বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদী বাউল গানের আসরে এ দাবি জানানো হয়। শরিয়ত বয়াতিকে গ্রেফতার, হয়রানির প্রতিবাদ, তার নিঃশর্ত মুক্তি এবং এই হয়রানির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ আসরের আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
আসরের শুরুতে বাউল গান পরিবেশন করেন বাউল শাহ আলম সরকার। এরপর একে একে গান পরিবেশন করেন অবিনাশ বাউল, সাজেদা বেগম সাজু, সুরাইয়া আক্তার ঊর্মি, হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, দেবাশীষ প্রমুখ। তারা সবাই আবহমান বাংলার লোক সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ, ধর্মান্ধতাবিরোধী এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে গান পরিবেশন করেন।
আলোচনা করেন উদীচী এবং অন্যান্য সমমনা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তারা বলেন, যে আসর থেকে শরিয়ত বয়াতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেখানে তিনি ধর্ম অবমাননা করার মতো কোনো বক্তব্য রাখেননি। বরং, তিনি যারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে, যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে, যারা তরুণ প্রজন্মকে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দিকে উদ্বুদ্ধ করছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় কথা বলেছেন।
বক্তারা বলেন, প্রশাসন ও পুলিশও কোনো ধরনের যুক্তিতর্কে না গিয়ে শরিয়ত বয়াতিকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপক্ষের একজন লোকশিল্পীকে এমন হয়রানি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
তারা আরো বলেন, শত শত বছর ধরে এই ভূখণ্ডে বাউল ও সুফীবাদী শিল্পীরা সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষদের সম্প্রীতির গান শুনিয়েছেন। সমাজে সব বৈষম্য ও ভেদবুদ্ধির বিরুদ্ধে বলেছেন। তাদেরকে কোণঠাসা করে সমাজে সাম্প্রদায়িক হানাহানি সৃষ্টি করার জন্য চিহ্নিত সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অপচেষ্টায় সরকার সহযোগিতা করছে। সরকার বাউল শিল্পীদের রক্ষা ও পৃষ্ঠপোষকতা না করে বরং তাদের উপর নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। এর মাধ্যমে জঙ্গিবাদ বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হবে এবং অসাম্প্রদায়িক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে।
অবিলম্বে শরিয়ত বয়াতিকে মুক্তি দেওয়া না হলে আসর থেকে আগামী ১৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) সারাদেশের সব জেলায় উদীচী’র উদ্যোগে প্রতিবাদী বাউল গানের আসর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২০
এইচএমএস/জেডএস