কক্সবাজারের বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে এমন একটি ছবি তুলেছেন তরুণ আলোকচিত্রী নুজহাত পূর্ণতা। আর এ রকম অর্ধশতাধিক আলোকচিত্র নিয়ে তিনি সাজিয়েছেন নিজের প্রথম আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘ইন বিটুইন বর্ডারস অ্যান্ড আদার পলিটিক্যাল কন্ট্রাকস’।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ছয় নম্বর গ্যালারিতে শুরু হয়েছে এ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। যাতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এমপি তোফায়েল আহমেদ। অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন ও তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক।
আরও উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রী নুজহাত পূর্ণতার বাবা বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক এবং নিউজটোয়েন্টিফোর ও রেডিও ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী নঈম নিজাম এবং মা জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি প্রথমেই আলোকচিত্রী নুজহাত পূর্ণতাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি তার আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখে অভিভূত ও আনন্দিত। প্রদর্শনীর আলোকচিত্রগুলো আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে। নুজহাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরেছে। ওর যা ভালো লেগেছে, তার ছবি তুলেছে।
‘আমি ওর জন্য দোয়া করি। যেন ও আরও বড় হয়। ওর জন্য অনেক স্নেহ, আদর ও ভালোবাসা। ’
রুবানা হক বলেন, পূর্ণতাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে ও পূর্ণ হয়েছে। ছোট-বড় অনেকগুলো ছবি রয়েছে। বড় ছবিগুলো আমার খুবই ভালো লেগেছে। ছবিগুলো অনবদ্য।
‘ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরেছে। ওর যা মন চেয়েছে, সেটার ছবি তুলেছে। কিন্তু সে বাংলাদেশ ভুলেনি। সে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছে। সেখানকার মানুষের পোর্ট্রেট ছবি তুলেছে। যাতে ও নিজের সংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছে। ’
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ওকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। সে নানা কাজের ফাঁকে ফাঁকে এত বড় একটা কাজ করেছে। যাতে ওর শিল্পপ্রেমী দৃষ্টিভঙ্গি আরও ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতে সে আরও অনেক কাজ করবে। যাতে দেশের মুখ উজ্জ্বল হবে।
প্রদর্শনী উদ্বোধনের আগেই অতিথিরা আলোকচিত্রগুলো ঘুরে দেখেন। আলোকচিত্র নুজহাত পূর্ণতা দুই ভাগে করেছেন প্রদর্শনী। ‘নেমলেস ফেসেস অ্যাট বালুখালী ক্যাম্প’ শিরোনামের বিভাগটি নুজহাত সাজিয়েছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত মানুষের ছবি দিয়ে। ‘ফ্রম অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়ার্ল্ড’ বিভাগে যুক্তরাষ্ট্র, পর্তুগাল, ফ্রান্স, মেক্সিকো ও বাহামা দ্বীপপুঞ্জের মানুষের যাপিত জীবনকে ধারণ করেছেন নুজহাত পূর্ণতা।
‘নেমলেস ফেসেস অ্যাট বালুখালী ক্যাম্প’ বিভাগের প্রতিটি ছবিই হৃদয়কে সিক্ত করে তুলবে। বাঁশ ধরে নির্বাক শিশুর তাকিয়ে থাকা যেমন মন খারাপ করে দেবে, অন্যদিকে, বাচ্চা মেয়ের হাসি মাখা মুখ মন ভালো করে দিতে বাধ্য।
‘ফ্রম অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়ার্ল্ড’ বিভাগের ছবিগুলোও দারুণ। কুকুর কোলে নিয়ে তরুণীর হাসি, বন্ধুদের আড্ডা, বসন্তের পড়ন্ত বিকেলের ঝরাপাতা, গাছের তলায় বসে বই পড়া’ সবকিছুই দর্শককে নিয়ে যাবে ছবি তোলার স্থানে।
প্রদর্শনীর বিষয়ে আলোকচিত্রী নুজহাত পূর্ণতা বাংলানিউজকে বলেন, প্রদর্শনীতে ৫০টি ছবি রয়েছে। যা গত পাঁচ বছরে তোলা। যার প্রতিটির একটি গল্প রয়েছে।
‘মানুষকে মানুষের সঙ্গে আলাদা করেছে সীমান্ত। যা মানুষেরই তৈরি। কিন্তু সীমান্তের দুই পারের মানুষও কিন্তু ভালোবাসা দিতে ও নিতে চায়। এ বিষয়গুলোই ছবির মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছি। ’
রোহিঙ্গা শিবিরের ছবিগুলো নিয়ে তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে সানন্দে আমাদের দেশে বরণ করেছি। কিন্তু এখন তারা আমাদের জন্য বোঝা। ওরা কিন্তু দেখতে আমাদের মতোই। এ কারণে রোহিঙ্গা শিবিরের ছবিগুলো আমি পোর্ট্রেট মুডে তুলেছি।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুই দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর শেষ দিন। চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০২০
ডিএন/টিএ