ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

বিমানের ১৩৬ কোটি টাকা কার পকেটে?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৭
বিমানের ১৩৬ কোটি টাকা কার পকেটে? বাংলাদেশ বিমান

ঢাকা: বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ ড্রাই লিজে আনতে চুক্তি হলো ৫ বছরের মধ্যে ৬ মিলিয়ন ডলার (৪৮ কোটি) শোধ করা হবে। তিন বছর গড়াতেই শোধ দেখানো হয়ে গেলো ২৩ মিলিয়ন ডলার (১৮৪ কোটি টাকা)! এরমধ্যে আবার সেই উড়োজাহাজ হয়ে গেল অকেজো! মাঝেমধ্যে উপরি খরচ করে আনা হলো ভাড়া ইঞ্জিন। তাতেও আর ওড়ানো গেলো না সেই বোয়িং। কিন্তু ঠিকই ‘চুক্তি’র কারণে দেওয়া হতে থাকলো ‘ভাড়ার’ অর্থ, এমনকি আগামী আরও প্রায় দু’বছরও এভাবে দিয়ে যেতে হবে অর্থ!

এখন প্রশ্ন ঘুরছে, ৬ মিলিয়নের জায়গায় যে আরও বাড়তি ১৭ মিলিয়ন ডলার শোধ হলো, সেটা কার পকেটে গেল? আগামী প্রায় দু’বছর যে অর্থশোধ করা হবে, সেটা কার পকেটে যাবে?
 
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ইজিপ্ট এয়ার থেকে পাঁচ বছরের জন্য ড্রাই লিজে একটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ আনার (কেবল প্লেন ভাড়া) এমন ‘অদ্ভুত চুক্তি’ আর ‘অর্থশোধ’ নিয়েই এখন তোলপাড় চলছে সংসদীয় কমিটিতে।
 
চুক্তিটা কী, বিশেষত ৬ মিলিয়নের কথা হলে মাসিক কতো হারে প্লেন বাবদ ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল- এ প্রশ্নের পাশাপাশি কমিটি মূল ফাঁকফোকর খুজেঁ বের করতে গলদঘর্ম।

তবে এই ফাঁকফোকর যে ‘কমিশন’ চক্রের সৃষ্টি সেটা সহজেই অনুমান করছেন কমিটির সভাপতি থেকে সদস্য সবাই।
 
জানা যায়, প্লেন সংকটের কারণে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয় দেখিয়ে মিশরের এয়ারলাইন্স থেকে ২০১৪ সালের মার্চে আনা ওই বোয়িং উড়োজাহাজটি গত ডিসেম্বর থেকে অর্থাৎ ৫ মাস যাবৎ বিকল হয়ে পড়ে আছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেরট্যাক্সিওয়েতে। বিগত তিন বছরে অস্বাভাবিক হারে অর্থশোধের পাশাপাশি এখন প্রায় পরিত্যক্ত পড়ে থাকার পরও এরজন্য গুণতে হচ্ছে বিপুল অর্থ।  
 
এই ভয়াবহ  অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩ নং সাব কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়, লিজে আনার এক বছরের মধ্যেই ফ্লাইট পরিচালনায় দেখা দেয় নানান যান্ত্রিক বিভ্রাট। প্রথমে বিকল হয় একটি ইঞ্জিন। পরে উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় তা-ও নষ্ট হয়। পুনরায় একই প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়ায় আনা হয় আরও একটি ইঞ্জিন।
 
সবশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে নষ্ট হয় তৃতীয় বার আনা ইঞ্জিনটিও। তারপর থেকে একেবারে বসেই আছে উড়োজাহাজটি। প্লেন বা ইঞ্জিন বিকল থাকলে কী হবে, দৈনিক ইঞ্জিন বাবদ গুনতে হচ্ছে ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে, আর প্লেনের জন্য মাসে দিতে হচ্ছে ৫ কোটি টাকা করে। যদিও চুক্তি অনুযায়ী, প্লেনের পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া ৬ মিলিয়ন (৪৮ কোটি) হলে মাসিক ৫ কোটি টাকা শোধ প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ এক বছরেই শোধ হয়ে যায় ৬০ কোটি টাকা, পুরো পাঁচ বছরে এ অংক দাঁড়ায় ৩৬০ কোটি ডলার।
 
সাব কমিটির প্রতিবেদনে বিস্ময় প্রকাশ করে বলা হয়েছে, চুক্তিটি এমনভাবে করা হয়েছে এখন বিমানটি ফেরতও দেওয়া যাচ্ছে না, আবার আজগুবি কায়দায় অর্থশোধের লাগামও টেনে ধরা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, ‘কমিশন’ খাওয়ার আশায় একটি চক্র এই চুক্তি করেছিল। যে চুক্তি সম্পর্কে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অবগত নন। এমনকি মন্ত্রণালয়ও স্পষ্ট কিছু জানে না।
 
সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চুক্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বসিয়ে রাখতে হবে উড়োজাহাজটিকে। লিজের শর্ত অনুযায়ী এ সময়ে বিমানকে ভাড়া গুনতে হবে ঠিকই।
 
সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা গেছে, এই প্লেন ঠিক করতে আরও সময় লাগবে। এতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে। এজন্য আমরা ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলেছি। কারা এর সঙ্গে জড়িত সব প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। ‘
 
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে ৩টি বিভাগ এই প্রক্রিয়ায় জড়িত। বিভাগ তিনটি হলো- ক্রয় সংক্রান্ত কারিগরি টিম, তৎকালীন গভর্নিং বডি এবং খোদ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এরা আসলে বিমানটি ভাড়া করার সময়ই পুরাতন মডেলের বিমান ভাড়া করে। যে কারণে এর যন্ত্রপাতি পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য সময় বেশি লাগছে। তবে যারাই জড়িত থাকুক পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসবে। ’
 
সাব কমিটির আহ্বায়ক কামরুল আশরাফ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘চুক্তিটি করাই হয়েছিল কমিশন খাওয়ার জন্য। এটা এখন প্রমাণিত। কেননা ৬ মিলিয়ন ডলার চুক্তি করে ২৩ মিলিয়ন ডলার শোধ করার পরও আরও অর্থ গুনতে হবে। এটা কিভাবে কিসের ভিত্তিতে চুক্তি হয়েছে তা কারও বোধগম্য নয়। এর সঙ্গে মন্ত্রণালয়সহ পুরো একটি চক্র জড়িত। ‘
 
সোমবার (২২ মে) সংসদ ভবনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির কক্ষে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই তদন্ত প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
এসএম/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।