্রদর্শনীটি আয়োজন করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে সুন্দর এ গ্যালারিটি আত্মপ্রকাশ করায় ঢাকায় অনেক শিল্পীরা তাদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন বলেও উল্লেখ করেন।

আলো-আঁধারির মাঝে অন্তর্নিহিত বিষয়গুলো শিল্পী যেসব শিল্পকর্মে উপস্থাপন করেছেন, তার প্রদর্শনী চলবে ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত। আর সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা অবধি এ প্রদর্শনী খোলা থাকবে প্রতিদিন।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৮
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।