ঢাকা: ইউএস বাংলা গ্রুপের আওতায় গড়ে ওঠা ইউএস বাংলা অ্যাসেট লিমিটেড রিয়েল স্টেট, ইউএস বাংলা লেদার লিমিটেড, গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউএস বাংলা হাসপাতাল ও ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেশ কয়েক মাস ধরে তাদের বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত।
প্রতিষ্ঠার প্রথম পাঁচ বছর এই গ্রুপটি তাদের কর্মীদের সময় মতো মাসিক বেতন-ভাতা দিয়ে আসলেও এখন তারা তাদের সব শ্রেণীর কর্মীদের নিয়ে নয়-ছয় শুরু করেছে।
মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে করুণ অবস্থায় দিন কাটছে এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের। তাদের অভিযোগ সাধারণ কর্মচারীদের মাসের পর মাস বেতন না দিয়ে শুধু মাত্র আশ্বাসে কাজ করিয়ে ইউএস বাংলা গ্রুপ একের পর এক তাদের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।
এ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ ২০১৩ সালের আগস্ট মাসের ইনসেনটিভ আটকে দেওয়া হয় কেবল মাত্র ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স গড়ে তোলার নাম করে।
এরপর অফিস নোটিস দিয়ে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসের বেতন ডিসেম্বর মাসের ২৩ তারিখে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ আসবে এই খুশিতে সবাই আত্মহারা হয়ে প্রতিষ্ঠানের সব কর্মচারী-কর্মকর্তারাই সহযোগিতা করতে ঝাপিয়ে পড়েন। পারলে তারা ওই সময় তাৎক্ষণিক জমে যাওয়া সব বকেয়া বেতনই দিয়ে দেন কোম্পানিকে। কিন্তু এই খুশি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তদের।
এর পরের মাস থেকে নিয়মিত হয়ে যায় সংকট। কখনো ৮, ১০, ১২ কিংবা ১৪ তারিখ আগে বেতন পাওয়া যেত না। ফলে আগের মতো সেই ৫ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধের নিয়ম আর বহাল থাকল না। যেখানে ঢাকা শহরে বাড়ি ভাড়া ৭ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হয় সেখানে প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত জীবনে সংকটে পতিত হতে থাকেন।
আর প্রতি মাসেই ইনসেনটিভের আশ্বাস যা আজও দেওয়া হয়নি তাদের।
বর্তমানে আবার প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নতুন সুর উড়োজাহাজ উড়ার পর দেওয়া পরিশোধ হবে সব বকেয়া।
এদিকে বর্তমানে পবিত্র রমজান মাস চলছে। এ সময় সাধারণ সময়ের চেয়ে বেড়ে যায় খরচের চাপ। কিন্তু খরচের চাপ তো দূরের কথা এখন চোখের নিচে অন্ধকারের চাপ ছাড়া আর কিছুই দেখছেন না এখানকার কর্মচারী-কর্মকর্তারা।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ গভীর কষ্ট আর চাপা ক্ষোভ নিয়ে জানান, এখনো বেতন পরিশোধ করা হয়নি কোনো মাসেরই। বকেয়া যা আছে তা তো দূরের কথা সামনে ঈদের আগে যদি কিছু অর্থ হলেও না পাওয়া যায় তা হলে কি করে যে দিন চলবে এটা কেবল সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
এই গ্রুপের অন্য সব অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইউএস বাংলা অ্যাসেট লিমিটেডের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। তাদের বকেয়া প্রায় ১২ মাসের। তাদেরও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে এ মাসের শেষ দিকে দেওয়া হবে বেতন।
বেতন দিতে না পারলেও উল্টো দশ রোজার পর প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি করে করা হয়েছে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
সব কিছু মিলেয়ে এরই মধ্যে এ প্রতিষ্ঠান থেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন অনেক কর্মচারী-কর্মকর্তা। যারা টিকে আছেন তারা কেবলই কোনো উপায় না পেয়ে।
অভিযোগ আছে সম্প্রতি ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের এক বিদেশী পাইলট সময় মতো বেতন-ভাতা না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্স বিভাগের কর্মকর্তার ওপর চড়াও চালিয়েছেন।
চাপা ক্ষোভ ইউএস বাংলা গ্রুপের প্রতিটি কর্মচারী-কর্মকর্তার মাঝে। তাদের এখন একটাই প্রশ্ন কি অপরাধ ছিল তাদের যে এমন কষ্টের দিন দেখতে হচ্ছে?
আর তাই তো সরকারের কাছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী-কর্মকর্তাদের আকুল আবেদন তাদের প্রতি এ অবিচার যেন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখে এবং দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৪