এখন বুঝলাম, সেদিনতো আমি একটা টার্মিনাল দেখেছিলাম মাত্র। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টে রয়েছে মোট চারটি টার্মিনাল।
কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে নামলে বাংলাদেশিদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করে, কখন কোন দিক দিয়ে কে ডাক দেয়। শ্রমিকদের ভয়টা আরও বেশি। এখানে পরিস্থিতি উল্টো। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কার্ডধারী শ্রমিকদের ইমিগ্রেশনের লাইন আলাদা। তারা সিঙ্গাপুরবাসীদের সঙ্গেই শুধু কার্ড ঘষে ইমিগ্রেশন পেরিয়ে গেলেন। কোনো বাধা নেই।
ইউএস বাংলা বিএস ৩০৭ ফ্লাইট এখানে এসে নামে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৪টায়। টিউব দিয়ে বেরোতেই এয়ারপোর্টের দুজন কর্মী সব যাত্রীদের উদ্দেশ্যে শুভ কামনা জানালেন।
হাঁটছি তো হাঁটছিই, টার্মিনাল ৩ এর ইমিগ্রেশনে যেতে কম করে হলেও এক কিলোমিটার হাঁটতে হলো। যদিও ওয়াকিং স্কেলেটর হাঁটার সময় কমিয়ে আনে, পায়েও একটু বিশ্রাম হয়। চোখে পড়লো কিছু ম্যাসাজ চেয়ার। সেখানে বসে পা দুটোকে আরেকটু সহজ করে নেওয়া যায়।
হাতে অনেক সময় থাকায় এয়ারপোর্টটা ঘুরে দেখার ইচ্ছে জাগে। চোখের ঘুমকে পাত্তা না দিয়ে স্কাই ট্রেনে চেপে দ্বিতীয় টার্মিনালে ঘুরতে গেলাম। একই ধরনের বিশাল টার্মিনাল। বুঝতে পারলাম এ এয়ারপোর্ট ঘুরে দেখা একদিনে সম্ভব নয়। প্রতিটি টার্মিনালেই রয়েছে ৪টি ফ্লোর। যার দুটি আবার পাতালে।
এখানে ওয়াইফাই ফ্রি করে দেওয়া নেই। তিন ঘণ্টা ফ্রি পেতে হলে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সের জন্য ইনফরমেশন সেন্টারে যেয়ে পাসপোর্ট দিলেই পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়। এছাড়াও এয়ারপোর্ট সম্পর্কে অন্য যে কোন প্রশ্নের উত্তর মিলবে এখানে। তবে খোশগল্প করার মতো সময় দেবে না কাউন্টারের সুন্দরী!
এটা আমি আগে কখনই ভাবিনি যে এয়ারপোর্টের ভেতরে শালিক পাখি উড়তে দেখবো। তবে চাঙ্গি এয়ারপোর্টে কাচ ঘেরা স্থাপনার ভেতরে দুটি শালিক দেখলাম। অনেক যাত্রীই সেগুলোর গতিবিধি লক্ষ্য করে সময় কাটাচ্ছেন। আমিও এগিয়ে গেলাম। পাখিতো উড়বেই, এয়ারপোর্টের ভিতরে যেন সবুজ বনায়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পাম ট্রি থেকে শুরু করে নানা ধরনের গুল্মে ভর্তি এয়ারপোর্ট। লতাগুলো যেন ছাদ থেকে নুইয়ে পড়েছে। এতো পরিষ্কার পাতা দেখে প্রথম প্লাস্টিকের মনে হলো। কিন্তু, হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখে ভুল ভাঙলো। না, সত্যিকারের গাছ। গাছের গোড়ায় পানির পাইপ।
একটু ইংরেজি জানা থাকলেই এই এয়ারপোর্ট যে কারো জন্য ক্লাস ওয়ানের আমার বইয়ের মতোই সহজ। এখানে আপনার ট্রান্সপোর্টেশন থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপের করণীয় উল্লেখ রয়েছে প্রতীক দিয়ে অথবা লিখে।
চাঙ্গি সিঙ্গাপুরের প্রথম এয়ারপোর্ট আর এটা এখন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বিমান যাতায়াতের অন্যতম হাব। স্কাইট্রাক্সের জরিপে সুযোগ সুবিধা এবং যাত্রী সেবার বিচারে ২০১৩ সাল থেকে এটি বিশ্বের সেরা এয়ারপোর্ট। এছাড়াও যাত্রী এবং মালামাল পরিবহনের বিবেচনায় বিশ্বের ব্যস্ততম এয়ারপোর্টগুলোর একটি। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ছাড়াও সিল্ক এয়ার, স্কুট, টাইগার এয়ার, জেট স্টার এশিয়া এবং বক এভিয়েশনের হোম গ্রাউন্ড এই এয়ারপোর্ট।
চাঙ্গি এয়ারপোর্ট থেকে বিশ্বের একশোটিরও বেশি এয়ারলাইন্স যাতায়াত করে ৯০টি দেশের ৩৬০টি শহরে। এখানে প্রতি ৯০ সেকেন্ডে একটি বিমান ওড়ে অথবা এসে নামে। এজন্যেই রয়েছে ৪ হাজার মিটারের দীর্ঘ রানওয়ে। আর বছরে যাত্রী আসা যাওয়ার সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটির বেশি। যা পৃথিবীর ৬ষ্ঠ ব্যস্ততম এযারপোর্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে চাঙ্গিকে।
** ফেলোশিপ নিয়ে সিঙ্গাপুর গেলেন বাংলানিউজের নয়ন
বাংলাদেশ সময়: ০৬০০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
এমএন/এমজেএফ