ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে: সকাল ৭টায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে ফ্লাইট সিডিউলের স্ক্রিনে দেখি, রিজেন্টের ব্যাংককগামী আরএক্স ০৭৮৬ ফ্লাইটটি ১১টায় ছাড়বে। অবাক হয়ে ব্যাগ থেকে টিকেট বের করলাম।
এর আগে মঙ্গলবার রিজেন্ট এয়ারওয়েজের গুলশান অফিস থেকে ঢাকা-ব্যাংকক রিটার্ন টিকেটটি সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। হাতে অফসেট পেপারে প্রিন্ট করা একটি কাগজ ধরিয়ে দিলেন এর কর্মীরা। সঙ্গে একটি লাল খাম, যার ওপরে লেখা হ্যাপি জার্নি। দেখে মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। তখন মনে হচ্ছিলো, সত্যি সত্যি দামি কিছু একটা হাতে নিয়েছি।
বৃহস্পতিবার সকালে ফ্লাইট। আগের দিনই সবাইকে বলছিলাম, রিজেন্টের সকাল ১০টার ফ্লাইটে ব্যাংকক যাচ্ছি। সকাল ৬টায় উঠে তাড়াহুড়ো করেই রেডি হয়ে নিলাম। উঠে দেখি, নাস্তাও রেডি। একটা অটোরিকশা নিয়ে ৭টার মধ্যে পৌঁছালাম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তবে এসে দেখি, ফ্লাইট ছাড়তে আরও ৪ ঘণ্টা বাকি। রিজেন্টে করে ব্যাংকক ভ্রমণের উত্তেজনায় অনেক আগে এসেই অপেক্ষা করছিলাম এয়ারপোর্টে।
ঘড়ির কাটায় ১১টা বাজতেই ফোনে সবার কাছে থেকে বিদায় নিলাম। ফ্লাইট ডিলের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েই অপেক্ষা করছিলাম। তবে এক্ষেত্রে নিজেদের কমিটমেন্ট রেখেছে রিজেন্ট।
ফ্লাইটে ঢুকতেই স্মার্ট ৫ জন ক্রু আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। ক্যাপ্টেন রবার্টের পরিচালনায় সময়মতোই প্রথমে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে প্লেন ছাড়লো। প্লেন ওড়ার আগেই ককপিট থেকে দোয়া পড়ে আল্লাহ্ তাআলাকে স্মরণ করা হলো।
পাশাপাশি ক্রুরাও নিরাপত্তার নিয়ম-কানুন বুঝিয়ে দিলেন। ফ্লাইট ছাড়তেই আতিথেয়তায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তারা। চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ৩০ মিনিটের এই ফ্লাইটটি আকাশে উড়ার ৫ মিনিটের মধ্যেই স্ন্যাক্স নিয়ে হাজির। যদিও নাস্তা করে এসেছি, তারপরও রিজেন্টের কেক-বিস্কিট আর জুস দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না।
সময়মত চট্টগ্রামে নেমে যাত্রী এবং তেল নিয়ে এবার ব্যাংককের উদ্দেশ্যে উড়াল দিলো আরএক্স ০৭৮৬ ফ্লাইটটি।
মুহূর্তেই সংবাদপত্র আর বিনোদনের রসালো সব ম্যাগাজিনগুলো যাত্রীদের হাতে তুলে দিয়েই দুপুরের খাবার সার্ভ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ক্রুরা।
এবার ভূখণ্ড থেকে ৩৯ হাজার ফুট ওপরে লাঞ্চ করার পালা। ট্রে ভর্তি খাবারে এর এপিটাইজারের মেন্যুতে ছিল সুইট বান আর মাখন। মেইন কোর্সে ফ্রাইড রাইস, চিকেন টমেটো কারি, ভেজিটেবল কারি আর ভেজিটেবল সালাদ। এগুলো দিয়ে পেটপূজো করে ডেজার্টের ফিরনিটাও খেলাম। ফ্লাইটের খাবার নিয়ে যদি প্রতিক্রিয়া জানানোর কোনো ব্যবস্থা থাকতো তাহলে খাবারের কোয়ালিটি, কোয়ান্টিটি, প্রেজেন্টেশন আর স্যাটিসফেকশন সবগুলোতেই এক্সিলেন্ট টুকে দিতাম।
ফ্লাইটের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা থেকে অ্যরাসল স্প্রে করা যাত্রীদের প্রতিটি ছোটখাটো আকাঙ্খা পূরণ করছিলেন ক্রুরা। ঠিক তাদের বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইনটির মতো ‘এভরি লিটল থিঙ্ক কাউন্টস। ’ ট্যাগলাইনের মতোই যাত্রীর প্রতিটি ছোট ছোট বিষয়ও তারা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছিলেন।
আমার সিট নম্বর ১২ এফ। পাশের সিট ১২ ডি এবং ১২ ই-তে দুই বন্ধু রাফাত আর আইমানের সঙ্গে কথা হলো। প্লেনে তাদের এটাই প্রথম ভ্রমণ। রাফাত বললেন, শুনেছি বিশ্বের বড় বড় প্লেনগুলো ল্যান্ডিংয়ের সময় বাম্প করে। রিজেন্টে চড়ে তা মনেই হলো না। আল্লাহ্র বিশেষ রহমত আর রিজেন্টের পাইলটের কৃতিত্ব এটি।
যথারীতি বিকেল ৪টায় ব্যাংককে ফ্লাইট ল্যান্ড করলো। বের হবার সময় হাসিমুখে যাত্রীদের বিদায় দিচ্ছিলেন ক্রুরা।
এয়ারক্রাফটের ইন্টেরিয়র, ইকোনমি ক্লাসের সিটের মান ও আনুষঙ্গিক সব দেখে মনে হচ্ছিলো যে, এটি উন্নত কোনো দেশের কোনো কোম্পানির প্লেন। সত্যি মুগ্ধ হলাম রিজেন্টের সার্ভিস এবং কমিটমেন্ট দেখে। আশা করছি, আগামী দিনগুলোতেও তারা এটা ধরে রাখতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৪