মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মিডিয়া কমপ্লেক্সে অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে’র সম্পাদক কবি জুয়েল মাজহারকে এ সম্মাননার প্রস্তাব দেন ঐহিকের সম্পাদক তমাল রায়। এতে সদয় সম্মতি জানান কবি জুয়েল মাজহার।
এসময় তমাল রায়ের সঙ্গে ‘ঐহিক বাংলাদেশ’র সম্পাদক কবি মেঘ অদিতি ও পশ্চিমবঙ্গের কবি সুব্রত সরকার উপস্থিত ছিলেন।
ঐহিক সম্পাদক তমাল রায় বলেন, আশির দশক থেকে আজ পর্যন্ত অগণিত কবিতা, অনুবাদ, ও কবিতা বিষয়ক গদ্য, অর্থাৎ সামগ্রিক সৃষ্টিকর্মের জন্য জুয়েল মাজহারকে এ সম্মাননা দেওয়া হলো। সাহিত্যে আঞ্চলিক ভাষার নিপুণ ব্যবহার, প্রান্তিক মানুষের জীবনযাপনের স্পর্শ ও অনুবাদ সাহিত্যের সাবলীলতায় বিশ্বসাহিত্যকে মাতৃভাষায় পড়ার বিরল সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। এ কবিকে সম্মান জানাতে পেরে ঐহিক পরিবার আনন্দিত ও সম্মানিত।
আনুষ্ঠানিকতা পর্ব শেষে জুয়েল মাজহারের কার্যালয়েই দীর্ঘ কবিতা আড্ডায় মেতে ওঠেন কবিরা। এ পর্বে জুয়েল মাজহার, সুব্রত সরকার, তমাল রায়, মেঘ অদিতির সঙ্গে যোগ দেন কালের কণ্ঠের সাহিত্য সম্পাদক কবি মাসুদ হাসান ও হিজল জোবায়ের। আড্ডা পর্বের বিভিন্ন মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেন বাংলানিউজের ফটো করেসপন্ডেন্ট রাজীন চৌধুরী।
জুয়েল মাজহার ছাড়াও ‘ঐহিক মৈত্রী সম্মাননা-২০২০’ পেয়েছেন বাংলাদশের আরেক কবি আশরাফ আহমেদ।
২০২০ সালের ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বইমেলার মিডিয়া সেন্টারে জুয়েল মাজহার ও আশরাফ আহমেদের হাতে সম্মাননা উপলক্ষে বিশেষ স্মারক ও উত্তরীয় তুলে দেওয়া হবে।
ওই অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের স্বনামধন্য সাহিত্যিক পবিত্র সরকার, রণজিৎ দাশ, মৃদুল দাশ গুপ্ত, গৌতম বসু, গৌতম চৌধুরী, রাহুল পুরকায়স্থের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এছাড়া ফেব্রুয়ারির ১১ ও ১২ তারিখ ঐহিক আয়োজিত দুই দিনব্যাপী সাহিত্য সম্মেলনে সম্মাননাপ্রাপ্ত কবিদের নিয়ে বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি ঐহিকের প্রকাশনা বিভাগ সম্মাননাপ্রাপ্তদের নির্বাচিত কবিতার বই প্রকাশ করবে।
বাংলাদেশের সাহিত্যকে পশ্চিমবঙ্গে আরও বেশি প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে ২০১৫ সাল থেকে কেবলমাত্র বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের ‘ঐহিক মৈত্রী সম্মাননা’ দেওয়া হয়ে থাকে। যেসব গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কোনো পুরস্কার পাননি তাদেরই এ সম্মাননার জন্য নির্বাচিত করে ঐহিক সম্পাদক পর্ষদ। এর আগে কবি মাসুদুজ্জামান, ফরিদ কবির, কাজল শাহনেওয়াজ প্রমুখ এ সম্মাননা পান।
মৈত্রী সম্মাননা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তমাল রায় বলেন, রাজনৈতিক কারণে দুই বাংলা বিভক্ত হলেও আমরা মনে করি সাহিত্যের কোনো কাঁটাতার নেই। দুই বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতিকে পরস্পরের আরও নিকটবর্তী করার লক্ষ্যেই আমরা এ সম্মাননার আয়োজন করেছি। এর মধ্য দিয়ে দুই বাংলার সাহিত্যে মৈত্রীভাব বৃদ্ধি পাক সেটাই আমাদের স্বপ্ন।
১৯৬২ সালে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন জুয়েল মাজহার। আশির দশক থেকে শুরু করে সুদীর্ঘ চার দশক ধরে একনিষ্ঠভাবে সাহিত্য সাধনা করে চলেছেন এ কবি। ভাষা ও প্রকরণে লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য তার কবিতা স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত। এ পর্যন্ত স্বল্পপ্রজ এ কবির প্রকাশিত কবিতার বই মাত্র তিনটি। এগুলো হলো- ‘দর্জিঘরে একরাত’, ‘মেগাস্থিনিসের হাসি’ ও ‘দিওয়ানা জিকির’। অনুবাদ কবিতার বই- ‘কবিতার ট্রান্সট্রোমার’ ও ‘দূরের হাওয়া’। এর আগে গত বছর ‘জীবনানন্দ পুরস্কার-২০১৯’ লাভ করেন জুয়েল মাজহার। চলতি বছরের অক্টোবরে কবি জীবনানন্দ দাশের শহর বরিশালে আড়ম্বরপূর্ণ এক সাহিত্য সমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্মাননা গ্রহণ করেন কবি।
ঐহিক পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ একটি সাহিত্যপত্রিকা। ১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু করা এ পত্রিকা ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
এইচজে