খানিক আগে গেইট দিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশের মুখেই একজন কর্মীর অশোভন আচরণ ভালো লাগেনি তার। নালিশ করবেন বলে ছুটে গেলেন বিমানবন্দরে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে।
কিন্তু একি! অাদালত ঘিরে অন্ধকার। কেউ নেই।
‘কারে খুঁজতেছেন! আগে এই খানে আলো জ্বলতো। অহন রাইতে উনারা থাকেন না। ’- এক নিরাপত্তাকর্মীর আচমকা এ কথা শুনে মনের ক্ষোভ মনে রেখেই তিনি রওনা হলেন ইমিগ্রেশন কাউন্টারের দিকে।
গত নভেম্বরের পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের এটাই নিয়মিত চিত্র।
পদোন্নতিজনিত কারণে আদালতের এক ম্যাজিস্ট্রেটের বদলি হওয়ার পর অস্বাভাবিকভাবে বদলে গেছে এই আদালতের চিত্র।
১৯৯৬ সালের মার্চে চালু হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা আইন ২০০৯ প্রণীত হওয়ার পর পর এর কার্যকারিতা দৃশ্যমান হয় বিমানবন্দরে।
নিত্য-নতুন অপরাধ আর অপরাধীদের ধরন বদলে যায়। একইসঙ্গে বেড়ে যায় ম্যাজিস্ট্রেটদের তৎপরতা। ২০১৪ সালের ৬ জুলাই শাহজালালে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে আসেন ২১ ব্যাচের শরীফ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন। একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর দায়িত্বে আসেন ২২ ব্যাচের অপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ।
অপরাধ, প্রতারণা আর যাত্রী হয়রানি বন্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে (https://www.facebook.com/magistrates.all.airports.bangladesh) একটি অফিসিয়াল পেজ খোলার পর দ্রুত শত শত অভিযোগ আসতে থাকে আদালতের কাছে।
দ্রুত বিচারের মাধ্যমে প্রতিকার নিশ্চিত করায় অল্প দিনের মাথায় সেবাগ্রহীতাদের আস্থার ঠিকানা হয়ে ওঠে এই পেজ। সেজন্য ফলোয়ারের সংখ্যা দাঁড়ায় তিন লাখের বেশি।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, দু‘জন ম্যাজিস্ট্রেট মিলেই রাতদিন পালাক্রমে পরিশ্রম করে মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন।
‘সরকারি দায়িত্ব নয়, বরং মানুষের সেবা’- এমন ব্রত নিয়ে কাজ করেই পাল্টে দিয়েছেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চিরচেনা চেহারা।
তবে পদোন্নতি পেয়ে গত বছরের ২৭ নভেম্বর শরীফ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর আদালতের গতিতে আসে ছন্দপতন।
যদিও শরীফ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই রয়েছেন। তবে ভিন্ন দায়িত্বে।
হয়রানি কমিয়ে যাত্রী সেবা বাড়াতে সেবাধর্মী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সিভিল এভিয়েশনের সমন্বয়ে ৫ সদস্যের যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, তার সদস্য সচিব হিসেবেই কাজ করছেন উপ-সচিব শরীফ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন।
বিমানবন্দরের একটি সূত্র বাংলানিউজকে বলছে, ম্যাজিস্ট্রেটের অভাবে এমনিতেই ঝিমুনি এসেছে বিমানবন্দরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমে।
বর্তমানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি এই আদালতের কর্মী রয়েছেন সর্ব-সাকুল্যে ৫ জন। এদের একজন পেশকার। দু’জন সহকারী ও দু’জন পিয়ন।
সম্প্রতি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ২৪ ব্যাচের আহমদ জামিলকে বদলি করা হলেও ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতা পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে তার দায়িত্ব গ্রহণ।
যে কারণে নভেম্বর থেকে একাই আদালত সামলাচ্ছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যাত্রী হয়রানি এড়িয়ে উন্নত মানের সেবা নিশ্চিত করতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন ৪ জন।
১৯৮৪ সালের সিভিল এভিয়েশন আইন যুগোপযোগী করতে যেসব পরিবর্তন আনার কথা, তাও চূড়ান্ত হয়নি এখনো।
যে কারণে যাত্রী বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি চাহিদা মোকাবেলা দূরের কথা। সীমিত জনবল দিয়ে টেকসই উন্নত সেবা নিশ্চিত করাই কঠিন হয়ে পড়েছে এই আদালতের।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৭
এইচএ/
** এবার ইন্দোনেশিয়ার পথে বাংলানিউজের জাহিদ