ঢাকা: মাত্র দেড় বছর বয়সে মায়ের কোলে চড়ে কারাবন্দী বাবার সঙ্গে দেখা করতে যেত ছোট্ট রাসেল। শিক্ষকের মুখে সেই গল্প শুনেছিল এমসিপিএস (মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ)-এর তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী আরীষা।
রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবিবা রহমান প্রগতির ক্যানভাসে আছে আরেক গল্প। শেখ রাসেল ভালোবাসতো ফড়িংয়ের পেছনে ছুটতে। তাই বন-জঙ্গল ছিল তার ভীষণ পছন্দের। সেজন্য জন্মদিন উপলক্ষে বাবার কাঁধে চড়ে ঘুরতে বেরিয়েছে সে। আর পরিবারের সবাইকে নিয়ে দিনটি উদযাপন করেছে সুন্দর এক ফুল বাগানে।
শহীদ শেখ রাসেলকে নিয়ে এমন অসংখ্য ছোট ছোট ঘটনা রং তুলির আঁচড়ে রঙিন হয়ে ওঠে শিশুদের ক্যানভাসে। সেই ক্যানভাসে অংশ নেয় লাল-নীল-হলুদ-সবুজ অসংখ্য রং।
সোমবার (১৮ অক্টোবর) শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড আয়োজন করে ‘শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা’। এ উপলক্ষে সকাল থেকেই রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে শিশু-কিশোরদের রঙিন উচ্ছলতায়।
শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম শুভ জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ১৫০ জন শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের চিত্র আঁকার বিষয় ছিল ‘শেখ রাসেলকে নিয়ে যা আঁকতে ভালো লাগে’। তাই প্রত্যেকে শিশুই শহীদ শেখ রাসেলকে নিয়ে নিজের ভাবনা রূপ দেয় ক্যানভাসে। সেই ক্যানভাস তখন হয়ে ওঠে এক-একটি দুরন্ত রাসেল।
মানচিত্র হাতে ছুটে চলা শিশু রাসেল উঠে এসেছে কারও কারও ভাবনায়। কেউ আবার রাসেলকে এনেছে পায়রার ডানায়। শিশু রাসেল তার বাবাকে খুব কম সময় কাছে পেয়েছে। এরপরও শিশুদের ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে পরিবার ও বাবার সঙ্গে রাসেলের জন্মদিন পালনের আয়োজন।
প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ঈরিশা মারজান বলছিল, আমি শেখ রাসেলকে আঁকতে গিয়ে অনেকগুলো রং ব্যবহার করেছি। আর এটা করেছি ছবিটা আরও রঙিন করতে। শেখ রাসেলও তো আমার মতো রং ভালোবাসতো, তাই!
রাজধানীর আদর্শ শিশু বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মিনহাজ জামানের ভাষ্য ছিল এমন, শেখ রাসেল আমার চোখে হিরো। তাকে আঁকতে পেরে আমি খুশি।
প্রতিযোগিতা শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের চেয়ারম্যান ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর।
প্রথম পুরস্কার হিসেবে এক লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৫০ হাজার এবং তৃতীয় পুরস্কার ছিল ২৫ হাজার টাকা। সঙ্গে বিজয়ী তিনজনকেই ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
এছাড়া আরও ২৭ শিশু শুভেচ্ছা পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে স্কুলব্যাগ, খাতাসহ শিক্ষা উপকরণ। আর প্রত্যেক প্রতিযোগীকে উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার টাকাসহ শিক্ষাসামগ্রী। এ সময় শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা হয়।
প্রতিযোগিতায় প্রধান বিচারক ছিলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক এবং ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের পরিচালক ইমদাদুল হক মিলন।
এ সময় তিনি বলেন, বাচ্চারা আমাদের থেকে অনেক বেশি মেধাবী। তাদের মনের জগৎ অনেক বড়। ঘুরে ঘুরে দেখলাম, প্রতিযোগিতার শুরুতে আমি শেখ রাসেলকে নিয়ে যেসব কথা বলেছিলাম, ইন্সট্রাকশন দিচ্ছিলাম, তার থেকে অনেক অনেক বেশি কল্পনাশক্তি এদের। প্রত্যেকের চিন্তা আলাদা। নানা দৃষ্টিকোণ থেকে শিশুরা এঁকেছে শেখ রাসেলকে। তাদের আঁকার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে, তাদের মনোজগতে শেখ রাসেল কতটা জায়গাজুড়ে আছে।
আয়োজনে সহকারী বিচারক ছিলেন শহীদ আনোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষক শেখ ফারহানা টুম্পা এবং তরুণ শিল্পী ও কালের কণ্ঠের কার্টুনিস্ট প্রসূন হালদার।
প্রতিযোগিতায় রাজধানীর আদর্শ শিশু বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মিনহাজ জামান প্রথম, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মিথিলা ভৌমিক দ্বিতীয় এবং নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী শ্রেয়সী সাহা তৃতীয় স্থান অধিকার করে।
পুরো অনুষ্ঠানটি সফলভাবে আয়োজন সম্পন্ন করে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজাম, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ ইসমত জামিল আখন্দ লাবলু প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২১
এইচএমএস/জেএইচটি